ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ

বিশ্বব্যাপী ওলটপালটে কমেছে প্রবাসীদের উপার্জন

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বিশ্বব্যাপী ওলটপালটে কমেছে প্রবাসীদের উপার্জন

রহিম শেখ ॥ বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমে যাওয়ায় প্রবাসীদের উপার্জন কম হচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের নানা সঙ্কটে ইউরো ও পাউন্ডের দামও কমে গেছে। এই অবস্থায় দেশে ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলা বাজারে মার্কিন ডলারের দামের পার্থক্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ টাকার বেশি। ফলে এসব দেশের শ্রমিকদের আয়ের বিপরীতে বাংলাদেশী টাকা কম পাওয়া যাচ্ছে। তাই বেশি লাভের আশায় অনেকেই অবৈধ পথে দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর পথ বেছে নিচ্ছেন। এছাড়া মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামা, রেমিটেন্স প্রেরণকারী বিদেশী এক্সচেঞ্জ হাউসের চার্জ বৃদ্ধি, চার্জ আরোপ, বাংলাদেশে ব্যাংক হিসাব পরিচালনায় চার্জের পরিমাণ বাড়ানোয় প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ বেড়ে গেছে। এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ। মূলত বেশি লাভের আশায় অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর কারণেই রেমিটেন্স কমেছে। ফলে হুন্ডির ফাঁদে পড়ছে রেমিটেন্স। কারণ চিহ্নিত করতে প্রবাসী আয় বেশি আসে এমন ৩০ শীর্ষ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে আগামী রবিবার জরুরী সভায় ডেকেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই ইস্যুতে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে সে সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে প্রবাসী আয় কমার কারণ চিহ্নিত করতে চলতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধিদল চার দেশ সফরে যাচ্ছে। দেশগুলো হলো মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিনিধিদল দুটি দেশে ফিরে প্রবাসী আয় কমার কারণ সম্পর্কে গবেষণামূলক প্রতিবেদন জমা দেবে। জানা গেছে, ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স কমলেও বাড়ছে জনশক্তি রফতানি। ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের নবেম্বর পর্যন্ত ছয় লাখ ৮৮ হাজার জনশক্তি রফতানি হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার জনশক্তি রফতানি হয়। ২০১৪ সালে রফতানি হয় চার লাখ ২৫ হাজার এবং ২০১৩ সালে হয় চার লাখ ৯ হাজার। সেই হিসাবে ২০১৩ সালের পর আবার জনশক্তি রফতানি বাড়লেও রেমিটেন্স তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বরং গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিটেন্স কমেছে ২.৫৫ শতাংশ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সম্প্রতি সংসদকে জানান, গত অর্থবছরে ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৩৭ জন দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষ ২ লাখ ৮৮ হাজার ৩৩ জন, অদক্ষ ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫০ জন, আধা দক্ষ ৮৫ হাজার ৯০০ জন, পেশাজীবী ৩ হাজার ৪৭ জন এবং অন্যান্য ১১ হাজার ৮০৪ জন। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৬২টি দেশে কর্মী যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের কোন দেশেই কর্মী যাওয়া বন্ধ হয়নি। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী জানান, সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে সৌদি আরবে প্রায় ৮ লাখ, মালয়েশিয়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ও ইরাকে ১০ হাজার অবৈধ কর্মীর বৈধতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে রেমিটেন্স কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিদেশ থেকে হুন্ডি করে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোকে দায়ী করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেকে বেশি লাভের আশায় হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে টাকা পাঠান। যে কারণে রেমিটেন্স কমেছে। বর্তমানে হুন্ডির ব্যবসা জমজমাট রূপ নিয়েছে। তবে সরকার হুন্ডি ব্যবসা রোধের চেষ্টা করছে। আশা করি সফল হব। সেক্ষেত্রে রেমিটেন্স বাড়বে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, রেমিটেন্স কমার পিছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দীর্ঘ অস্থিরতা ও তেলের দর পড়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। এতে তারা দেশে কম পরিমাণের অর্থ পাঠাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে হয়ত তারা কিছুটা সময়ও নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, ব্যাংকের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেশি থাকায় ভিন্ন উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ঢুকছে। তৃতীয়ত, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারে হুন্ডিওয়ালারা অবৈধ উপায়ে টাকা দ্রুত প্রবাসীর আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। যেহেতু এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ কাগজবিহীন ও যেকোন সময় করা যায়, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সতর্ক মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) প্রবাসীরা