ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ওয়্যারলেস সেটটি এখন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

সেই ওয়্যারলেস সেটটি এখন পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

শংকর কুমার দে ॥ দীর্ঘ ৪৫ বছর রাজারবাগের পুলিশ মুুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্থান পেল সেই বেতারযন্ত্রটি, যেটা দিয়ে ’৭১ সালে রাতের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণের বার্তা পাঠানো হয়েছিল দেশব্যাপী। স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই বেতারযন্ত্রটি এবার পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে স্থান পাওয়ায় যুগ যুগ ধরে দর্শনার্থীদের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাসের সাক্ষ্য দিয়ে যাবে। বেতারযন্ত্রটি থেকে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাত প্রায় সাড়ে দশটায় বার্তা প্রচার করা হয়, ‘বেজ ফর অল স্টেশন্স অব ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, কিপ লিসেন এ্যান্ড ওয়াচ, উই আর অলরেডি এটাকড বাই পাক আর্মি। ট্রাই টু সেভ ইয়োরসেল্ভস, ওভার।’ ইংরেজীতে এই বেতারযন্ত্রটি দিয়েই পুলিশ স্থাপনাগুলোতে সে সময় বার্তাটি প্রচার করেন পুলিশের ওয়্যারলেস বা বেতারযন্ত্রের অপারেটর শাহজাহান মিয়া। সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই সেই বেতারযন্ত্রটি স্থাপন করা হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে দোতলা ভবন বিশিষ্ট পুলিশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা হচ্ছেন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমান। এই জাদুঘরের নকশা করেছেন বিখ্যাত স্থপতি মীর আল-আমিন। পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যাত্রার শুরুতেই মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি ও অস্ত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দলিল প্রদর্শিত হয়েছে জাদুঘরেই। প্রতিদিন নামমাত্র শুভেচ্ছা মূল্যে টিকেটের বিনিময়ে সর্বসাধারণের জন্য জাদুঘর উন্মুক্ত রাখা হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের অবদান অনেক। এ অবদান ও স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আগেই জাদুঘর করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর এতদিন নানা সীমাবদ্ধতায় তা গড়ে তোলা হয়নি। অনেক পরে হলেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। স্বাধীনতা যুদ্ধকালে সময়ের পুলিশের যত নিদর্শন আছে তা সংগ্রহ, সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগ সফল ও সার্থক করতে জাদুঘরমুখী আরও নানা ধরনের নির্দশন সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোক্তা অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান (সংস্থাপন) বলেছেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়েছিল ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন। এ সময় সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য শহীদ হওয়ার পাশাপাশি পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও কয়েক হাজার এবং প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধও শুরু হয় রাজারবাগ থেকে। রাজারবাগ আক্রান্ত হওয়ার পরপরই ওয়্যারলেস বা বেতারযন্ত্রের অপারেটর সেদিন শাহজাহান মিয়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজ উদ্যোগে ইংরেজীতে পাকি আক্রমণের সেই বার্তাটি দেশের সব থানায় পাঠিয়ে দেন। ’৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত সাড়ে এগারোটার দিকে তিনি বেতারযন্ত্রটির মাধ্যমে এই বার্তা প্রচার করেন সারাদেশের পুলিশ স্থাপনাগুলোয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণের খবর দেয়ার নিদর্শন সেই বেতার যন্ত্রটি এতদিন পরে হলেও স্থান পেয়েছে রাজারবাগের পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। এখন থেকে বেতারযন্ত্রটি ছাড়াও ২৫ মার্চের কাল রাতে পাক হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলায় ক্ষতিগ্রস্তসহ যত নির্দশন আছে তা জাদুঘরে স্থান পাওয়ার পর তা পুলিশ সপ্তাহের পর খুলে দেয়া হলে সেই ৪৫ বছর আগের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিচারণের সুযোগ পাবেন সাধারণ দর্শনার্থীরাও।
×