ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গলদা চাষে বিপর্যয়

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭

গলদা চাষে বিপর্যয়

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে মানসম্মত রেনু পোনার অভাবে গলদা চিংড়ি চাষীরা আশানুরূপ উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেনু পোনা আহরণ বন্ধ থাকায় মাননিয়ন্ত্রণহীন হ্যাচারির অপুষ্ট নিম্নমানের রেনু পোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষীরা। এদিকে মৎস্য বিভাগ বলছে, হ্যাচারির গলদা রেনু (পোনা) উৎপাদন কম হওয়ায় চাষীরা সময়মতো ঘেরে মাছ ছাড়তে না পারায় গলদার উৎপাদন কিছুটা কমছে। আবার রফতানিতে নতুন বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় গলদার দাম হ্রাস পেয়েছে। বাগেরহাটসহ দক্ষিণাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি গলদা চিংড়ির চাষ করা হয়। এসব এলাকার হাজার হাজার চিংড়িচাষীর প্রতি বছর ৫শ’ ৬০ কোটি গলদা রেনু পোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এ চাহিদার ন্যূনতম সরবরাহ না থাকায় দিন দিন গলদাচাষীরা উৎপাদনে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অন্যদিকে প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু পোনা আহরণ বন্ধ থাকায় এবং সরকারীভাবে উৎপাদিত রেনু পোনা চাহিদা মেটাতে না পারায় বেসরকারী হ্যাচারি থেকে উৎপাদিত অপুষ্ট ও গুণগতমানহীন পোনা চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষীরা। ফকিরহাট উপজেলার বানিয়াখালী গ্রামের গলদাচাষী প্রজিত বালা, বিধান বাগচীসহ অনেকে বলেন, প্রাকৃতিক উৎস্য থেকে আহরিত রেনুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি, দীর্ঘদিন বাঁচে, অনেক বড় হয় এবং গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় চাষে উৎপাদন ভাল হয়। কিন্তু হ্যাচারির পোনার গুণগতমান খারাপ হওয়ায় ঘেরে গলদা মারা যায় এবং উৎপাদন ভাল হয় না। আমরা গুণগত মানসম্পন্ন রেনুর অভাবে হ্যাচারির পোনা চাষ করে ক্ষতির শিকার হয়েছি। প্রাকৃতিক উৎস নদ-নদী থেকে রেনু পোনা আহরণ করতে পারলে চিংড়ির উৎপাদন বাড়বে এবং বেশি পরিমাণে বৈদিশক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে সরকারের কাছে দাবি জানান চাষীরা। একই গ্রামের গুরু দেব বলেন, আমার চারটি গলদা ঘের রয়েছে। এবার লোন নিয়ে রেনু পোনা ছেড়ে চাষ করে পুঁজি ওঠেনি। মাছ মরে গেছে, বন্যায় ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে আমার প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন কিভাবে ধার-দেনা পরিশোধ করব তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। ফকিরহাট রেনু পোনা মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত হোসেন বলেন, এ অঞ্চলে প্রতি বছর ৪শ’ কোটি গলদা রেনু পোনা প্রয়োজন। সেখানে প্রতি বছর ২০ কোটি পোনা সরবরাহ করা হচ্ছে। বাকি পোনা নদী উৎস থেকে সংগ্রহ করতে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, গলদা চাষ টিকিয়ে রাখতে হলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে রেনু পোনা আহরণের বিকল্প নেই। বাগেরহাট চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিদুল ইসলাম বলেন, একদিকে বন্যার ক্ষতি; অন্যদিকে মাছের দাম কম হওয়ায় চাষীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। আমি মনে করি, সরকারের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করে চিংড়ি শিল্প তথা চাষীদের বাঁচিয়ে রাখা জরুরী। তা না হলে এ শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়বে। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ কবির হোসেন বলেন, বাগেরহাট জেলায় ২১ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ হাজার গলদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। এতে প্রায় ২৫ হাজার গলদাচাষী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। মানসম্মত রেনু পোনার অভাবে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, হ্যাচারিগুলো চাষীদের চাহিদা অনুযায়ী পোনা সরবারহ করতে পারছে না। অন্যদিকে সরকারীভাবে নদী থেকে পোনা আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় চাষীরা চাহিদা অনুয়ায়ী পোনা পাচ্ছেন না। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও গলদা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বায়ারদের অনীহার কারণে বাজার মন্দা যাচ্ছে।
×