মোট ৭২৭ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এ সময়ে এসেছিল ৮৬৩ কোটি ডলার। সেই হিসাবে প্রবাসী আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমেছে। প্রবাসীদের পাঠানো আয় সব সময় ১০০ কোটি ডলারের বেশি থাকলেও গত নবেম্বর ও ডিসেম্বরে তা নেমে আসে যথাক্রমে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ৯৫ কোটি ৮০ লাখ ডলারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৬১ কোটি ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছিল। যদিও ২০১৫ সালে এসেছিল ১ হাজার ৫৩২ কোটি ডলার। সে হিসাবে গত বছরে প্রবাসী আয় আগের বছরের চেয়ে ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ কমেছিল। এর আগে ২০১৩ সালেও প্রবাসীরা ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক প্রবণতা শুরু হয় ২০১৩ সালে। আগের বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি ঘটলেও ১৩ সালে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ঘটে। ওই বছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার পাঠান, যা ২০১২ সালের তুলনায় ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ কম ছিল। ২০১৪ সালে প্রবাসী আয়ে ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটে। ওই বছর মোট ১ হাজার ৪৯২ কোটি ডলার আয় দেশে আসে। এরপর ২০১৫ সালেও প্রবাসী আয়ে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশগুলোর প্রায়গুলো থেকেই কমেছে রেমিটেন্স। চলতি অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) মাস পর্যন্ত সময়ে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ রেমিটেন্স কমেছে। বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রথম সারির ১০টি দেশের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যায় যে তার মধ্যে ৮টি দেশ থেকেই রেমিটেন্স কমেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশের তালিকায় প্রথমে থাকা সৌদি আরব থেকে গত ছয় মাসে ১১৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৩ শতাংশ কম রেমিটেন্স এসেছে। এ বছর এ দেশটি থেকে এসেছে ১০২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। আর সবচেয়ে কমেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৮০ কোটি ৯৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা প্রায় ৩৫ শতাংশ কম। বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তৃতীয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের কারণেই ওই দেশ থেকে রেমিটেন্স কমেছে। একইভাবে মালয়েশিয়া থেকে কমেছে ১০ শতাংশ। গত ছয় মাসে এদেশ থেকে ৫৯ কোটি এক লাখ ডলার এসেছে। আর গত অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ২৩ শতাংশ, সিঙ্গাপুর থেকে ১৪ শতাংশ, ওমান থেকে ছয় শতাংশ এবং কুয়েত থেকে দুই শতাংশ রেমিটেন্স কমেছে। জানা গেছে, রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ সংক্রান্ত প্রতি ত্রৈমাসিকে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে বিশ্বব্যাংক। গত বছরের শেষ প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে রেমিটেন্স পাঠানোর গড় খরচ ছিল ৩.৬০ শতাংশ। ২০১৫ সালে এ খরচ ছিল ৩.২৮ শতাংশ। এতে দেখা যায়, আগের ২০১৫ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় গত বছরের শেষ প্রান্তিকে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ বেড়েছে বাংলাদেশিদের। তবে শ্রমবাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল ও শ্রীলংকায় রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমেছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ফি ও মুদ্রার বিনিময় হারের ব্যবধানের কারণে খরচ বেড়েছে। বাংলাদেশের রেমিটেন্সের সবচেয়ে বড় উৎস সৌদি আরব। এই দেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি মাসুল আদায় করে। ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮৭০ সৌদি রিয়াল পাঠাতে ২৫ রিয়াল ফি ও ১.৫৪ শতাংশ বিনিময় হারের মার্জিন কেটে রাখে। এতে গড়ে খরচ হয় ৪.৮৭ শতাংশ। এ ছাড়া সৌদি আমেরিকান ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে গড়ে ৪.৩০ শতাংশ, আল জামিল এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে ৩.৬৯ শতাংশ, মানিগ্রাম থেকে ৩.৪০ শতাংশ, এক্সপ্রেস মানি থেকে ৩.২৫ শতাংশ, এনজাজ ব্যাংক থেকে ৩.২০ শতাংশ, টেলিমানি ও আল রাজী ব্যাংক থেকে পাঠাতে ৩.০৬ শতাংশ খরচ হয়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে খরচ প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরে শেষ প্রান্তিকে গড় খরচ দাঁড়িয়েছে ২.৭২ শতাংশ। আগের বছরে যা ছিল ২.২৯ শতাংশ। এই দেশ থেকে ওয়ার্ল্ড রেমিটের মাধ্যমে ৪.৩০ শতাংশ খরচ হয়। ইউএই এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে পাঠাতে খরচ হয় ৩.৯৪ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিটেন্সের উৎস যুক্তরাষ্ট্র। আগের বছরে রেমিটেন্স পাঠাতে খরচ হতো ৪.১৯ শতাংশ, গত বছরে এই খরচ বেড়ে হয়েছে ৪.৮৪ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। দেশটি থেকে ওয়ার্ল্ড রেমিটের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে সবচেয়ে বেশি ৭.৬১ শতাংশ খরচ হয়। এ ছাড়া মানিগ্রামে ৭.০৮ শতাংশ, রিয়ার মাধ্যমে ৬.২১ শতাংশ এবং ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে ৪.