ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘বৈচিত্র্য- বহুত্বের ঐকতানে, এসো মিলি সর্বপ্রাণে’

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭

‘বৈচিত্র্য- বহুত্বের ঐকতানে, এসো মিলি সর্বপ্রাণে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতহীন মাঘের সকালে খেলা করছে মিঠে রোদ। সড়ক থেকেই কানে আসে চারুকলার বকুলতায় বেজে ওঠা ঢোলের বোল। অনুষদের সদর দরজা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই শোনা যায় সুরেলা শব্দধ্বনি। চোখে পড়ে বাঁশিতে সুর তুলেছে একদল মুরং। আরেকটু সামনে এগোতেই দৃশ্যপটে আসে সাঁওতাল তরুণ-তরুণীরা। নাচের তালে সবাই মিলে গাই সাঁওতালী গান। তুংগা, ঘণ্টি, প্লাঙ্গ, টিং টিং পুংচা এমনি সব অপরিচিত বাদ্যযন্ত্র থেকে ভেসে আসছে অপরিচিত সুর। যান্ত্রিক শহর ঢাকায় সৌন্দর্য ছাড়ানো এমন বৈচিত্রময়তার উপলক্ষ ছিল আদিবাসী সাংস্কৃতিক উৎসব। ‘বৈচিত্র্য-বহুত্বের ঐকতানে, এসো মিলি সর্বপ্রাণে’ সেøাগানে দুই দিনব্যপী এই উৎসবের আয়োজক ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)। শুক্রবার চারুকলার বকুলতলা শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন হয়। উৎসব উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক আসাদুল ইসলাম, চারুকলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক শেখ আফজাল হোসেন। জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অনিল মারা-ির সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান। উদ্বোধনী বক্তব্যে সন্তু লারমা বলেন, আদিবাসীদের নিয়ে এটি একটি বলিষ্ঠ এবং সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ। কিন্তু আদিবাসীদের সংস্কৃতির বাস্তবতা কি- তা গভীরে গিয়ে অনুভব করতে হবে। বাংলাদেশের পাহাড়ে ও সমতলে ৫৪টি আদিবাসীর বাস্তবতা হচ্ছেÑ তাদের জীবন সংগ্রামে লড়াইয়ের পাশাপাশি সংস্কৃতি নিয়েও লড়তে হচ্ছে। তাদের অনেক সংস্কৃতি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক নানা ক্ষেত্রেই তারা শোষিত। এটি নির্মম বাস্তবতা। একমাত্র গণমুখী শাসন ব্যবস্থাই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আদিবাসীদের উপেক্ষা করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আমাদের আচরণ এমন হওয়া উচিত নয়, যাতে তাদের মূূলধারার থেকে পৃথক কিছু মনে না হয়। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ এখনও অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। আমার ও আমাদের প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসীদের ক্ষোভ, বঞ্চনা, দুঃখ নিরসন করা। এটা আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। বিকেলে ছিল দিনের দ্বিতীয় অধিবেশন। এ পর্বে প্রবন্ধ পাঠ করেন পাভেল পার্থ। সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা। এর পর ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে সাঁওতালী নাচ পরিবেশন করে দিনাজপুরের সার্জম বাহা সাংস্কৃতিক দলের শিল্পীরা, গ্রীকা পরিবেশন করে গারো কালচারাল একাডেমি, বাংলা ঢোল পরিবেশন করে নৃপেন্দ্র ব্যান্ড পার্টি, জুম নাচ পরিবেশন করে গারো কালচারাল একাডেমি, ঐতিহ্যবাহী ডোম নাচ পরিবেশন করে দিনাজপুরের সাঁওতালী ডোম নাচ দলের শিল্পীরা। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বীরহারা, সজীব, রেরে এবং সমগীত সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গণের শিল্পীরা। আজ শনিবার এ উৎসবের শেষ দিনে সকালে থাকবে আদিবাসী ও বাঙালী চিত্রশিল্পীদের সমন্বয় চিত্রাঙ্কন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক আবুল বারক আলভীর সভাপতিত্বে অতিথি থাকবেন সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার এমপি। সকাল এগারোটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত অধ্যাপক মানস চৌধুরীর সূচনায় আদিবাসী-বাঙালীর আড্ডায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজন অংশ নেবেন। বিকেলের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। গ্যালারি কায়ায় দশ শিল্পীর ছাপচিত্র প্রদর্শনী ॥ এক আয়োজনে যুক্ত হয়েছে বরেণ্য, খ্যাতিমান ও উদীয়মান শিল্পীদের ছাপাই ছবি। দুই প্রজন্মের নানা বয়সী দশ চিত্রকরের সৃজিত ছাপচিত্রের এ প্রদর্শনী শুরু হলো রাজধানীর উত্তরার গ্যালারি কায়ায়। বাংলাদেশে নয় এবং কলকাতার একজনসহ দশ শিল্পীর বাছাইকৃত ছাপচিত্রের এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘ছাপাই ছবি ৩’। গ্যালারিটির ছাপাই ছবি শিরোনামে ধারাবাহিক প্রদর্শনীর এটি তৃতীয় আয়োজন। শুক্রবার বিকেলে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মনজুর এলাহী ও স্থপতি-শিল্প সমালোচক রবিউল হুসাইন। