ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সার্চ কমিটি ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

সার্চ কমিটি ঘোষণা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দুটি সূত্র জানিয়েছে, সার্চ কমিটির বাকি পাঁচজন হলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, সরকারী কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি কর্তৃক মনোনীত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারক অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক হবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অনুসন্ধান কমিটির কার্যসম্পাদনে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। তিন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির কোরাম পূর্ণ হবে। অনুসন্ধান কমিটি ন্যূনপক্ষে একজন নারীসহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সুপারিশ প্রদানের উদ্দেশে সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে দুই ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবেন এবং সিদ্ধান্তের সমতার ক্ষেত্রে সভায় সভাপতিত্বকারী সদস্যের নির্ণায়ক সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা থাকবে। সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্র্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটির প্রধান হিসেবে আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে মনোনীত করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহা (এস কে সিনহা)। সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনে ২০১২ সালের ২২ জানুয়ারি গঠন করা চার সদস্যের সার্চ কমিটিরও প্রধান ছিলেন। এছাড়া এবারের সার্চ কমিটিতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনকেও মনোনীত করা হয়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে গঠিত এই সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে বুধবার সকাল থেকে তোড়জোড় শুরু হয়। এই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন বুধবার বলেন, ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন সংক্রান্ত চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েছি। সার্চ কমিটি গঠনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাব ফেরত এসেছে। প্রস্তাব ফেরত আসার পর বুধবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে পরামর্শ করতে আইন মন্ত্রণালয়ে যান। পরামর্শ শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ফিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আদেশ জারির চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল পাঠাতে হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাব। বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। বুধবার আদেশ জারি হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, চূড়ান্ত করে কিছু বলতে পারছি না। নতুন সার্চ কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। বর্তমান কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল চার। নির্বাচন কমিশন গঠনে দ্বিতীয়বারের মতো সার্চ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সার্চ কমিটি গঠন করে আদেশ জারি করা হবে। বিগতবারের মতো এবারও সার্চ কমিটির প্রধান রয়েছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি। এবারও সার্চ কমিটি গঠনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এর সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে। একটি আইনের অধীনে রাষ্ট্রপতির ইসি গঠন করার কথা সংবিধানে বলা হলেও সেই আইন গত সাড়ে চার দশকেও হয়নি। আগের রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর একটি সার্চ কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে মনোনীতদের নামের তালিকা থেকে নতুন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত ওই সার্চ কমিটি সিইসি পদের জন্য দু’জন এবং নির্বাচন কমিশনার পদে আট জনের নাম প্রস্তাব করে। তাদের মধ্য থেকে সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী ও মোঃ শাহনেওয়াজকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন জিল্লুর রহমান। সার্চ কমিটি ॥ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, আপীল বিভাগের একজন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ছাড়াও সার্চ কমিটিতে থাকছেন হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, সরকারী কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীন আখতার। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও শিরীন আখতার ২০১২ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নির্বাচন কমিশন গঠন করতে চার সদস্যবিশিষ্ট সার্চ কমিটি করেছিলেন। জিল্লুর রহমান ওই কমিটিতে আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করেছিলেন। সদস্য হিসেবে তিনি রেখেছিলেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) এবং সরকারী কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানকে। রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, সার্চ কমিটি গঠন করতে জিল্লুর রহমানের ওই ফর্মুলা বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদও অনুসরণ করেছেন। তবে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং নারী প্রতিনিধি হিসেবে শিরীন আখতারকে অন্তর্ভুক্ত করে এর আকার বাড়িয়েছেন। একজন কমিশনার (মোঃ শাহ নেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি) বাদে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য তিন নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি করতে গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি। সংলাপ শেষ হয় চলতি বছর ১৮ জানুয়ারি। এ সময়ে রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩১টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেন। প্রায় প্রতিটি দলই নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়। তবে আইন না হওয়া পর্যন্ত সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দেয় দলগুলো। কাজী রকিবের সেই ইসি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে মেয়াদ শেষ করবে। এরপর অনধিক পাঁচজনকে নিয়ে নতুন ইসি গঠন করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে।
×