ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

একাদশ সংসদ নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৭ জানুয়ারি ২০১৭

একাদশ সংসদ নির্বাচন

দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমশ নির্বাচনমুখী হচ্ছে। প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। তাদের সকল কর্মকা- এখন নির্বাচনকেন্দ্রিক যেন। ২৩ মাস পর এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তার আগে বর্তমানে নয়া নির্বাচন কমিশন বা ইসি গঠন প্রক্রিয়া চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো নানা প্রস্তাব তুলে ধরছেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ সংক্রান্ত আলোচনায়। মতামতও পেশ করছেন মুখোমুখি বৈঠকে। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০১৯ সালের গোড়ায় একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন আয়োজনের নির্ধারিত সময়। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সে জন্য ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, সংবিধান অনুযায়ী স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে ইসি যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। একই সঙ্গে সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অরাজকতা, নৃশংসতা, সহিংসতা, হানাহানি, সংঘর্ষ দেশবাসীর কাম্য নয় কোনভাবেই। ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী সে প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পেট্রোলবোমা, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যার মেতে উঠেছিল। জীবন্ত দগ্ধ করেছে বাসযাত্রীদের। শতাধিক মানুষ হত্যার শিকার হয়। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করা হয়। দেশজুড়ে সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত রাখা হয়। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বর্জন করলেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দল এবং প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সুষ্ঠুভাবে সংসদ নির্বাচন হয়। অনেক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। নির্বাচনের সময় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত ছিল। সরকার কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করেনি। কিন্তু এ নির্বাচন মেনে না নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট নেত্রী টানা ৯২ দিন দলীয় কার্যালয়ে আরাম-আয়েশে অবস্থান করে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অবরোধ পালনের নামে জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসী কর্মকা-কে উস্কে দেন। তবে দেশবাসী তাদের এই সন্ত্রাসী কর্মকা- প্রত্যাখ্যান করায় তারা নৃশংস কর্মসূচী থেকে সরে যায়। দেশবাসী আর এ ধরনের কর্মকা-ের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু পঁচাত্তরপরবর্তী সামরিক জান্তা শাসকরা কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে কমিশনকে বিতর্কিত করে। জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম এবং প্রাণহানির ফলে কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবার আগে নয়া কমিশন গঠন প্রক্রিয়া চলছে। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ইসি গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবেÑ এমন বিশ্বাস জনমনে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধের সংস্কৃতি খুব প্রকট হলেও ইসি গঠনের ক্ষেত্রে প্রায় সব দলই একটি বিষয়ে একমত হয়েছে। কমিশনার নিয়োগে আইন প্রণয়ন করার পেক্ষাপটটি সামনে এসেছে। নয়া কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় যথাযথ ভূমিকা যাতে নিতে পারেÑ সে প্রত্যাশা দেশবাসীর।
×