ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ণাঢ্য পৌষসংক্রান্তি

লোক আচারে পৌষ বিদায়, গ্রামীণ ঐতিহ্যের উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

লোক আচারে পৌষ বিদায়, গ্রামীণ ঐতিহ্যের উৎসব

মোরসালিন মিজান ॥ পৌষের রোদমাখা দিন গত হলো। মাসের শেষদিন শুক্রবার ছিল পৌষসংক্রান্তি। বহুকাল ধরে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব উদযাপন করে আসছে বাঙালী। সে ধারাবাহিকতায় এবারও আনন্দঘন আয়োজন ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বাদ যায়নি ঢাকা। নানা লোক আচারে পৌষকে বিদায় জানিয়েছেন রাজধানীবাসী। পৌষসংক্রান্তিকে পৌষপার্বণ বা মকর সংক্রান্তিও বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। মকরসংক্রান্তি বলতে নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের ক্ষণটিকে ইঙ্গিত করা হয়। পৌষসংক্রান্তির পৌষপার্বণ মূলত পিঠা খাওয়ার উৎসব। এ সময় ঘরে ঘরে পিঠাপুলি হয়। বহুকাল ধরে চলা আচার অনুষ্ঠানেও পিঠাপুলির ব্যবস্থা থাকে। গ্রীষ্মকালে পিঠাপুলি অত রুচিকর হয় না। এ কারণে শীতকালে বেশি আয়োজন করা হয়। বছরের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত পিঠা উৎসবের মধ্যে পৌষসংক্রান্তি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে। লোকজ সংস্কৃতির গবেষকদের মতে, মকরসংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তির দিন প্রাচীন হিন্দুরা পিতৃপুরুষ ও বাস্তু দেবতার জন্য তিল কিংবা খেজুড়ের গুড় দিয়ে তিলুয়া তৈরি করতেন। নতুন চালের তৈরি পিঠার অর্ঘ্য দান করতেন। এ কারণে পৌষসংক্রান্তির অপর নাম তিলুয়াসংক্রান্তি বা পিঠাসংক্রান্তি। পৌষসংক্রান্তির দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে বাস্তুপূজা অনুষ্ঠিত হয়। চলে গৃহদেবতার নবান্নের অনুষ্ঠান। একই দিন দধি সংক্রান্তির ব্রতের শুরু হয়। এ ব্রতে প্রতি সংক্রান্তিতে লক্ষ্মীনারায়ণকে দধি দ্বারা স্নান করিয়ে ব্রাহ্মণকে দধি ও ভোজদান করা হয়। এ দিন বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু-কিশোররা বাস্তুর গান, কুলাইর ছড়া, হোলবোলের গান, বাঘাইর বয়াত গেয়ে চাল ও অর্থ সংগ্রহ করে পৌষপালা বনভোজন ইত্যাদির আয়োজন করে। আরও অসংখ্য উৎসব পার্বণের মতো এটিও ক্রমে বাঙালীর উৎসবে পরিণত হয়। অসাম্প্রদায়িক আয়োজনে যোগ দেন সব ধর্মের মানুষ। পৌষসংক্রান্তি সম্পর্কে লেখক যতীন সরকারের বলাটি এ রকমÑ কারও কারও মনে হতে পারে পৌষসংক্রান্তি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বৈ কিছু নয়। বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আবহমান কাল থেকেই বাংলায় ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ নীতি। ফলে পৌষসংক্রান্তিও বাঙালীর প্রতি ঘরে উদযাপিত হয়ে আসছে। বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় এবারও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছিল পৌষসংক্রান্তির উৎসব অনুষ্ঠান। বাদ যায়নি রাজধানী শহর। এদিন লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল এ্যান্ড কলেজ মাঠে পৌষসংক্রান্তির মেলার আয়োজন করে সঙ্গীত সংগঠন সুরের ধারা। মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। দিনব্যাপী আয়োজনে বাঙালী সংস্কৃতির চমৎকার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। পছন্দের কেনাকাটা পিঠাপুলির আয়োজনÑ সবই ছিল উপভোগ্য। এদিকে, পৌষসংক্রান্তির সবচেয়ে আনন্দঘন ও আকর্ষণীয় আয়োজন থাকে পুরান ঢাকায়। বহুকাল ধরে মহাধুমধামের সঙ্গে উৎসবটি উদযাপন করে আসছেন স্থানীয়রা। ছেলে-বুড়ো এমনকি নারীরা বাসার ছাদে অবস্থান নেন। তারপর দিনভর চলে ঘুড়ি ওড়ানো, ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা। অবশ্য গে-ারিয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও সংস্কৃতিকর্মী মানজার চৌধুরী সুইট জানান, পঞ্জিকার হিসাব নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তির উৎসবটি আজ অনুষ্ঠিত হবে। পৌষসংক্রান্তি ও সাক্রাইন দুটি উৎসব এখন একই সঙ্গে উদযাপিত হয় বলে জানান তিনি।
×