ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আমতলীর আলোচিত খুনের ঘটনা কি তৃতীয় পক্ষের কারসাজি

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

আমতলীর আলোচিত খুনের ঘটনা কি তৃতীয় পক্ষের কারসাজি

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ বরগুনার আলোচিত ইদি আমিন হত্যাকা-ের রহস্য উন্মোচনে পুলিশ এখনও সফল হতে পারেনি। তবে পুলিশ সতর্কতার সঙ্গে চারদিক পর্যবেক্ষণ করছে। খুনের মোটিভ জানতে সব বিষয় খতিয়ে দেখছে। বিশেষ করে ইদি আমিন হত্যাকা-ে কোন পক্ষ বা ব্যক্তি লাভবান হতে পারে, এ বিষয়টি পুলিশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে। এরই মধ্যে ইদি আমিন হত্যার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পুলিশের কাছে পৌঁছেছে। যা পুলিশের তদন্তের পক্ষে সহায়ক হয়েছে। এদিকে, মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে ইদি আমিন খুনের নেপথ্যে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ভাড়াটে খুনী ব্যবহারের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ও রয়েছে। বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের বাজারখালী গ্রামে ইদি আমিন খুনের ঘটনা ঘটেছে গত ৬ জানুয়ারি রাত এগারোটা থেকে পরদিন সকাল সাতটার মধ্যে। এ ঘটনায় ইদি আমিনের ভাইয়ের দায়ের করা মামলায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। এরমধ্যে আটজনই সাংবাদিক পরিবারের সদস্য। অভিযোগ উঠেছে, মামলা দায়েরের আগেই পুলিশ এ ঘটনায় সাংবাদিক পরিবারের সদস্য মোঃ আনিচুর রহমানকে গ্রেফতার করে। সাংবাদিক পরিবারের অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক জনকণ্ঠের পটুয়াখালীর নিজস্ব সংবাদদাতা মোখলেছুর রহমান, দৈনিক মানবকণ্ঠের চীফ রিপোর্টার মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আরেক ভাই মোঃ মিজান এবং আরও তিন ভাইসহ ৮০ বছর বয়সী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বাবা আবদুল বারেক মৃধা। শুরু থেকেই এ হত্যাকা-ের ঘটনাটি এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি করে। পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃত আনিচুর রহমানকে তিনদিনের রিমান্ড শেষে গত ১৮ জানুয়ারি আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তার কাছ থেকে পুলিশ তেমন উল্লেখযোগ্য কোন তথ্য পায়নি। এদিকে, মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে এ হত্যাকা-ের নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে যে কারণটি এলাকার মানুষের মুখে মুখে ফিরছে, তা হচ্ছে-এ খুনে তৃতীয় কোন পক্ষের অংশগ্রহণ। অভিযোগ উঠেছে, তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতেই এ হত্যাকা-ে ভাড়াটে খুনী ব্যবহার করেছে। গত ইউপি নির্বাচনে এ মামলার এক নম্বর আসামি আসাদুর রহমান গুলিশাখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও আসাদুর রহমান সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি ভোট পান। ভোটের জনপ্রিয়তার দিক থেকে আসাদুর রহমানের উত্থান অন্যান্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের রাতের ঘুম হারাম করে দেয়। বিশেষ করে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর জন্য যা অশনিসঙ্কেত হয়ে দাঁড়ায়। ইদি আমিন এবং আসাদুর রহমান দু’টো পরিবারই এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের হিসেবে পরিচিত। এলাকার একটি কুখ্যাত রাজাকার পরিবার আসাদুর রহমানের উত্থান মেনে নিতে পারেনি। কুখ্যাত ওই রাজাকার পরিবারের এক সদস্য এই খুনে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করে নিজেদের ফায়দা লুটতে এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে, এমন তথ্য পাওয়া গেছে এলাকায়। এমনও প্রচারণা আছে, তৃতীয় পক্ষটি এ হত্যাকা-ে ভাড়াটে খুনী ব্যবহার করেছে। ঘটনার রাতে ইদি আমিন পরিবারের এক সদস্য ভাড়াটে মোটরসাইকেল নিয়ে সারারাত এলাকায় ঘুরে বেড়িয়েছে, কেন এবং কি কারণে, যা তদন্তের দাবি রাখে। সাধারণত স্বামীর হত্যাকা-ে স্ত্রী বাদী হন। কিন্তু ইদি আমিন হত্যাকা-ে স্ত্রী আইরিন পারভীন সৌমিকে সাক্ষীও করা হয়নি, এরও বা কারণ কী! সে প্রশ্ন উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। এছাড়া, ইদি আমিন এলাকায় শীর্ষসন্ত্রাসী ও মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত ছিল। তার অসংখ্য শত্রু ছিল। ইদি আমিন হত্যাকা-ে নেপথ্যের এসব বিষয় নিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) নূরুল ইসলাম বাদল জনকণ্ঠকে জানান, সবগুলো বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। তৃতীয়পক্ষের হস্তক্ষেপ অস্বীকার করা যায় না। এটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলেও কিছু কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যা যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে-শীঘ্রই একটা ফলাফল পাওয়া যাবে। প্রকৃত খুনী আশাকরি ধরা পড়বেই।
×