ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশাখাপত্তমে ভারতের শিল্পমন্ত্রীকে তোফায়েল

দিল্লীকে পাটপণ্যের ওপর এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

 দিল্লীকে পাটপণ্যের ওপর এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পাটপণ্য রফতানিতে এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক প্রত্যাহার করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে দু’দেশের মধ্যে দ্রুত অফিসিয়াল আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স এবং ভারতের বাণিজ্য-শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত দু’দিনব্যাপী পার্টনারশিপ সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য তোফায়েল আহমেদ এখন ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তমে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নির্মলা সিতারামানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পাট পণ্যের ওপর যে এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, এ শুল্ক প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। গত অর্থবছর ভারতে ৬৮৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে, একই সময়ে বাংলাদেশ দেশটি থেকে আমদানি করেছে ৫৬৯৫ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। বাণিজ্য বাধা দূর করা হলে বাংলাদেশের রফতানি অনেক বাড়বে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নানা ধরনের শুল্ক ও অশুল্কজনিত বাণিজ্য বাধার কারণে বাংলাদেশ ভারতে আশানুরূপ রফতানি করতে পারছে না। বাংলাদেশী পাটপণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করায় ভারতের এ্যান্টি-ডাম্পিং কমিশনে আপীল করার ওপ্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দু’দেশের সরকার-টু-সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এ্যান্টি-ডাম্পিং বিষয়টির সুরাহার কথা ভাবছে সরকার। এ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করায় ভারতে এখন পাটসুতা, চট ও বস্তা রফতানিতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানকে প্রতি মেট্রিক টনে ১৯ থেকে ৩৫২ মার্কিন ডলার পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। এদিকে, কোন দেশ স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম দামে কোন পণ্য রফতানি করলে তাকে ডাম্পিং বলে গণ্য করতে পারে আমদানিকারক দেশ। এক্ষেত্রে তারা নিয়ম মেনে বিষয়টি তদন্ত করে এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করতে পারে। গত বছর বাংলাদেশী রাসায়নিক পণ্য হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পাকিস্তানে এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের শিকার হয়। কয়েকবার আলাপ-আলোচনা করার পরও পাকিস্তানের সঙ্গে এ্যান্টিং-ডাম্পিং বিষয়টির সুরাহা হয়নি। তবে এ সঙ্কট উত্তরণে কাজ করছে ট্যারিফ কমিশন। পাটপণ্য রফতানিতে ভারত অতিরিক্ত শুল্কারোপ করায় সোনালী আঁশ খ্যাত এ পণ্যটির বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের পাটপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ দুঃখজনক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিষয়টি ভারতের সঙ্গে আলোচনায় তুলে ধরেছে। বিষয়টি নিয়ে আবারও ভারতের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, তামাক ও মদ ছাড়া সকল পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে ভারত বাংলাদেশকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি সুবিধা প্রদান করছে। অথচ পাটপণ্য রফতানির ওপর এ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করেছে, যা দুঃখজনক। অনেক পণ্য রফতানির ক্ষেত্রেই ভারত এখন সাড়ে ১২ ভাগ হারে কাউন্টার ভেলিং শুল্ক নিচ্ছে। এতে বাংলাদেশে তৈরি পণ্য ভারতে রফতানির ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ সকল বাধা দূর করতে আন্তরিক হবে। জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর এ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কের তদন্ত শুরু করে দেশটির জুট মিলস এ্যাসোসিয়েশনের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর প্রথম দেশটির সংশ্লিষ্ট সংস্থা ডিরেক্টর জেনারেল অব এ্যান্টি-ডাম্পিং এ্যান্ড এ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) বাংলাদেশকে নোটিস দেয়। এরপর তারা বাংলাদেশের প্রায় ২৫০ পাট রফানিকারককে প্রশ্নপত্র পাঠায়। এর মধ্যে ২৬ কোম্পানি প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়েছে। উত্তরদাতাদের মধ্যে ১২ কোম্পানিকে নমুনা হিসেবে ধরে তদন্ত করেছে ডিজিএডি। এদিকে, ভারতের অর্থমন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুযায়ী, বাংলাদেশী পাটপণ্য রফতানিতে আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। ভারতীয় মুদ্রায় এই শুল্কের অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ভারতের গেজেটে নয়টি কোম্পানির ওপর শুল্কহার নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, ভারতের এ্যান্টি-ডাম্পিংয়ের পুরো আদেশটি আমরা পেয়েছি। ভারত বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাংলাদেশ-ভারত সব সময় একযোগে কাজ করছে। এ কারণেই ভারতের বড় বাজার এখন বাংলাদেশ। আশা করছি, দু’দেশের সরকার টু সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান হবে। তিনি বলেন, এ্যান্টি-ডাম্পিং কিন্তু বাংলাদেশের ওপর নয়, কয়েকটি কোম্পানির ওপর করা হয়েছে। এ বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন কাজ করছে। বিষয়টি সমাধানে ভারতের এ্যান্টি-ডাম্পিং কমিশনে আপীল করবে সরকার।
×