ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেচপাম্প মালিকদের কাছে জিম্মি কৃষক

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সেচপাম্প মালিকদের কাছে জিম্মি কৃষক

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ ঘোড়াঘাট উপজেলায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ (বিএডিসি) ব্যক্তিমালিকানার গভীর নলকূপের মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করছেন। অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় অনেক এলাকার কৃষকরা জমিতে চাষ দিতেও পারছেন না। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বিএডিসি, কৃষি বিভাগ এবং উপজেলা সেচ কমিটি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এখলাস হোসেন সরকার জানান, এ বছর ৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ইরি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলায় মোট ২৩২টি গভীর নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত ৬৩টি, বিএডিসি পরিচালিত ১০টি। বাকি ১শ’ ৫৯টি ব্যক্তিমালিকানাধীন। ঘোড়াঘাট উপজেলা সেচ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, ৩ জানুয়ারি সেচ কমিটির সভায় এ বছর বিদ্যুত ও ডিজেলচালিত উভয় ধরনের গভীর নলকূপের ক্ষেত্রে একরপ্রতি উঁচু জমির জন্য ৪ হাজার এবং নিচু জমির ক্ষেত্রে সাড়ে ৩ হাজার টাকা সেচ খরচ নির্ধারণ করা হয়। উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে বুলাকিপুর এবং ঘোড়াঘাট ইউনিয়নকে উঁচু এলাকা এবং সিংড়া ও পালশা ইউনিয়নকে নিচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেচ কমিটির নির্ধারিত মূল্যে সেচ চার্জ আদায় করতে গভীর নলকূপ মালিকদের জানানোসহ এলাকায় মাইকিংও করা হয়েছে। লালমাটি পূর্বপাড়া এলাকার কৃষক শাহাবুল, মোতালেব, আনারুল, সোলায়মানসহ প্রায় ২০-২৫ জন কৃষক অভিযোগ করেন, ওই গ্রামের বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের পরিচালিত গভীর নলকূপের অপারেটর জোব্বার মিয়া কৃষকদের কাছ থেকে একরপ্রতি ৬ হাজার করে টাকা দাবি করেন। কৃষকরা উপজেলা সেচ কমিটির নির্ধারিত রেট অনুযায়ী সেচ চার্জ দিতে চাইলে জোব্বার তা নিতে অস্বীকার করে সেচের পানি দেয়া বন্ধ রেখেছেন। এতে শুধু ওই গ্রামেই প্রায় ৫০ একর জমিতে এখনও সেচ দিতে পারেননি কৃষকরা। রঘুনাথপুর এলাকার মনোয়ার হোসেন, সাইফুল ইসলাম, ভেলাইন গ্রামের আব্দুল মালেক, রামেশ্বপুর গ্রামের গোফ্ফার প্রধানসহ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, তাদের এলাকার গভীর নলকূপ মালিকরাও একরপ্রতি ৬ হাজার করে টাকা আদায় করছেন। সেই সঙ্গে অগ্রিম নিচ্ছেন এক হাজার টাকা। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঘোড়াঘাট ইউনিটের সেকশন অফিসার বিদ্যুৎ কুমার রায় কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার্জ আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ঘটনায় একজন অপারেটর পরিবর্তন করা হয়েছে। আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম চৌধুরী জানান, সকলের মতামতের ভিত্তিতে সেচ চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে কেউ বেশি টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের এ নির্দেশ কেউ মানছেন না। ফলে কৃষকরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। উৎপাদন আর সেচের ব্যয় পরিশোধ করতে কৃষকরা বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছেন।
×