ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ১৬ জানুয়ারি ২০১৭

টাইগারদের রেকর্ড

বিদেশের মাটিতে দেশের খেলোয়াড়রা একের পর এক নাজেহাল হতে থাকলে, দল ধারাবাহিকভাবে হারতে থাকলে মানুষের মনের অবস্থা কেমন হয় তা বলাই বাহুল্য। নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে দেশবাসীর কত আশাই না ছিল! সত্যের খাতিরে বলতেই হবে যে, তার সিকিভাগও ছিল না টেস্ট নিয়ে। আর এখন কিনা টেস্টের সাফল্যেই আগের দুটি সিরিজ পরাজয় চাপা পড়তে চলেছে! বাংলাদেশের ক্রিকেটে এলো স্বপ্নের মতো এক দিন। প্রথম টেস্টের দুইদিন শেষে বাংলাদেশ কিনা ৫৪২ রান করেও অলআউট নয়! সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি, মুশফিকের দেড় শ’ পেরুনো ইনিংস, পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের রেকর্ড জুটি। রেকর্ড বুক থেকে কয়েকটি তথ্য তুলে ধরতেই হবে। সাকিবের ইনিংসের ৩১টি চার বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে ইনিংস সর্বোচ্চ। টেস্ট ইতিহাসের ১৪তম খেলোয়াড় হিসেবে ৩ হাজার রান ও ১৫০ উইকেটের ‘ডাবল’ পেলেন সাকিব আল হাসান। টেস্টে এই প্রথম এক ইনিংসে বাংলাদেশের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের চারজনই ৫০ ছাড়ানো ইনিংস খেললেন। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে পঞ্চম উইকেটে আর কোন জুটির ৩০০ রানও নেই। বিদেশী পত্র-পত্রিকা টাইগারদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে; তাদের লেখায় ঝরে পড়েছে স্তুতিবাক্য। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড বাংলাদেশের লড়াইয়ে দেখছে কিছু জবাব দেয়ার প্রতিজ্ঞা হিসেবে। তাদের মন্তব্য : ‘মূল কথাটা পরিষ্কারÑ এই দলটার মধ্যে একটা তীব্র তাড়না আছে, নিজেরা যে আরও ভাল খেলতে পারে সেটি প্রমাণের, প্রতিদিনই যে শিখছে সেটি দেখানোর। জিতলে সেটি দুর্দান্ত অর্জন হবে। এখনও তিনদিন বাকি আছে, তবে এই মুহূর্তে অনুভূতিটা এমনÑ এই টেস্টে জেতার মতো এখন একটি দলই আছে। সেটি নিউজিল্যান্ড নয়।’ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুলি এখনও অনেকটাই শূন্য। এমন একটি বাস্তবতায় নিউজিল্যান্ডে শুক্রবার টাইগাররা যে কৃতিত্ব দেখাল তাতে বাংলাদেশের টেস্ট শক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে বিশ্বের টেস্ট খেলুড়ে বাঘা বাঘা দেশগুলোকে। এটাই এ সিরিজের বড় অর্জন। এই অর্জন ধরে রাখতে হবে। নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার আগে সেখানকার কন্ডিশনে বাংলাদেশের জন্য টেস্ট ক্রিকেটকে মনে করা হচ্ছিল কঠিনতম খেলা। আর এখন উল্টো ফাস্ট বোলাররা বোলিং করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। তিন শক্তিমান বোলার প্রত্যেকেই রান দিয়েছেন এক শ’র ওপরে। অথচ অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন পেসারদের ওপর এতই আস্থাশীল ছিলেন যে, ৬৮ ওভার পর্যন্ত স্পিনারই আনেননি! এটা অস্বীকারের উপায় নেই যে, ক্রিকেটে ‘হোম গ্রাউন্ড’ বলে যে টার্ম রয়েছে সেটি থেকে বেশিরভাগ সময় ফায়দা নিয়ে থাকে স্বাগতিকরাই। নিউজিল্যান্ডে যে লাগাতার হার দিয়ে লজ্জাজনক একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে গেলে অবশ্যই ওই হোম গ্রাউন্ডকেই ভাল নম্বর দিতে হবে। সেইসঙ্গে এ কথাও বলতে হবে যে, টাইগাররা পরিবর্তিত পরিবেশ ও আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা বেশি সময় নিয়ে ফেলেছে। এই বিলম্বিত অভিযোজন ক্ষমতার কারণেই বিলম্বে আসতে শুরু করেছে সাফল্য। জেনে অবাকই হতে হয় যে, দু’শ’ রান পেরুনো পর্যন্তও সাফল্যের নায়ক সাকিব আল হাসান তার কাপড় ও দস্তানা (গ্লাভস) বদল করেননি। ওই কন্ডিশনে তিনি এতটাই ফিট ও স্বচ্ছন্দ ছিলেন। দুটো সিরিজ হেরেও সত্যিকারের বাঘের মতো লড়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করল টাইগাররা। বাংলাদেশের জন্য বিশাল আনন্দের উপলক্ষ বয়ে আনায় টাইগারদের, বিশেষ করে সাকিব ও মুশফিককে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। শাবাশ সাকিব-মুশফিক।
×