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেন মুর্তজা বশীর, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, রতন মজুমদার, রোকেয়া সুলতানা, ওয়াকিলুর রহমান, অতিন বসাক, রাবেয়া আহমেদ হলি, মোয়াজ্জেম হোসেন ও রাশিদা আক্তার। শিল্পীদের উডকাট, লিনোকাট, ড্রাই প্রিন্ট, সফট গ্রাউন্ড, লিথোগ্রাফ, উডব্লক, এচিং ও এ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমের কাজ রয়েছে এ প্রদর্শনীতে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিত্র সমালোচক রবিউল হুসাইন বলেন, গ্যালারির প্রধান উদ্দেশ্য হলো পুরনো শিল্পীদের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় সৃষ্টিশীল নতুন শিল্পীদের তুলে ধরা। এ ধরনের যৌথ প্রদর্শনীর মাধ্যমে গ্যালারি কায়া সেই কাজটি করে যাচ্ছে। সৈয়দ মঞ্জুর-এ-এলাহী বলেন শিল্প, সাহিত্য যুগ যুগ ধরে মানুষকে সভ্যতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তবে শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষণা দরকার। আগেকার দিনে রাজারা এটা করতেন। এখন সব মহল থেকে শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। শিল্পী মুর্তজা বশীরের যুবা বয়সে করা ৬টি ছাপচিত্র ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এ প্রসঙ্গে গ্যালারি কায়ার পরিচালক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী বললেন, পঞ্চাশ ও সত্তরের দশকে করা এসব ছাপচিত্রের পর মুর্তজা বশীর আর ছাপচিত্র করেননি। ২০০৭ সালে কায়ায় শিল্পীর একক প্রদর্শনী করার সময় এসব ছাপচিত্রের খোঁজ পান তারা। পক্ষকালব্যাপী এ প্রদর্শনী চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল এগারোটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বই পড়া কর্মসূচীর পুরস্কার বিতরণ উৎসব ॥ বই পড়ে বই পুরস্কার পেল বিভিন্ন স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে বিশ^সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া কর্মসূচীর পুরস্কার বিতরণ উৎসব। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আওতায় পরিচালিত দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রমের ঢাকা মহানগরীর স্কুল পর্যায়ের ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রছাত্রীদের দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য পুরস্কার বিতরণী উৎসব এই আয়োজন। সকাল ৯টায় এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে আকাশে নানান রঙের বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সম্মানিত ট্রাস্টি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, প্রকৌশলী রফিক উদ্দিন, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, জনপ্রিয় লেখক আনিসুল হক ও গ্রামীণফোন লিমিটেডের এ্যাক্টিং হেড অব কমিউনিকেশন তালাত কামাল। গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগরীর বই পড়া কর্মসূচীর দুই দিনব্যাপী এই পুরস্কার বিতরণী উৎসবের তিনটি পর্বে ১১১ স্কুলের ৫ হাজার ৬৯৮ শিক্ষার্থীর হাতে পুরস্কার দেয়া হয়। শুক্রবার সকালে প্রথম পর্বে ৫২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৯৯৪ ছাত্রছাত্রী পুরস্কার নিয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে পুরস্কার গ্রহণ করেছে ৩২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৮৪৭ ছাত্রছাত্রী। শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগরীর ২৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৮৫৭ ছাত্রছাত্রী অতিথিদের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করবে। আসমা কিবরিয়ার বই ‘শুধুই স্মৃতি নয়’ ॥ সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার প্রয়াত সহধর্মিণী আসমা কিবরিয়া তার জীবনের স্মৃতি ও ইতিহাসের নানা বিষয় নিয়ে লিখেছিলেন ‘শুধুই স্মৃতি নয়’ গ্রন্থ। বইটিতে তিনি যাপিত জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পাশাপাশি দেশের অনেক অজানা ইতিহাস তুলে ধরেছেন। জীবদ্দশায় প্রকাশিত না হলেও আসমা কিবরিয়ার মৃত্যুর পর মেয়ে ড. নাজলী কিবরিয়ার উদ্যোগে বইটি প্রকাশ করে পারিজাত প্রকাশনী। শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিসার্চ ডেভেলপমেন্টের আয়োজনে বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আলোচনায় অংশ নেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইকরাম আহমেদ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনম, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শাহ এ এম এস কিবরিয়ার বোন শরিফা মোসাব্বির ও ড. নাজলী কিবরিয়া। ওয়াহিদুল হক স্মরণে আলোচনা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান ॥ কণ্ঠশীলন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হকের প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে কণ্ঠশীলন আয়োজন করে ওয়াহিদুল হক স্মরণে বিশেষ আলোচনা ও আবৃত্তি অনুষ্ঠান। এতে আলোচনা করেন কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে কণ্ঠশীলন নিবেদিত আবৃত্তি প্রযোজনা ‘মহীয়সী রোকেয়া’ মঞ্চস্থ হয়।
×