ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৭১ ওভারে দুই দলেরই সংগ্রহ ২৬০ রান

ক্রাইস্টচার্চে লড়াই চলছে সমান তালে

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

ক্রাইস্টচার্চে লড়াই চলছে সমান তালে

মিথুন আশরাফ ॥ ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সমানে-সমান লড়াই চলছে। প্রথমদিনে প্রথম ইনিংসে ২৮৯ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়দিনে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান তোলে। শেষদিকে বৃষ্টি আসায় দিনটিতে খেলা হয় ৭১ ওভার। সমান ওভারে বাংলাদেশও প্রথমদিনে ২৬০ রান করেছিল। তাতে বলা যায়, দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টটিতে দুই দল পাল্লা দিয়েই লড়াই করছে। তৃতীয়দিনে খেলতে নামার আগে নিউজিল্যান্ড পিছিয়ে আছে আরও ২৯ রানে। এ সমান সমান অবস্থান থাকলেও দুই দলের শক্তিমত্তা হিসেবে বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। মুশফিকুর রহীম, ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হক নেই। তিনজনকে ছাড়া বাংলাদেশ দল যে লড়াই করছে, তাতে প্রশংসাই মিলছে। যদিও প্রথমদিনেই অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয়দিনে পেসারদের তোপের পর সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে যে শেষ বিকেলে এসে নিউজিল্যান্ড বিপদে পড়ে, সেটি টেস্টের আবহ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের কথাই জানান দিচ্ছে। তিন পেসার তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন ও কামরুল ইসলাম রাব্বি শুরু থেকেই নিউজিল্যান্ডকে চাপে রাখে। রুবেল কোন উইকেট পাননি। তবে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন। আর তাসকিন ও রাব্বি মিলেতো ছারখার করে দেন। ১৭৭ রানে নিউজিল্যান্ডের যে ৪ উইকেট পড়ে, এরমধ্যে তিনটিই যায় পেসারদের দখলে। ১৫তম ওভারে নিজের প্রথম ওভার করতে এসে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলেই কাজের কাজটি করে দেন রাব্বি। প্রথম টেস্টের পর প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহের প্রশংসা পাওয়া রাব্বি কয়েকবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া ওপেনার জিত র‌্যাভালকে আউট করার পর অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনকেও সাজঘরে ফেরান। তখন নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে থাকে ৪৭ রান। দুই ব্যাটসম্যানকে হারানোর পর ওপেনার টম লাথাম ও রস টেইলর যেন একটু ভেবে খেলতে থাকেন। বাংলাদেশ বোলারদের কোন সুযোগ দিতে রাজি নন। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকেন। যেই ১৫৩ রান করে নিউজিল্যান্ড, তাসকিন এবার ‘ব্রেক থ্রু’ এনে দেন। খুব দরকার ছিল উইকেট পড়া। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৭৭ রান করার সঙ্গে পুরো সিরিজজুড়েই দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকা টম লাথামকে (৬৮) আউট করেন তাসকিন। লাথাম ও টেইলর মিলে ১০৬ রানের জুটি গড়েন। লাথামের আউটে যেন নিউজিল্যান্ডও চাপে পড়ে যায়। সেই চাপ নিতে না পেরে ১৭৭ রানে টেইলরও (৭৭) সাজঘরে ফেরেন। তবে এবার কোন পেসার নন, উইকেট শিকার করেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। নিজের দ্বিতীয় ওভারেই আরেকটি উইকেট পেতেন মিরাজ। কিন্তু র‌্যাভালের ক্যাচ মিস হয়। শেষ পর্যন্ত নিজের ১১তম ওভারে