ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্ধত্ব নিবারণে প্রতিবন্ধকতা চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা

মরণোত্তর চক্ষুদানে ভীতি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

মরণোত্তর চক্ষুদানে ভীতি

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মরণোত্তর চক্ষুদানে ভীতি ও অনীহার কারণে দেশের অন্ধত্ব নিবারণ সম্ভব হচ্ছে না। বিত্তবানরা আমদানিকৃত চোখের ওপর নির্ভরশীল হলেও দরিদ্ররা অন্ধত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে রয়েছে। পাহাড়তলী চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্মলগ্নের ত্রিশ বছরেও মরণোত্তর চক্ষুদানে এগিয়ে আসার রেকর্ড নেই। কর্তৃপক্ষ মরণোত্তর চক্ষু সংগ্রহে ব্যাপক প্রচার চালিয়েও সফলতার মুখ দেখেনি এমন তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ম্যানেজিং ট্রাস্টি ডাঃ রবিউল হোসেন। বর্তমানে চিকিৎসা সেবায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে টেলি মেডিসিনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে মাত্র ৩ হাজার ৬শ’ টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি (বিএনএসবি)। ১৯৮৩ সালে পাহাড়তলীর রেলভূমির ওপর গড়ে উঠে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহায়তায় চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এ পর্যন্ত ৮০ লাখেরও বেশি রোগীকে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়ার রেকর্ড গড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম এই হাসপাতাল। এছাড়াও ৮ লক্ষাধিক রোগীকে সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে চক্ষু চিকিৎসায় তথা কর্নিয়া পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো উদ্যোগ। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপক পরিসরে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে এ হাসপাতালে রোগীদের অন্ধত্ব দূর করতে অস্ত্রোপচার কার্যক্রম শুরু হয়। ছানিপড়া, কর্নিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মরণোত্তর চক্ষুদান থেকে কর্নিয়া কালেকশন। এ হাসপাতালে কর্নিয়া কালেকশনে ‘আই ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ত্রিশ বছরেরও বেশি সময় এ হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হলেও কর্তৃপক্ষ নানাভাবে ক্যাম্পেইন করেও আশানুরূপ ফল পায়নি। ফলে বিদেশ হতে কর্নিয়া আনতে হচ্ছে। বিশেষ করে আমেরিকা থেকে সবচেয়ে বেশি কর্নিয়া আসছে এ হাসপাতালে। এছাড়াও রয়েছে লেন্স প্রতিস্থানের ব্যবস্থা। এসব লেন্স বেশিরভাগই আমেরিকা কিংবা ভারত থেকে আনা হয়। এদিকে, হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় শিশুদের জন্য সুনির্দিষ্ট বিভাগ চালু আছে। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ ভাগ শিশু। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৪ মিলিয়ন শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এ হাসপাতালে। প্রতিবছর গড়ে ৪ লাখ রোগীকে বহিঃবিভাগে চিকিৎসা এবং ২০ হাজার রোগীর অপারেশন করা হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অগ্রগতি প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডাঃ রবিউল হোসেন জানান, মরণোত্তর চক্ষুদানের ক্ষেত্রে মৃত্যুর চার ঘণ্টার মধ্যে নিহতের নেয়া গেলে তা কাজে লাগানো যায়। এরচেয়ে বেশি সময় ব্যয় হলে ওই চোখের কার্যকারিতা রক্ষা সম্ভব হয় না। বহিঃবিভাগ ও অপারেশন ছাড়াও ক্যাম্পাসেই দুটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অফথালমোলজি ও অপটোমেট্রি (স্নাতক) কোর্সের মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী ডিপ্লোমা ডিগ্রী অর্জন করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এ শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এছাড়াও চিকিৎসা সহকারীদের প্রশিক্ষণ, লাইব্রেরি সুবিধা ও চক্ষুরোগ বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমে চিকিৎসকদের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
×