ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অনুকম্পা নয়, নিরাপত্তা পাওয়া জনগণের অধিকার

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৬ জানুয়ারি ২০১৭

অনুকম্পা নয়, নিরাপত্তা পাওয়া জনগণের অধিকার

বিডিনিউজ ॥ জনগণের করের টাকায় পুলিশ সদস্যদের বেতন হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেছেন, জানমালের নিরাপত্তা পাওয়া জনগণের অধিকার, কোন অনুকম্পার বিষয় নয়। বুধবার বঙ্গভবনে বার্ষিক পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, “বিপদগ্রস্ত মানুষ ন্যায় বিচার ও সেবা পাওয়ার আশায় আপনাদের শরণাপন্ন হয়। সেবা প্রত্যাশী মানুষ যেন কোনভাবেই হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সেবাধর্মী জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানের সদস্য হিসেবে পুলিশের সকল সদস্যকে সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জানমালের নিরাপত্তা পাওয়া জনগণের অধিকার, কোন অনুকম্পার বিষয় নয়। মনে রাখবেন, জনগণের করের টাকায় আপনাদের বেতন ভাতা হয়।” পুলিশ সদস্যদের আপনারা ‘আইনের ধারক ও বাহক’ অভিহিত করে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, জনগণের জানমালের সুরক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস ও অপরাধ দমন তাদের প্রধান ও পবিত্র দায়িত্ব বলে স্মরণ করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সিদিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, কোন অপরাধী যাতে অপরাধ করে ছাড়া না পায় এবং কোন নিরীহ মানুষ যাতে অযথা হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। আপনারা সকল প্রকার ভয়-ভীতি, অনুকম্পা বা প্রলোভনের উর্ধে উঠে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে সর্বাত্মক তৎপরতা অব্যাহত রাখবেন-দেশবাসী তা প্রত্যাশা করে। মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করিয়ে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের মাদকের বিস্তার রোধে কাজে সচেতন থাকার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য এসব গর্হিত কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার সংবাদ প্রায়ই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়ে থাকে। এতে অল্প কিছু অসাধু লোকের জন্য পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুণœ হয়। তাই এ ব্যাপারে আপনাদের সচেতন থাকতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানোর ওপরও জোর দেন আবদুল হামিদ। আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে অপরাধের মাত্রা ও ব্যাপ্তিতেও এসেছে পরিবর্তন। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে পুলিশের কর্মপরিধিও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই পুলিশকেও তথ্যপ্রযুক্তি, কলাকৌশল ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। আইসিটি তথা সাইবার বিষয়ক অপরাধ দমনে বিশেষ নজর দিতে হবে। এলাকাভিত্তিক অপরাধের ধরন চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে জঙ্গীবাদ মোকাবিলায় পুলিশের কার্যক্রমের প্রশংসা করে বর্তমান সময়ের এই বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা আরও বাড়ানোর ওপর জোর দেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, “জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনসচেনতা সৃষ্টি করে এর মূলোৎপাটন করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গীবাদের উত্থান রোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা যে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও সাহসিকতা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এতে জনজীবনে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে এসেছে। জঙ্গী দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।” রাষ্ট্র্রপতি বলেন, আমি আপনাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনপ্রত্যাশা পূরণ এবং জন আস্থা অর্জনের জন্য দায়িত্বপালনে আপনাদের আরও নিবেদিত হতে হবে। জনগণের সঙ্গে ভালবাসা ও মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করতে হবে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বঙ্গভবনের দরবার হলে এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, পুলিশ মহা-পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠান শেষে চার শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে ফটোসেশনে অংশ নেন।
×