গিয়ে উইকেটের চেহারা দেখেন মিরাজ। অবশ্য ৭৫ রানে গিয়ে মিরাজের বলেই একবার ‘নতুন জীবন’ পান টেইলর। এরপর আর ২ রান যোগ করতে পারেন। সেই মিরাজই টেইলরকে সাজঘরে ফেরান। তখন মনে হয়েছিল, নিউজিল্যান্ড পুরোদমে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে বিপদে পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ভাবনা ঘুরে যায়। হেনরি নিকোলস ও মিচেল স্যান্টনার মিলে এ ভাবনা ঘুরিয়ে দেন। দুইজন মিলে দলকে পঞ্চম উইকেটে ৭৫ রানের জুটি উপহার দেন। যা দলকে ২৫০ রানে পৌঁছে দেয়। ২৫২ রানে গিয়ে অবশেষে স্যান্টনারকে (২৯) এলবিডাব্লিউ করে দেন সাকিব। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি স্যান্টনার। জুটি ভেঙ্গে যায়। তাতে যেন বাংলাদেশের দিকে নিয়ন্ত্রণ হেলেও পড়ে। দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত পুরো দাপট দেখায় নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় সেশনের অর্ধেকটাও তাদের দখলেই থাকে। যেই স্যান্টনারকে আউট করেন সাকিব, ৪ রানের মধ্যে আরও ২ উইকেট তুলে নেন। ওয়াটলিং ও গ্র্যান্ডহোমকেও সাজঘরে ফেরান। নিজের পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে স্ট্যান্টনারকে আউটের পর ষষ্ঠ ওভারের তৃতীয় ও ষষ্ঠ বলে গিয়ে ওয়াটলিং ও গ্র্যান্ডহোমকে আউট করে দিয়ে ম্যাচে ভালভাবেই ফিরে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়দিনে নিজের শেষ ৯ বলে ৩ উইকেট তুলে নেন সাকিব। শেষ বেলায় দুর্দান্ত বোলিং ঝলক দেখান। তাতে করে নিউজিল্যান্ড যেন উল্টো বিপত্তির আভাস পায়। এরপর আর ২ ওভার খেলা হয়। বৃষ্টি পড়তেই ৭১ ওভার পর খেলা বন্ধ হয়ে যায়। দিনটিও শেষ করার ঘোষণা দেন আম্পায়াররা। তাতে ১৯ ওভার কমও খেলা হয়। আজ তৃতীয়দিনে ৫৬ রানে অপরাজিত থাকা নিকোলস ও ৪ রানে ব্যাট করতে থাকা টিম সাউদি ব্যাট হাতে নামবেন। দ্রুত এখন নিউজিল্যান্ডের ৩টি উইকেট তুলে নিয়ে ব্যাটসম্যানরা ভাল করতে পারলেই হয়। প্রথম টেস্টের যে স্মৃতি তাতে শঙ্কা থাকেই। এত দাপটের পরও ওয়েলিংটন টেস্টে, প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ধস নামে। তাতে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি জিতে নেয়। এবারও সেই দ্বিতীয় ইনিংসের ওপরই সব যেন নির্ভর করছে। তাসকিন আহমেদ সেটির ইঙ্গিতও দিলেন, ‘২৬০ রানে ওদের (নিউজিল্যান্ডের) ৭ উইকেট পড়েছে। অবশ্যই ভাল লাগছে। তবে এখনও খুশির কিছু নেই। কারণ, খেলার এখনও অনেক বাকি। আজ (দ্বিতীয়দিন) যেহেতু খেলা শেষ, কাল (আজ) সকালে এসে আমরা ওদের যত কম রানে সম্ভব গুটিয়ে দেয়ার চেষ্টা করব। তারপর আমাদের ব্যাটসম্যানরা যদি ভাল করে, ওদের আমরা একটা ভাল লক্ষ্য দিতে চাই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘জয় তো অবশ্যই অনেক বড় অর্জন হবে। হয়তো অনভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু আমাদের জেতার সামর্থ্যও আছে। এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা জিতে দেখিয়েছি। হয়তো সেটা দেশে ছিল। এখানেও তা সম্ভব। আমাদের সেই স্কিল আছে। আমরা যদি আমাদের সেরাটা খেলতে পারি, তাহলে জিততেও পারি।’ জেতার আশা এখনই করা হচ্ছে। তারজন্য অবশ্যই ব্যাটসম্যানদের যা করার করতে হবে। স্কোরবোর্ডে ভাল রান যোগ করা না গেলে বোলাররাও কিছুই করতে পারবেন না। এখন যে সমানে-সমান লড়াই চলছে, সেটিও তখন শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে না।
×