ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিনিয়োগকারীদের আস্থাও বেড়েছে

এ সরকারের মেয়াদে বিনিয়োগ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

এ সরকারের মেয়াদে বিনিয়োগ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ

এম শাহজাহান ॥ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের মেয়াদে দেশে সাড়ে ৪ গুণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের ধারাবাহিকতা এবং বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে থাকায় আস্থা বেড়েছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের। জঙ্গীবাদ, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নসহ বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়নে ফার্স্ট ট্র্যাকখ্যাত দশ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। শিল্পের চাকা সচল রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বিদ্যুত উৎপাদনে। এছাড়া ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে দেশে বিনিয়োগ বাড়ছে। অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক, প্রকৃত এবং রাজস্ব খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থমন্ত্রণালয় বলছে, এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত শাসনামল ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ হয়েছে। গত ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১ লাখ ২৬ হাজার ১০৩ কোটি টাকা হতে বিনিয়োগ সাড়ে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই বিনিয়োগ অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ প্রবাহের পরিমাণ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৭৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে ২ হাজার ৫ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। সরাসারি বিদেশী বিনিয়োগের মজুদ ২০০৬ সালের জুন মাসে ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার ২০১৬ সালের জুন শেষে ১৩ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়ায় বেড়েছে রফতানি। সাড়ে ১০ বিলিয়ন ডলার হতে গত অর্থবছর শেষে ৩৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার গত অর্থবছরে ৭ দশমিক ১১ শতাংশে উন্নীত হয় যা বিগত ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এবারই প্রথম উন্নয়ন মেলার আয়োজন করা হয়েছে। উন্নয়ন মেলার অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং সংস্থার মতো অর্থ মন্ত্রণালয়ও অংশগ্রহণ করে। এই মেলায় অংশগ্রহণ এবং যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেল, দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে রয়েছে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় হিসেব-নিকেশ করে দেখেছে-বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর অর্থনীতির প্রাণ আর্থ-সামাজিক, প্রকৃতখাত এবং রাজস্ব খাতে ভাল করছে বাংলাদেশ। অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় দ্রুত বিনিয়োগ বাড়ছে। দারিদ্র্যের হার ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে, বেড়েছে খাদ্য উৎপাদন এবং আয় বাড়ায় বাজেটের আকার ২০০৫-৬ অর্থবছরের ৬৪ হাজার ৩৮২ কোটি থেকে প্রায় সাড়ে ৫ গুণ বেড়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২১ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এখন কাজ করা হচ্ছে। এদিকে, বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হবে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়ন এবং ওই সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে যেতে হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়াতেই হবে। আর এজন্য বাড়াতে হবে মাথাপিছু আয়। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিনিয়োগ। কারণ বিনিয়োগ হলেই কর্মসংস্থানের পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। বাড়বে ক্রয় ক্ষমতা। এই বাস্তবতায় দেশে সরকারী-বেসরকারী খাতের বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানের কৌশল নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়াতে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিকভাবে দুটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে-কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ গড়ে তোলা এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে সহায়তা প্রদান করে কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানো। এ লক্ষ্যে চলতি বাজেটে মানব সম্পদ উন্নয়নের উপর অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার পাশাপাশি শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রাথমিকভাবে বিদ্যমান বিনিয়োগের দক্ষতা বাড়ানো গেলেও উৎপাদন ও সেবার মান প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যাংক সুদ কমানো এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ায় বিনিয়োগের খরা কেটে গেছে। এছাড়া সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় উদ্যোক্তাদের আস্থাহীনতার সঙ্কট দূর হয়েছে।
×