ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে শামীম ওসমান

অবিলম্বে হলুদ সাংবাদিকতা রোধে আইন করুন

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

অবিলম্বে হলুদ সাংবাদিকতা রোধে আইন করুন

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা কয়েকটি পত্রিকার বিরুদ্ধে হলুদ সাংবাদিকতার অভিযোগ এনে তাদের কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁরা অবিলম্বে হলুদ সাংবাদিকতা রোধে নতুন আইন প্রণয়ন এবং সংসদে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়ে বলেন, সব পত্রিকা পড়লে মনে হয় মন্ত্রী-এমপিদের কোন মান-মর্যাদা নেই। তাদের কোন সমাজ, স্ত্রী-পরিজন নেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রশ্নে যারাই আপোসহীন, তারাই (এমপি) যেন ওই পত্রিকাগুলোর টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। এরা নতুন খেলায় নেমেছে, ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রথমে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এসব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন সাবেক চীফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সরকারী দলের এ কে এম শামীম ওসমান, পঞ্চানন বিশ্বাস ও জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। শামীম ওসমানের বক্তব্যের সময় সংসদ সদস্যদের দাবির মুখে তাঁর সময় তিন দফা বাড়াতে হয় ডেপুটি স্পীকারকে। উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য শুনলে মনে হয় তিনি বাংলাদেশে নয়, পাকিস্তানে বাস করেন। ইতিহাস বিকৃতি করে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তিনি যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, এজন্য তাঁর বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে উনি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার পর এখন যদি ভোট চাইতে যান, দেশের মানুষ আবারও তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করবে। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে বিএনপি নেত্রী জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার অধিকার হারিয়েছেন। জাপার কাজী ফিরোজ রশীদ গণমাধ্যমের কারও কারও ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, আমাদের মাঝে মাঝে আইটেম করা হয়, আমাদের নিয়ে রূপকথা সাজিয়ে গল্প লেখা হয়। মানুষ পড়ে আনন্দ উপভোগ করে, পত্রিকা চলে। কিন্তু আমাদের মান-মর্যাদা কোথায় যায় সেটা বুঝিয়ে বলতে পারব না। পত্রিকা পড়লেই বোঝা যায় এমপিদের কোন মান-মর্যাদা নেই। আমাদের কোন সমাজ, স্ত্রী-পরিজন নেই। আমাদের ঘর নেই, সংসার নেই। পান থেকে চুন খসলেই এমপিদের নিয়ে লেখা হয়, কিন্তু আমরা সংসদে প্রটেকশন পাই না। তিনি বলেন, হঠাৎ করে গড়ে উঠা কিছু রাজনীতিবিদ দেশের সর্বনাশ করছে। সরকারে থাকলে তোষামদকারীর অভাব হয় না, কিন্তু তাদের ব্যাপারে সতর্ক না থাকলে পরে পস্তাতে হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশে কী গণতন্ত্র, সাংবিধানিক শাসন ও উন্নয়ন সম্ভব হতো? জ্বালাও-পোড়াও ও মানুষ হত্যার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। জাসদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা স্বাধীনতার পর ১৮ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী হত্যা করেছে, তারাই আজ শপথ নিয়ে সংসদে বসেছে। প্রধানমন্ত্রীর বিমানে নাশকতা হয়, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এখনও বহাল থাকেন! ব্যাংকে একের পর এক হরিলুট হলেও দেখার কেউ নেই। কারও বিচার হয় না। একেএম শামীম ওসমান পত্র-পত্রিকার বিরুদ্ধে হলুদ সাংবাদিকতার অভিযোগ করে বলেন, আমি সত্য বলতে ভয় করি না। জানি না এটাই আমার শেষ বক্তব্য কিনা। কিন্তু এমন কিছু করিনি যে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় পাব। এই ডেইলি স্টার, প্রথম আলো এরা কারা? এরা পরিকল্পিতভাবে চরিত্র হননে নেমেছে। যারা শেখ হাসিনাকে আদর্শ মেনে তাঁর নেতৃত্বে রাজনীতি করছে তারাই যেন এই দুটি পত্রিকার টার্গেটে পরিণত হচ্ছে। শেখ হাসিনা প্রশ্নে বিন্দুমাত্র যারা আপোস করেন না, সেসব উদীয়মান নেতাকেই টার্গেট করে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের পর প্রথম আলো লিখল আমি জড়িত। কিন্তু রায় ঘোষণার পর এখন তারা কী বলবে? নিহত সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটনের মতো আমিও বারবার হলুদ সাংবাদিকতার শিকার হয়েছি। এরা নতুন খেলায় নেমেছে, ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধে এখনই আইন প্রণয়ন এবং তাদের সংসদে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের পাশাপাশি ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীরও কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, একজন আমাদের দলের লেবাস পড়ে আছেন, সরকারের সুযোগ-সুবিধাও নিচ্ছেন। উপদেষ্টাও হন। ওনার পত্রিকায় সংসদ সদস্যদের মাদক স¤্রাট বানানোর চেষ্টা করা হয়। আসলে এই লোকটা কে? কী তার ব্যাকগ্রাউন্ড? ১৯৭১ সালে সবাই যখন যুদ্ধে যান, তখন তিনি অবজারভারে চাকরি করেন। শামীম ওসমান বলেন, ১৯৭৮ সালে রাজপথে দাঁড়িয়ে যখন আমরা তরুণরা জিয়ার গাড়ি আটকে দিয়েছি, আন্দোলন করেছি, তখন তিনি (ইকবাল সোবহান চৌধুরী) গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। উনি আমাদের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেন, প্রগতিশীল সাজেন। অথচ আমাকেসহ এই সংসদে এমপিদের মাদক সম্রাট বানানোর চেষ্টা করেন। আমার বড় ভয় লাগে, চিন্তাও হয়। মনে হয় কোথায় জানি একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ সময় ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া শামীম ওসমানকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার বক্তব্যের অংশের সঙ্গে আমরাও একমত। কিন্তু স্পীকারের আসনে থেকে এ বিষয়ে আমার কোন রুলিং দেয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে বিধিসম্মতভাবে যদি আপনি কোন নোটিস আনেন, আলোচনার পর অবশ্যই তখন রুলিং দেয়া যাবে। বক্তব্যের শেষে চীফ হুইপ ছাড়াও অনেককে নিজ আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে শামীম ওসমানের সঙ্গে করমর্দন করে তার বক্তব্যের প্রতি সমর্থন দিতে দেখা যায়।
×