ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রাগীব আলী ও তার ছেলের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রাগীব আলী ও তার ছেলের ১৪ বছরের কারাদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক জালিয়াতি মামলায় শিল্পপতি রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাইকে ১৪ বছরের কারাদ- প্রদান করেছে আদালত। প্রত্যেককে ৪৬৬ ধারায় ৬ বছর ও ৪৬৮ ধারায় ৬ বছর করে ও ৪২০ ও ৪৭১ ধারায় প্রত্যেককে এক বছর করে কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। আদালত রাগীব আলী ও তার ছেলেকে চারটি ধারায় ১০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। অর্থ অনাদায়ে আরও ৩ মাস করে কারাদ-ের আদেশ দেন আদালত। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরো এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণাকালে আসামি পক্ষের কোন আইনজীবী আদালতে ছিলেন না। গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর আলোচিত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ১৪ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। সেবায়েত সেজে তারাপুর চা বাগান নিজের দখলে নেয়ার পর ১৯৯৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন তৎকালীন ভূমি কমিশনার (এসিল্যান্ড) এসএম আব্দুল কাদের। এছাড়া সরকারের এক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন তিনি। মামলায় ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গায় গড়ে উঠা সিলেটের হাজার কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি তারাপুর চা বাগানের জমি আত্মসাতের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জাল করার অভিযোগ আনা হয় রাগীব আলী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে। এই মামলার বিরুদ্ধে রাগীব আলী উচ্চ আদালতে গেলে দীর্ঘদিন পর গত বছরের শুরুতে সেটা নিষ্পত্তি হয়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগ গত ১৯ জানুয়ারি রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা পুনরায় চালুর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে তারাপুর চা বাগান দখল করে গড়ে উঠা সব স্থাপনা ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। এই আদেশের পর ১৫ মে চা বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। মামলার ১১ বছর পর সিলেটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের অতিরিক্ত সুপার সারোয়ার জাহান গত বছরের ১০ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দেন। গত ১০ আগস্ট রাগীব আলী ও তার একমাত্র ছেলে আবদুল হাইসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত। ওইদিনই জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে যান রাগীব আলী। পলাতক থাকা অবস্থায় গত বছরের ১২ নবেম্বর ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেরার পথে রাগীব আলীর ছেলে আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করে জকিগঞ্জ ইমিগ্রেশন পুলিশ। আর ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় ২৪ নবেম্বর ভারতে গ্রেফতার হন রাগীব আলী। ওইদিনই সিলেটের সুতারকান্দি সীমান্ত দিয়ে তাকে দেশে এনে কারাগারে পাঠানো হয়। প্রচার মাধ্যমে নিজেকে দানবীর হিসেবে পরিচিত করে রাগীব আলী আলোচনা সমালোচনায় চলে আসেন। ব্যাংক, চা বাগান, শিক্ষা, চিকিৎসা, মিডিয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার বিনিয়োগ রয়েছে। বিভিন্ন সময় সরকারী সম্পত্তি, দেবোত্তর সম্পত্তি দখলেরও অভিযোগ ওঠে রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। অর্থ দান দক্ষিণার মাধ্যমে নিজে দানবীর হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। অপরদিকে সমাজের বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিত্বশীল এমনকি বুদ্ধিজীবী পর্যায়ের ব্যক্তিরাও সুবিধা লাভ করে তার গুণকীর্তন করে গেছেন। পর্যবেক্ষণ ॥ আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘রাগীব আলী ও তার ছেলে আবদুল হাই অর্থবিত্তে বলিয়ান দেশের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। এই ধরনের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বর্তমান বাংলাদেশে তাদের অবৈধ প্রভাবকে ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক ডকুমেন্টকে জালিয়াতিমূলে সৃষ্টি করে জালিয়াতি কাগজপত্র প্রতারণামূলকভাবে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে, তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এই রায়।’
×