ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংরক্ষিত ছুটি কমানোয় প্রাইমারী শিক্ষকদের অসন্তোষ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

সংরক্ষিত ছুটি কমানোয় প্রাইমারী শিক্ষকদের অসন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংরক্ষিত ছুটি তিন দিন থেকে কমিয়ে একদিন করে ছুটির বর্ষপঞ্জি ঘোষণায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে সরকারী-বেসরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে। আপত্তি উঠেছে বর্ষপঞ্জির আরও কয়েকটি নির্দেশনা নিয়েও। অবিলম্বে এ বর্ষপঞ্জি সংশোধনের দাবিতে আগামী ২৩ মার্চ বিদ্যালয়ে আধঘণ্টা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম। কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। বর্ষপঞ্জি নিয়ে আপত্তি তুলেছে প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি। জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চলতি বছরের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির যে বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে শিক্ষকদের সংরক্ষিত ছুটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এছাড়া এ ছুটি নেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকদের বাদ দিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের অনুমতির কথা বলা হয়েছে। ছুটির এ বর্ষপঞ্জি ঘোষণার পর থেকেই শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে আপত্তি তোলা হয়। এরপর শিক্ষক সংগঠনগুলো বৈঠক করে প্রতিবাদ কর্মসূচীর সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম। সংগঠনের পক্ষ থেকেই এ বর্ষপঞ্জি সংশোধনের দাবিতে আগামী ২৩ মার্চ কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ফোরামের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান অবিলম্বে শিক্ষা ও শিক্ষকদের স্বার্থে এ বর্ষপঞ্জি সংশোধনের আহ্বান জানিয়েছেন। দাবির মধ্যে আছে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ভাতা ৩ বছর পরপর প্রাপ্তি, জাতীয় দিবসের ছুটিগুলো গ্রীষ্মের ছুটির সঙ্গে সমন্বয় করে ১৫ দিন নির্ধারণ এবং জাতীয় দিবসগুলো কর্মদিবস ঘোষণা করে ছুটির তালিকা সংশোধন। প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে পরস্পরের প্রতি ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ছুটির তালিকা সংশোধনের দাবিতে কর্মসূচী পালনের অনুরোধ জানিয়েছেন ফোরামের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান। এদিকে ফোরামের ২৩ মার্চের কর্মবিরতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে সরকারী প্রাথমিক শিক্ষদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সমিতির নেতারা শনিবার এক বিবৃতিতে সংরক্ষিত ছুটি তিনদিন থেকে কমিয়ে একদিন করার সিদ্ধান্ত বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি তারা সংরক্ষিত ছুটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রধান শিক্ষকদের ক্ষমতা খর্ব করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেয়ায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম তোতা ও সমিতির সাধারণ সম্পাদক গাজীউল হক চৌধুরী বিবৃতিতে জানান, বিগত বছরগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের হাতে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি ছিল। কিন্তু এ বছর ছুটির তালিকায় সংরক্ষিত ছুটি রাখা হয়েছে মাত্র একদিন। তাও প্রধান শিক্ষকদের ছুটির তালিকা হাতে রেখে আবার পায়ে শিকল দিয়ে বেড়ি লাগিয়ে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এটার মাধ্যমে মূলত প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, সংরক্ষিত ছুটি সাধারণত আকস্মিক কারণে ঘোষণা করতে হয়। সে ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে অনুমতি নেয়ার সুযোগ থাকে না। কেবলমাত্র টেলিফোনের মাধ্যমে অবহিত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষক নেতারা মনে করেন আগের মতো প্রধান শিক্ষকদের হাতে সংরক্ষিত ছুটি রাখা বাঞ্ছনীয়। প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ঘোষিত কর্মসূচীর বিষয়ে শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান একজন যোগ্য নেতা। ১৯৮১ সালে ঢাকা মহানগরীকে পৌরসভা করার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের আন্দোলন, ব্র্যাক আন্দোলনসহ শিক্ষকদের সকল আন্দোলনে তিনি সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এদিকে ঘোষিত ছুটির বর্ষপঞ্জি শিক্ষকদের ক্ষতির কারণ অভিহিত করে অবিলম্বে আগের মতো বিধান রাখার দাবি জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা। বর্ষপঞ্জি নিয়ে আপত্তি তুলেছে প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতি। ইতোমধ্যেই সমিতির পক্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত আপত্তি জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার এসব বিষয় নিয়ে মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন প্রধান শিক্ষক নেতারা। সমিতির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র এস এম ছায়িদ উল্লা জনকণ্ঠকে বলেন, ছুটির যে বর্ষপঞ্জি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে আমাদের ক্ষতি করা হয়েছে। এতদিন যেখানে তিনদিন সংরক্ষিত ছুটি ছিল সেখানে হঠাৎই তা একদিন করা হয়েছে। আবার সে ছুটি নিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন লাগবে। এতদিন এটা প্রধান শিক্ষকরই দিতে পারতেন। এ ছুটিটা নিতে হয় হঠাৎ কোন বিপদ আপদ হলে। তৎক্ষণাৎ এ ছুটি নিতে হয়। এটা নিতে যদি উপজেলার অনুমোদন লাগে তাহলে প্রধান শিক্ষকদের অস্তিত্ব থাকল কোথায়? আর হঠাৎ সমস্যা হলে একজন শিক্ষক উপজেলার শিক্ষা অফিসারের অনুমোদন কিভাবে নেবেন। এটা পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া এ শিক্ষক নেতা হঠাৎ করে শিক্ষকদের কর্মঘণ্টা বাড়ানোরও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
×