৪৪ শতাংশ খরচ হয়। তবে ওই দেশে কর্মরত বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান সোনালী এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ সবচেয়ে কম মাত্র ২.৩৫ শতাংশ। শীর্ষ চতুর্থ রেমিটেন্সের উৎসের দেশ মালয়েশিয়া থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমেছে। আগে যেখানে ৪.৩৯ শতাংশ খরচ হতো, এখন সেটি ৩.২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। আরএইচবি ব্যাংকে ১১.৩৪, ক্যাশ লাজুতে ৮.৭৬, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে ৭.২২, মে ব্যাংকে ৭.১৪ শতাংশ ও প্রভু মানিট্রান্সফারে ৬.৫০ শতাংশ খরচ হয়। তবে মানিগ্রাম, অগ্রণী রেমিটেন্স হাউস, সিবিএল মানিট্রান্সফার ও এনবিএল মানিট্রান্সফারের মাধ্যমে ১ শতাংশের কম খরচ হয়। কুয়েতের বাংলাদেশের পঞ্চম রেমিটেন্সের উৎস। এই দেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ ৯ শতাংশ বেড়েছে। আগে যেখানে গড়ে ১.৮৯ শতাংশ খরচ হতো গত বছরে তা বেড়ে হয়েছে ২.০৬ শতাংশ। ৯টি এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে টাকা পাঠানো যায়। সর্বোচ্চ খরচ ২.৫৬ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ১.৬৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্য থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে গড়ে ৪.৭২ শতাংশ খরচ হচ্ছে। আগের বছরে যা ছিল ৩.৫১ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে সাড়ে ৩৪ শতাংশ। মানিগ্রামে ৯.১১ শতাংশ, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে ৮.১৩ শতাংশ খরচ হয়। তবে সোনালী ব্যাংক থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ ৪.৩৪ শতাংশ ও সজন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড মানিট্রান্সফারে খরচ ৪.৬৪ শতাংশ। ওমান থেকে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ বেড়েছে ৬.৩৫ শতাংশ। আগে যেখানে রেমিটেন্স পাঠাতে ২.৯৯ শতাংশ খরচ হতো; এখন এই খরচ বেড়ে হয়েছে ৩.১৮ শতাংশ। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ সবচেয়ে বেশি ৩.৮৭ শতাংশ। ইউএই এক্সচেঞ্জ হাউসে ৩.৬৭ শতাংশ খরচ হয়। তবে মানিগ্রামের মাধ্যমে সবচেয়ে কম মাত্র ২.২৭ শতাংশ খরচ হয়। সিঙ্গাপুর থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে গড়ে খরচ হচ্ছে ২.১৯ শতাংশ। আগে এই খরচ ছিল ১.৬২ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নে ২.৫৭ শতাংশ, ট্রান্সফারওয়াইজে ২.৫৬ শতাংশ খরচ হয়। তবে আমির টেক রেমিটেন্স ১.৭৭ শতাংশ, এনবিএল মানিট্রান্সফার, অগ্রণী এক্সচেঞ্জ হাউস, প্রাইম ব্যাংক পাঠাতে খরচ হয় ২.০৬ শতাংশ। হুন্ডি বন্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সহায়তা চেয়ে চিঠি ॥ বিদেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ‘ভুয়া এজেন্ট’ খুলে প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটি জালিয়াত চক্র। এরপর সেই অর্থ তারা হুন্ডি করে দেশে পাঠায়। কিছু দিন ধরে অবৈধভাবে প্রবাসীদের আয় পাঠানোর প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্সে। এ অবস্থায় এটি বন্ধ করতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি এই লক্ষ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠিতে বলা হয়েছে, কিছু অসাধু ব্যক্তি অনুমোদন ছাড়াই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টের নাম করে প্রবাসীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। পরে এইসব অর্থ ব্যাংক বহির্ভূত চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে পাঠাচ্ছে। ওই জালিয়াত চক্রের এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে বাংলাদেশী দূতাবাস ও মিশনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, কিছু অসাধু ব্যক্তি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট খুলে প্রবাসীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। পরে তা অবৈধভাবে দেশে প্রেরণ করা হচ্ছে। যার কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ কমছে, দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি বলেন, এটি বন্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি আমরা। চিঠিতে বাংলাদেশী দূতাবাস ও মিশনের মাধ্যমে এসব এজেন্টের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি। প্রবাসী আয় বাড়াতে বিদেশ সফর করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিনিধিরা ॥ প্রবাসী আয় কমায় তৎপর হয়ে পড়েছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কমে যাওয়ার কারণ চিহ্নিত করতে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রবাসী আয় বেশি আসে এমন ৩০ শীর্ষ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে আগামী রবিবার সভা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই ইস্যুতে ৯ ফেব্রুয়ারি প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে সে সভায় উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে প্রবাসী আয় কমার কারণ চিহ্নিত করতে চলতি মাসেই বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি প্রতিনিধিদল চার দেশ সফরে যাচ্ছে। দেশগুলো হলো মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রতিনিধিদল দুটি দেশে ফিরে প্রবাসী আয় কমার কারণ সম্পর্কে গবেষণামূলক প্রতিবেদন জমা দেবে।
×