ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী জিম্মি

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অশান্ত কুমিল্লা ভার্সিটি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অশান্ত কুমিল্লা ভার্সিটি

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ একশ্রেণীর শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রমোশন, দলাদলি, মারামারি, হাতাহাতি, বাসা-বাড়িতে চুরি-ডাকাতি, পথে-ঘাটে যে কোন ঠুনকো বিষয় নিয়ে বিরোধসহ যেনতেন ঘটনায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা লাগানোর ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ক্রমেই বাড়ছে তালাবাজদের দাপট। ক্যাম্পাসের বাইরে দুই শিক্ষকের বাসায় ডাকাতির ঘটনাকে পরিকল্পিত আখ্যা দিয়ে গত ৭ দিন ধরে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। আন্দোলনের কারণে জিম্মি হয়ে পড়েছে ৬ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরাও ক্লাস-পরীক্ষার দাবিতে বুধবার ভার্সিটির প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে অশান্ত হয়ে উঠেছে ভার্সিটি ক্যাম্পাস। সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত-বিএনপিপন্থী একশ্রেণীর শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের প্রমোশন ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে পূর্বের কমপক্ষে ২ জন ভিসির কক্ষে তালা লাগিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন। ওই সুবিধাভোগী শ্রেণী বিভিন্ন সময় ভিসি কক্ষ ও প্রশাসনিক ভবনে তালা মারার কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হলেও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও আন্দোলন করে অনেকে আসীন হন গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং নিয়োগ বাগিয়ে নেন শিক্ষক নেতাদের অনেকে। এসব ঘটনা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াতপন্থী সুবিধাভোগী ওই শ্রেণী এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের ছত্রছায়ায় কথিত আন্দোলনকারী ওইসব তালাবাজরা ছাত্রদের জিম্মি ও বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে অযৌক্তিক দাবি আদায়ে আবারও নানাভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে গন্ধমতি এলাকায় বসবাসকারী দুই শিক্ষক তারিক হাসান ও আশিকা আক্তারের বাসায় গত ১৭ জানুয়ারি গভীর রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের না করে ঘটনাটি পরিকল্পিত আখ্যা দিয়ে অতীতের সুবিধাভোগী শিক্ষকদের এক অংশ বিচারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে নামে। একপর্যায়ে তারা গত ১৯ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। শিক্ষক আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের ১০টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। এদিকে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার দাবিতে বুধবার সাধারণ শিক্ষার্থীরাও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, ছাত্রজীবনে জামায়াত-বিএনপির অঙ্গসংগঠন শিবির ও ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা আদায়ের জন্য অযৌক্তিক আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করেন। এদের মধ্যে নৃবিজ্ঞান বিভাগের একজন, পদার্থ বিদ্যার একজন, ব্যবস্থাপনার একজন, মার্কেটিং বিভাগের একজনসহ বিশেষ করে এ ৪ জন শিক্ষকের নেতৃত্বে আবারও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অযৌক্তিক দাবি আদায়ের নামে গত ৭ দিন যাবত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন করে আসছে। এসব শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বিগত সময়ে শিবির-ছাত্রদলের রাজনীতি করলেও এখন ভোল পাল্টে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করে প্রমোশন, নিয়োগসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কাছে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন শিক্ষকদের একটি বড় অংশ।
×