ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মস্তানদের দখলে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মস্তানদের দখলে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৪ জানুয়ারি ॥ পাবনা জেনারেল হাসপাতাল স্থানীয় মস্তান নিয়ন্ত্রণ করায় চিকিৎসা ক্ষেত্রে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ওই ব্যক্তিরা নিয়ন্ত্রণ করায় সরকারী হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। অভিযোগে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে সর্বক্ষণিক স্থানীয় মাস্তান ঘিরে রাখে। রোগী ভর্তিতেও ওই মস্তানরা প্রভাব বিস্তার করে। কোন রোগীর পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার হলে মস্তানরা তাদের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বাধ্য করে। ব্লাড ব্যাংকে রক্ত পরীক্ষা ও রক্ত দেয়ার ক্ষেত্রে নানা অজুহাতে তারা রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাসহ অন্যত্র স্থানান্তরযোগ্য রোগীদের পরিবহনে ওই মস্তানচক্র পছন্দের এ্যাম্বুলেন্সে যেতে বাধ্য করে। ওই সব এ্যাম্বুলেন্স থেকে মস্তানরা কমিশন আদায় করে। কোন রোগী মারা গেলে মস্তানচক্র লাশ নেয়ার সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তাদের পছন্দের এম্বুলেন্সে তুলে দেয়। ওই এ্যাম্বুলেন্স থেকেও মোটা অঙ্কের কমিশন আদায় করা হয়। অতিরিক্ত এই টাকা আদায়ের কারণে রোগীর স্বজনদের মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। হাসপাতাল চত্বরে মাদক কেনাবেচার আসরও বসছে বলে এলাকার একাধিক সূত্র জানিয়েছে। হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা জানান, প্রভাবশালী মস্তানদের কাছে হাসপাতালটি জিম্মি হয়ে পড়েছে। রোগীদের ভোগান্তির পাশাপাশি কর্মচারীরাও মস্তানদের হাতে নাজেহাল হচ্ছেন। এতে হাসপাতালে চিকিৎসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এদিকে বহির্বিভাগের রোগীরা অভিযোগে জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন ওষধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা হাসপাতালের ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল পার্কিং করে ডাক্তারদের চেম্বারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করায় কর্তব্যরত ডাক্তারদের রোগীর চিকিৎসা প্রদানে বিলম্ব ও বিঘœ ঘটছে। এতে দূরদূরান্ত থেকে আসা শত শত রোগী লাইন ধরে অপেক্ষামাণ থাকতে হচ্ছে। এছাড়াও রোগীরা যখন ডাক্তারের দেয়া চিকিৎসাপত্র নিয়ে ওষুধ বিপণিতে ওষুধ কিনতে আসেন তখন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগী ও রোগীর লোকজনের হাত থেকে চিকিৎসাপত্র নিয়ে ডাক্তার কোন কোম্পানির ওষুধ লিখছেন তা দেখার কারণে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকটি ওষুধ বিপণির মালিকও এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। এ ব্যাপারে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক ডাঃ মঞ্জুরা রহমানের সাথে যোগাযোগ জানতে চাইলে তিনি জানান, হাসপাতালে মস্তান সিন্ডিকেট থাকলে আমার একার পক্ষে তা ভাঙ্গা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্যকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের শনি ও মঙ্গলবার হাসপাতালে প্রবেশের জন্য সরকারীভাবে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের ক্যাম্পাসে যদি কেউ মাদকের ব্যবসা বা অসামাজিক কাজে জড়িত থাকে তাদের দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের।
×