ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চোটজর্জরিত বাংলাদেশের শেষ টেস্ট শুরু শুক্রবার ভোরে

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭

চোটজর্জরিত বাংলাদেশের শেষ টেস্ট শুরু শুক্রবার ভোরে

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীমের বুড়ো আঙ্গুলের ব্যথা এখনও আছে। ওপেনার ইমরুল কায়েসের উরুতে আছে সমস্যা। উরুর পেশিতে আছে ‘ছোট্ট টিয়ার’। মুশফিক ও ইমরুলের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার থেকে শুরু হতে যাওয়া নিউজিল্যান্ড সফরের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে খেলা নিয়ে আছে সংশয়। তামিম ইকবালের বাঁ হাতের বুড়ো আঙ্গুলের চোট এখনও সারেনি। তবে তা নিয়েই খেলতে হবে। প্রথম টেস্টে ব্যাটিং করার সময় বুকে বল লেগে ব্যথা পেয়েছেন মুমিনুল হক। চোটজর্জরিত হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ দল। এ অবস্থাতেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামতে হবে। যেটি হবে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচও। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আরেকটু ভাল করলেই ম্যাচ হার হত না বাংলাদেশের। কিন্তু সেই ভাল মিলল না। কেন? ইমরুল ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন। মুশফিকুরও তাই। পরে দুইজনই ব্যাটিং করতে নামেন। কিন্তু কোন কাজ হয় না। ব্যথা নিয়ে কী আর ঠিকমতো ব্যাটিং করা যায়? যায় না। প্রথম টেস্টে ইমরুল ও মুশফিক ইনজুরিতে পড়ে মাঠ থেকে বের হয়েছেন। তাতে দল হেরেছে। দ্বিতীয় টেস্টেতো আরও বেহাল দশা। এবার দুইজন নন, চারজনের সমস্যা। মুশফিক ও ইমরুল ব্যাট হাতে দ্বিতীয় টেস্টে নামতে পারবেন কিনা, সেই সংশয় আছেই। এরসঙ্গে ব্যথা নিয়ে তামিম কী পুরোটা দিতে পারবেন? মুমিনুল হচ্ছেন ‘টেস্ট স্প্যাশালিস্ট’ ব্যাটসম্যান। যদি তার কাছ থেকেও সর্বোচ্চ সার্ভিস না মিলে কিংবা নাই খেলেন, তাহলে বাংলাদেশ দলতো মাঠে নামার আগেই হারের শঙ্কায় পড়ে যাবে। প্রধান কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে অবশ্য সাহস দিচ্ছেন। বলেছেন, ‘লড়াইয়ে ফেরা অসম্ভব কিছু নয়। সময়ই বলবে আমরা সেটা পারব কিনা। তবে আমাদের সব চেষ্টা ও পরিকল্পনা নিজেদের ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যেই।’ এ জন্যতো আগে পুরো ফিট একটি দলকে পেতে হবে। দলের সেরা খেলোয়াড়দের খেলতে হবে। মুশফিক না খেললে স্বাভাবিকভাবেই নুরুল হাসান সোহান খেলবেন। আর ইমরুল না খেললে খেলবেন সৌম্য। কিন্তু মুশফিক ও ইমরুলের অভাব কী আর এ দুইজনকে দিয়ে এ মুহূর্তে পূরণ করা সম্ভব? মুশফিক ও ইমরুলই যে এখন একাদশের সেরা ক্রিকেটারদের তালিকায় আছেন। যদি খেলেনও, তাহলেওতো বিপদ। পুরো ফিট হয়েতো আর খেলতে পারবেন না দুইজনই। এ দুইজনের সঙ্গে তামিম চাইলেও না খেলে পারবেন না। তাকে বলেই দেয়া হয়েছে, খেলতে হবে। মুশফিক না থাকলে যে তাকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। ঝামেলা আরেকটি জায়গাতে। সেটি মুমিনুল। এ ব্যাটসম্যান কোন কারণে যদি না খেলেন, তাহলেতো দল পুরাই সমস্যায় পড়ে যাবে। এলোমেলো হয়ে যাবে একাদশ। তাতে আরও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। মুমিনুলকে নিয়ে অবশ্য হাতুরাসিংহে আশাবাদী। তাকে নিয়ে কোচ বলেছেন, ‘মুমিনুল পাঁজরে চোট পেয়েছিল। তবে ওর অবস্থা বেশ ভালই। আশা করছি টেস্টের আগেই ঠিক হয়ে যাবে।’ হাতে আজকের দিনটিই আছে। রাত পোহালেই ভোর চারটায় খেলা শুরু। যে ক্রাইস্টচার্চ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজের শুরু হয়েছিল। সেই ক্রাইস্টচার্চেই সফরের শেষ ম্যাচটি খেলতে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু তার আগেই চোটে জর্জরিত হয়ে দল টালমাটাল হয়ে গেছে বলা চলে। দ্বিতীয় টেস্টে কী হবে? তা সময়ই বলে দেবে। একাদশে কে কে থাকছেন, তাও ম্যাচ শুরু হলেই বোঝা যাবে। তবে প্রথম টেস্টে যে দল এত দাপট দেখানোর পরও হেরেছে, সেই হারের গোলকধাঁধাতেই এখনও আছেন সবাই। সেই হারের ক্ষত এখনও পোড়াচ্ছে সবাইকে। ওয়েলিংটন থেকে মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চে এসেছে দল। বুধবার অনুশীলনও করেছে। ক্রাইস্টচার্চের হাগলি ওভালে এসে কোচ হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক মুশফিক আগেই উইকেট দেখেন। উইকেট বোঝার চেষ্টা করেন। দুইজন মিলে দ্বিতীয় টেস্টে কিভাবে খেলা উচিত, সেই হিসেবই করেন। কোচ সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখিও হন। হাতুরাসিংহেকে ইনজুরিযুক্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে বেশি কথা বলতে হয়। মুশফিককে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই হাতুরাসিংহে জানান, ‘আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন খেলোয়াড়ের চোট আছে। মুশফিকের ব্যাপারে আরও একটা পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছি। ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বললে আরও ভাল ধারণা পাব। আর ইমরুলের সম্ভাবনা এখনও ফিফটি-ফিফটি।’ ওয়েলিংটন টেস্টে নিউজিল্যান্ড পেসাররা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ক্ষতযুক্ত স্থান টার্গেট করেই বল করে গেছেন। একের পর এক বাউন্স দিয়ে গেছেন। যা বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের দারুণ ভুগিয়েছে। এ খেলোয়াড়ী আচরণ খেলোয়াড়সুলভ হয়েছে বলেই মনে করছেন হাতুরাসিংহে। বলেছেন, ‘আমার কাছে কিছুই বাড়াবাড়ি মনে হয়নি। আমরাও তো এটাই করেছি। আক্রমণাত্মক বোলিং করেছি। কামরুলের ওই ওভারের দিকে তাকিয়ে দেখুন। ওটাই টেস্ট ক্রিকেট, আসল টেস্ট ক্রিকেট। আমার কাছে লড়াইটা ভালই লেগেছে এবং আমাদের এটাই করে যাওয়া উচিত। আমি মনে করি, আমরা একটা ভাল দলের কাছে হেরেছি।’ মুশফিক ও ইমরুলের সাহসের প্রশংসাও করেছেন কোচ, ‘অনেক সাহসের পরিচয় দিয়েছে ওরা (মুশফিক ও ইমরুল)। একবার স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়ার পর ইমরুলের নতুন করে ব্যাট করতে নামা, বুড়ো আঙ্গুলের চোট নিয়েও মুশফিকের ব্যাটিং করার সাহস দেখান, এগুলো প্রমাণ করে তারা দেশের জন্য কতটা নিবেদিতপ্রাণ।’ এ দুই ব্যাটসম্যান দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে ব্যাট করতে নেমেছেন। আর তাতেই হয়েছে সর্বনাশ। এখন দ্বিতীয় টেস্টে মাঠে নামাই অনিশ্চিত। চোটজর্জরিত বাংলাদেশ দল এখন শেষ টেস্টে সব বাধা পেরিয়ে ভাল কিছু করলেই হয়। সেই প্রত্যাশাই সবার।
×