ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২০ কিমি পথ

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২০ কিমি পথ

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ দেখে মনে হবে ধুলি উঠা কোন গড়ের মাঠ। পিচ ঢালা পাথরের কোন অস্তিত্ব নেই। যেন ধুলায় ভরা গ্রামীণ পথ। এমন অবস্থা এখন রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কের গোদাগাড়ী অংশের অন্তত ২০ কিলোমিটার পথ। গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এ মহাসড়কটির বেহাল দশা। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৪৫ কিলোমিটার এ মহাসড়কের গোদাগাড়ী উপজেলা সদর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোডের মুখ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এ অংশটি হয়ে উঠেছে মরণফাঁদ। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকাজুড়ে ধুলিময়। পিচ-পাথরের কোন বালায় নেই। ইটের খোয়া বেরিয়ে আছে। আর চারিদিকে ধুলিময়। স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে এমন পরিস্থিতি। একটি গাড়ি গেলে ধুলাই আশপাশে অন্ধকার হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরেই খানা-খন্দের মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। মাঝে মাঝে পাথর কুচি আর গুঁড়া ইট ফেলে তার ওপর পিচ ছিটিয়ে গর্তগুলো বন্ধ করা হলেও তা সাতদিনের বেশি স্থায়ী হচ্ছে না। রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ কাশিয়াডাঙ্গা থেকে পূর্বে গোদাগাড়ী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারে কোনভাবে যান চলাচল করতে পারলেও গোদাগাড়ী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিশ্বরোডের মুখ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারের অবস্থা খুবই নাজুক। এই ২০ কিলোমিটারে গর্তের পাশে গর্ত। এ অংশে সড়কের ওপর কোন কোন স্থানে কার্পেটিং পর্যন্ত নেই। গোদাগাড়ীর ডাইংপাড়া, হাতনাবাদ, বালিয়াঘাট্টা ও দারিয়াপুর অংশে কার্পেটিং তুলে ইট বিছিয়ে হেরিংবন্ড করা হয়েছে। বালিয়াঘাট্টা এলাকার বাসিন্দা মুকুল জানান, সড়কটির স্থায়ী সংস্কার না করে মাঝে মাঝে ইটের গুঁড়া ফেলা হচ্ছে। কিন্তু গাড়ির তীব্র চাপের কারণে তা মোটেও স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে মহাসড়কে আবারও ফিরছে চেনা দুর্ভোগ। এভাবেই গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে সীমাহীন দুর্ভোগকে সঙ্গী করে লাখো মানুষ প্রতিদিন চলাচল করছে সড়কটি দিয়ে। মহাসড়কটিতে চলাচলকারী গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটি বর্তমানে দেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। অথচ সোনামসজিদ স্থল বন্দরের আমদানি-রফতানির একমাত্র এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ২০ হাজারের বেশি হালকা ও ভারি যানবাহন চলাচল করে। চলাচলের অযোগ্য এ সড়কে চলতে গিয়ে সড়কের ওপর প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে গাড়িগুলো। স্বাভাবিক সময়ে সড়কটি অতিক্রম করতে এক ঘণ্টা লাগলেও বর্তমানে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় চলে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সড়কটি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দেশের আমদানি-রফতানিও মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে প্রতিকূল প্রভাব। খানাখন্দে ভরা সড়কের কারণে অনেক সময় পণ্যবাহী গাড়ি বিকল হয়ে সড়কে পড়ে থাকছে। এতে যথাসময়ে পণ্য পৌঁছাতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। গোদাগাড়ীর হাতনাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাহাবুব বলেন, সড়কের অবস্থা এতই করুণ- এ সড়ক দিয়ে গাড়িতে করে কোন রোগী নিয়ে গেলে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে। শুধু রোগীই নয়, রিক্সা-অটোরিক্সার যাত্রীরাও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে এখন ভয় পান। যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী মার্চ মাসে সড়কটি সংস্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। কর্মকর্তাদের ভাষায়, সড়কটির অবস্থা এতই করুণ- সেটিকে সংস্কার করার উপায় নেই। সড়কটি নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। সওজের রাজশাহী জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, এরইমধ্যে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহাসড়কটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি দ্রুত সড়ক সংস্কার শুরুর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। সওজের এই কর্মকর্তা বলেন, সড়কটির অবস্থা খুব খারাপ। দরপত্র প্রক্রিয়ার কারণে কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে সড়ক পুনঃনির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
×