ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কাল আখেরি মোনাজাত

এজতেমায় জুমার জামাতে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

এজতেমায় জুমার জামাতে লাখো মুসল্লির নামাজ আদায়

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর এজতেমা মাঠ থেকে ॥ জঙ্গী তৎপরতাকে বিবেচনায় রেখে নজিরবিহীন পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে তবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। নানা বিড়ম্বনাকে উপেক্ষা করে বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শুক্রবারেও এজতেমা ময়দানে ছুটে আসেন। এদিন জুমা বার হওয়ায় লাখো মুসল্লির ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ তীরে। নামাজের আগেই এজতেমার পুরো প্যান্ডেল ও ময়দান কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা অংশ নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের সড়ক ও গলির ওপরে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার প্রথম দিনে বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব এজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এজতেমার শুরুর দিন শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নিতে এজতেমাস্থলে মুসল্লিদের ঢল নামে। এদিন সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন টঙ্গী এজতেমা ময়দানে। এদিকে আজ শনিবার বাদ আসর এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। কাল (রবিবার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা শেষ হবে। এবারের বিশ^ এজতেমার প্রথম পর্বে লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে বিশ্বের প্রায় ৯০টি দেশের প্রায় ৭ হাজার মুসল্লি উপস্থিত হয়েছেন। শুক্রবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ওবায়দুল খোরশেদ আমবয়ানের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব এজতেমার মূল কাজ শুরু করেন। এ বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুরব্বি মাওলানা মোঃ জাকির হোসেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে যথারীতি ইমান, আমল, আখলাক ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে এজতেমার প্রথম পর্বের ৩ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৫ জানুয়ারি রবিবার জোহরের নামাযের পূর্বে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। এর ৪ দিন পর আগামী ২০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা। আগামী ১৫ জানুয়ারি রবিবার জোহরের নামাজের পূর্বে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। ২০ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা। এজতেমা ময়দান এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবারই প্রথম বিশ্ব এজতেমার চার পাশ এবং বাহিরে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে। ইতোমধ্যে লাখো মুসল্লি সেখানে সমবেত হয়েছেন। বিভিন্ন জেলার যুবক, কিশোর, বায়োজ্যেষ্ঠ সব শ্রেণীর মানুষ এজতেমায় এসেছেন। অনেকে ৪০ দিন (এক চিল্লা) বা ১২০ দিন (তিন চিল্লা) ইসলামের দাওয়াত শেষ করে এজতেমায় শরিক হচ্ছেন। আবার কেউ কেউ এজতেমা শেষে ইসলামের দাওয়াত দিতে ৪০ দিন (এক চিল্লা) বা ১২০ দিনের জন্য (তিন চিল্লা) বেরিয়ে পড়বেন। ধনী, দরিদ্র সবাই এখানে এক সামিয়ানার নিচে একসঙ্গে অবস্থান করছেন। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ব্যবহার্য দ্রব্যাদি কাঁধে বহন করে মাঠে আসছেন। বৃহত্তম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত ॥ বিশ্ব এজতেমার শুরুর দিন জুমা বার হওয়ায় এজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ যাবতকালের বৃহত্তম জুমার জামাত। দুপুর ১টা ৪৬ মিনিটে জুমার জামাত শুরু হয়। ওই নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের পেশ ইমাম পেশ ইমাম মাওলানা মোঃ ফারুক হোসেন। এজতেমায় যোগদানকারী মুসল্লি ছাড়াও জুমার নামাজে অংশ নিতে ঢাকা-গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকার লাখ লাখ মুসল্লি এজতেমাস্থলে হাজির হন। ভোর থেকেই রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে এজতেমা মাঠের দিকে মানুষের ঢল নামে। দুপুর ১২টার দিকে এজতেমা মাঠ উপচে আশপাশের খোলা জায়গাসহ সবস্থান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠে স্থান না পেয়ে মুসল্লিরা মহাসড়ক ও অলি-গলিসহ যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন। ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নামাজে ২০ লক্ষাধিক মুসল্লি শরীক হন বলে গোয়েন্দা সূত্র জানায়। প্রথম দিনে যারা বয়ান করলেন ॥ ইমান-আমলের ওপর প্রথম দিন বাদ ফজর ভারতের মাওলানা ওবায়দুল খোরশেদ। বাংলায় তর্জমা করেন বাংলাদেশের মুরব্বি মাওলানা মোঃ জাকির হোসেন। জুমা নামাজের পর বয়ান করেন দিল্লীর মাওলানা ওয়াসিকুর রহমান, বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আহসান ও বাদ মাগরিব মাওলানা শওকত। বিশ্ব এজতেমার আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রথম দিনের বয়ান ॥ বয়ানে বলা হয় দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান স্থান হলো মসজিদ আর সবচেয়ে কম দামী জায়গা হলো বাজার। যারা মসজিদে নামাজ আদায় করেন, তাদের জন্য বেহেশতে মহল তৈরি হয়। যে মসজিদকে ভালবাসে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাকে ভালবাসেন। এ দুনিয়ায় যিনি একটি মসজিদ বানানো, আল্লাহ তার জন্য পরপারে একটি মহল বানাবেন। জুমার দিন, একটি পবিত্র দিন। সবচেয়ে উত্তম দিন হলো জুমার দিন। এটি হলো সবচেয়ে বড় ও সম্মানি দিন। এটি দু’ঈদের চেয়েও ফজিলতপূর্ণ। এদিনে হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়। এদিনই দুনিয়া ধ্বংস হবে। এদিনে আল্লাহ্র কাছে যা চাইবে, আল্লাহ তা তাকে দেবেন। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে গোসল-অজু করে মসজিদের উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর থেকে তার নেকী লেখা হয়। আমরা যা করব আল্লাহকে রাজি করার জন্য করব। আল্লাহ পাকের হুকুম মতো আমরা যেন সারা জীবন চলতে পারি সে চেষ্টা করতে হবে। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে ও সারা দুনিয়ায় মানুষের মাঝে দ্বীন কায়েম করার জন্য ছড়িয়ে পড়তে হবে। বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥ বিশ্ব এজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তবলীগ মারকাজের ১৫-২০ জন শূরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করবেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কী ও ফরাসী ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে। বিদেশী মেহমানদের জন্য মূল বয়ান মঞ্চের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে হোগলা পাটিতে বসেন। বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বী মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শুনান। জুমার নামাজে ভিআইপিদের অংশগ্রহণ ॥ এজতেমার প্রথম দিনে জুমার নামাজে অংশ নেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা ॥ টঙ্গী হাসপাতাল ও বিভিন্ন মেডিক্যাল ক্যাম্পে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় ২ হাজার জন মুসল্লি চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে এবং প্রায় অর্ধশত জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থদের অধিকাংশই ঠা-া, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের ও হৃদরোগের রোগী বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আলী হায়দার খান। এদিকে সরকারী হাসপাতাল ছাড়াও মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দিতে এজতেমা ময়দানে প্রায় অর্ধশত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বিনা মূল্যে কাজ করছে। ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা ॥ শুক্রবার সকাল থেকে এজতেমা ময়দান সংলগ্ন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে মুসল্লিদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য ময়দানের আশপাশে ও মন্নু নগর এলাকায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি পরিষদ, র‌্যাব’র ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস, টঙ্গী ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, হামদর্দ ওয়াক্ফ, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিকেলস, ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক কলেজ, ইসলামী ফাউন্ডেশনের ইসলামী মিশন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনেরসহ বিভিন্ন ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এলোপ্যাথি ছাড়াও মুসল্লিরা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিতে তাদের ক্যাম্পে ভিড় করেছেন। অসুস্থদের অধিকাংশই ঠা-া, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী। এজতেমা উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিভাগের ছুটি বাতিল ॥ এজতেমা উপলক্ষে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এজতেমায় দায়িত্ব পালনকারী সকল চিকিৎসক ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানান গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ আলী হায়দার খান। তিনি আরও জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মেডিক্যাল অফিসারদের তালিকা ও ডিউটি রোস্টার করা হয়েছে। তিন শিফ্টে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ ছাড়াও মেডিক্যাল অফিসারগণ এজতেমা ময়দানে ডিউটি করছেন। এছাড়াও টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে আরও শয্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ হাসপাতালের উদ্যোগে মুন্ন গেট, বাটা গেট ও এটলাস হোন্ডা রোডে মুসল্লিদের তাৎক্ষণিক সেবা দেয়ার জন্য অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। মুসল্লি রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক এ্যা¤ু^লেন্স মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া এজতেমা মাঠের উত্তরে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে প্রায় অর্ধশত ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এজতেমায় অসুস্থদের অধিকাংশই ঠা-া, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী। হোটেলে খাবারের মান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিস্ট্রেটসহ সেনিটেশন টিম কাজ করছে। প্রথম দিনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৭ হাজার বিদেশী মুসল্লি ॥ এজতেমার প্রথম পর্বে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এজতেমা মাঠে বিশ্বের অন্তত একশ’টি দেশের প্রায় ৭ হাজার জন বিদেশী মুসল্লির আগমন ঘটেছে। এবারের এজতেমায় বিশ্বের অন্তত শতাধিক দেশ থেকে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লিদের আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন ইজতেমার মুরব্বি মাওলানা গিয়াস উদ্দিন। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তানসহ এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ ৮৭টি দেশের প্রায় ৬ হাজার ৮শ’ ৮৭ জন মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। আগামী দুই দিনে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে এজতেমা ময়দানে আগত এসব বিদেশী মেহমানদের জন্য ট্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যৌতুকবিহীন বিয়ে শনিবার ॥ ইসলামিক শরিয়া অনুযায়ী আজ (শনিবার) বাদ আসর যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। সকাল থেকে ওইসব বিয়ের জন্য বয়ান মঞ্চের কক্ষেই বর-কনের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। এজতেমার মুরব্বিদের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৪৬ সালে প্রথম কাকরাইল মসজিদে এজতেমার আয়োজন শুরু করা হয়। বিশ্ব এজতেমায় আগত ৬ মুসল্লির মৃত্যু ॥ এবারের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশ্ব এজতেমায় প্রথম পর্বে যোগ দিতে এসে হৃদযন্ত্র ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শুক্রবার সকালে আরও এক মুসল্লি মারা গেছেন। তার নাম বাবুল মিয়া (৬০)। তিনি ফেনীর দাগনভূইয়া উপজেলার মাছিমপুর এলাকার আব্দুর রশিদের ছেলে। এ নিয়ে বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে আসা ছয় মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে মানিকগঞ্জে সাহেব আলী (৩৫), বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের নান্দাইলের মারুয়া গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে মোঃ ফজলুল হক (৫৬), বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা সদরের খেজুরডাঙ্গা এলাকার মৃত আব্দুস সোবাহানের ছেলে আঃ আব্দুস সাত্তার (৬০) এবং সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার নিজবন্নী এলাকায় মোঃ জানু ফকিরের (৭০) এবং বুধবার রাতে মারা গেছেন কক্সবাজারের মোঃ হোসেন আলী (৬৫)। এজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এজতেমায় বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস ॥ এজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে এজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে বিআরটিসির শতাধিক স্পেশাল বাস সার্ভিস চলাচল করছে। বিআরটিসির এসব বাস আব্দুল্লাহপুর-মতিঝিল ভায়া এজতেমাস্থল, শিববাড়ী-মতিঝিল ভায়া এজতেমাস্থল, টঙ্গী-মতিঝিল ভায়া এজতেমাস্থল, গাজীপুর-চৌরাস্তা, মতিঝিল-ভায়া এজতেমাস্থল, গাবতলী-গাজীপুর ভায়া এজতেমাস্থল, গাবতলী-মহাখালী ভায়া এজতেমাস্থল, গাজীপুর-মতিঝিল ভায়া এজতেমাস্থল, মতিঝিল-বাইপাল ভায়া এজতেমাস্থল বিআরটিসির বাস সার্ভিস চলাচল করছে। অপরদিকে বিশ্ব এজতেমায় আগত মুসল্লিদের যাতায়াতে সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস পরিচালনা করছে। এছাড়াও সকল আন্তঃনগর, মেইল এক্সপ্রেস ও লোকাল ট্রেনে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দুই ধাপের এজতেমার প্রথম ধাপের শুক্রবার ঢাকা-টঙ্গী-ঢাকা দুটি জুমা স্পেশাল, আখেরি মোনাজাতের আগের দু’দিন জামালপুর ও আখাউড়া থেকে দুটি করে চারটি অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করছে। বিশ^ এজতেমার মুরব্বি মাওলানা গিয়াস উদ্দীন জানান, দেশের ৬৪ জেলাকে প্রথমবারের মতো গত বছর হতে দু’বছরে চার ভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব এজতেমা। গত বছর ৩২টি জেলা নিয়ে এজতেমার দুই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিরা দু’পর্বে এ বছর অংশ নিচ্ছে। এ বছরের প্রথম পর্বে অংশ নেবে ঢাকার একাংশসহ ১৭টি জেলার তবলীগ অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবে ১৫টি জেলাসহ ঢাকার বাকি অংশের তবলীগ অনুসারীরা। তবে বিদেশী মুসল্লিরা প্রতিবছর বিশ্ব এজতেমায় অংশ নিতে পারবে। মুসল্লিদের স্থান সংকূলান না হওয়ায় এবং নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বের এজতেমা শুরু পর ২০১৫ সালে আবারও এ পরিবর্তন আনা হয়। বিশ্ব এজতেমার শীর্ষ পর্যায়ের মুরব্বিরা এজতেমার এ তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
×