ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উড়ছেন ডেভিড ওয়ার্নার

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

উড়ছেন ডেভিড ওয়ার্নার

ব্যাট হাতে স্বপ্নের সময় পার করছেন ডেভিড ওয়ার্নার। বিশেষ করে পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে। শেষ দশ ওয়ানডেতে হাঁকিয়েছেন ৬টি সেঞ্চুরি, পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ২০১৬ সালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক টেস্টেও ঔজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন। মাত্র চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে টানা দ্বিতীয়বারে মতো দেশটির বর্ষসেরা ‘এ্যালান বোর্ডার পদক’ জিতে নিয়েছেন। গত বছর ওয়ানডেতে ৭ সেঞ্চুরি ও ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে রান ১৩৮৮। চলতি পাকিস্তান সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে ৭, ১৬ ও ৩৫ রানে আউট হলেও সিডনির চতুর্থ ওয়ানডেতে খেলেন ১৩০ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। এ্যাডিলেডে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচে ফের ১৭৯! শেষ ১৪ ইনিংসে যা তার সপ্তম সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি একটি ও প্রায় হাফ সেঞ্চুরি দুটিÑ এই ওয়ার্নারের অপর নাম তো সেঞ্চুরি-ই! পুরস্কারটা হাতেনাতে পেয়েছেন। টানা দ্বিতীয়বারে মতো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) বর্ষসেরা এ্যালান বোর্ডার মেডেল জিতেছেন, আট বছরের ক্যারিয়ারে প্রথমবারে মতো উঠে এসেছেন আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে। শুরুটা হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারিতে। সেন্ট কিটসে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৯ রান দিয়ে। এরপর যেন রান নয়, সেঞ্চুরির জন্যই মাঠে নামছেন। গত বছরই করেছিলেন ৭টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এই বছরটা অবশ্য শুরু হলো একটু অন্যভাবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিডনি টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১১৩, দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫। এরপর প্রথম তিন ওয়ানডেতে রান পাননি। তবে চতুর্থ ম্যাচে আবার জ্বলে উঠল তার ব্যাট। বিধ্বংসী এই ওপেনারের ১১৯ বলে খেললেন ১৩০ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। শেষ ম্যাচে ক্যারিয়ারসেরা ১৭৯। চার ১৯ ও ছক্কা ৫টি। ওয়ার্নারের ওয়ানডে ক্যারিয়ারটাকে দুই ভাগে ভাগ করে নেয়া যায়। প্রথম অধ্যায় ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত, আর দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরু ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে। অভিষেকের পর প্রথম ছয় বছরে ৬৫টি ওয়ানডে খেলে মাত্র ৪ সেঞ্চুরি। আর ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে রবিবার পর্যন্ত ২২ ম্যাচে সেঞ্চুরি ৮টি। এই সময়ে ৬০.৬১ গড়ে করেছেন ১৫৭৬ রান। যেখানে তার ক্যারিয়ার গড় ৪৩.২৯, মোট রান ৩ হাজার ৭৬৭! শেষ ১৪ ওয়ানডেতে ষষ্ঠ সেঞ্চুরির প্রথমটি শুরু হয়েছিল শ্রীলঙ্কা সফরে পাল্লেকেলেতে ১০৬ রানের মধ্য দিয়ে। এরপর বেনোনিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৮, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথম দুই ম্যাচে ৪০ ও ৫০। পরের তিনটির দুটিতেই সেঞ্চুরি। ১১৭, ৬ ও ১৭৩। অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য ওই সিরিজটা ছিল দুঃস্বপ্নের, ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাঁচ বা ততধিক ওয়ানডের সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ হয়েছিল স্টিভেন স্মিথের দল। কিন্তু ওয়ার্নার ছিলেন নিজেরই মতো। ডিসেম্বরে ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের দুটিতেই আবার সেঞ্চুরিÑ ২৪, ১১৯ ও ১৫৬! অতপর তিন ম্যাচের বিরতিতে এই সেঞ্চুরি। নিজের শেষ দশ ওয়ানডের ৫টিতেই সেঞ্চুরি করে রেকর্ড বইয়ে নাম লিখিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী ন্যাটা ওপেনার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এর আগে সবচেয়ে কম ১৩ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি ছিল সাবেক তারকা ম্যাথু হেইডেনের। ওয়ার্নার টেস্টেও কম যাচ্ছেন না। গত বছর ১১ ম্যাচে ২ সেঞ্চুর ও সমান হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে করেছিলেন ৭৪৮ রান। নতুন বছরে পাকিস্তান সিরিজে তিন টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি! টানা দ্বিতীয় বার ‘এ্যালান বোর্ডার মেডেল’ জিতে নেয়ার পরই ৩০ বছর বয়সী তুখোড় উইলোবাজ আইসিসি ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করেন। পেছনে ফেলেন এবি ডি ভিলিয়ার্স ও বিরাট কোহিলর মতো রাঘব-বোয়ালদের। মৌসুমজুড়ে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতার পুরস্কার র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসা। আট বছরের ক্যারিয়ারে এই প্রথম ওয়ানডের ‘এক নম্বরে’ জায়গা করে নেন গুরুত্বপূর্ণ ভারত সফরের আগে যা তাকে আরও বেশি উজ্জীবিত করবে। দুই ধাপ এগিয়ে শীর্ষে উঠে আসা ওয়ার্নারের রেটিং পয়েন্ট ৮৮০। দ্বিতীয় স্থানে নেমে যাওয়া এবি ডি ভিলিয়ার্সের পয়েন্ট ৮৬১। যদিও ইনজুরির জন্য প্রোটিয়া তারকা দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। আর ইংল্যান্ড সিরিজেই দূরন্ত ব্যাটিংশৈলী উপহার দিয়ে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা ভারতীয় রান-মেশিন কোহলি তিন নম্বরে নেমে গেছেন। তার পয়েন্ট ৮৫২। এক ধাপ করে পিছিয়েছেন কুইন্টন ডি’কক (৪) ও কেন উইলিয়ামসন (৫)। শীর্ষ দশে পরের পাঁচটি স্থানে যথাক্রমে জো রুট, হাসিম আমলা, স্টিভেন স্মিথ, মার্টিন গাপটিল ও বাবর আজম। তরুণ পাকিস্তানী ব্যাটসম্যান আজম পাঁচ ধাপ এগিয়ে এই প্রথম সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছেন। বিদায়ী ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ পর্যন্তÑ ২৮ ওয়ানডে খেলছেন অস্ট্রেলিয়ান বাহাতি ওপেনার। ২৮ ইনিংসে ৯ সেঞ্চুরি আর ৪ হাফ সেঞ্চুরিতে রান ১৭৫৫। দু-বার নার্ভাস-নাইন্টিজে কাটা না পড়লে সেঞ্চুরি সংখ্যা হতো ১১! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এ সময়ে তিনি রান নিয়েছেন ১০৬.৯৪ স্ট্রাইকরেটে। এমন ঝড়েই ক্যারিয়ারের স্ট্রাইকরেটটাও এখন এক শ’ (৯৬.৮৫) ছোঁয়ার আভাস দিচ্ছে। গত আগস্টের পর থেকে ওয়ার্নারের ফর্ম অচিন্তনীয়, ১৪ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি। গত ১ বছর ১ মাসে ওয়ার্নারের এমন পারফর্মেন্সই বদলে দিয়েছে সব কিছু। বিশ্বের ২২ নম্বর (৬৩৮ রেটিং পয়েন্ট) ব্যাটসম্যান হিসেবে ২০১৬ সাল শুরু করা ব্যাটসম্যান র‌্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় উঠে এসেেেছন, তাও আবার এবি-কোহলিদের টপকে। নিউজিল্যান্ডে ‘চ্যাপেল-হ্যাডলি’ ট্রফি ওয়ানডে সিরিজে খেলছে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। গুরুত্বপূর্ণ ভারত সফর সামনে রেখে ওয়ার্নারকে বিশ্রাম দেয় হয়েছে। ওয়ার্নার বলেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডে খেলার পর মনে হচ্ছিল, আমার পা আর চলছে না। আগের ম্যাচটাতে সেঞ্চুরির জন্য যথেষ্ট লড়াই করতে হয়েছিল। কিছুটা বিশ্রাম দরকার ছিল। আমার মনে হয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছে। তিনি আরও যোগ করেন, সত্যি বলতে এই বিশ্রামটা দারুণ কাজে লাগবে। ৫ তারিখ ভারতের উদ্দেশে রওনা দেব। তার আগে এই কয়েকদিন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কাটাতে পারব। ভারত সফর সবময় কঠিন। আশা করছি বিশ্রামের পর তরতাজা হয়ে মাঠে নামতে পারব।
×