ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে করাতে বাধ্য করা হয়

সিলেট যক্ষ্মা হাসপাতালে রোগী প্রতারিত

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

সিলেট যক্ষ্মা হাসপাতালে রোগী প্রতারিত

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সিলেট যক্ষ্মা হাসপাতালে আগত রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। হাসপাতালে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ রোগীকে বাইরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে পরীক্ষা করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে রোগীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সে সুবাধে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের চলছে রমরমা কমিশন বাণিজ্য। জানা যায়, নগরীর শাহী ঈদগাহ এলাকায় ১৮৫২ সালে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট যক্ষ্মাহাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সিলেট বিভাগের যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে আসছেন। সিলেট যক্ষ্মা হাসপাতালে আলাদা ক্লিনিক ইউনিট রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্লিনিকে একজন রোগীকে পরীক্ষা করে অবস্থা বুঝে পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে রেফার করা হয়। দীর্ঘ সময়ে সিলেট যক্ষ্মা হাসপাতালে আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী সংযোজন করা হয়েছে। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর রোগ নির্ণয়ের জন্য যাবতীয় সুবিধা এখন হাসপাতালে বিদ্যমান আছে। হাসপাতালে একজন সিনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে তিন মেডিক্যাল অফিসার রয়েছেন। ক্লিনিকে এক মেডিক্যাল অফিসার ছাড়াও এক জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ রয়েছে। বর্তমানে এক মেডিক্যাল অফিসার দায়িত্বরত আছেন। রোগীরা প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই শ’ টাকার বিনিময়ে হাসপাতালে থাকা খাওয়ার সুবিধা পাচ্ছেন। ব্যয়বহুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে একজন রোগীকে হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে সব ওষুধ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এখানে দক্ষ টেকনিশিয়ানরা রয়েছেন। হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কাশি পরীক্ষা, বুকের পরীক্ষা করার সুবিধা রয়েছে। এতে ফি দিতে হয় ৭০/১০০ টাকা। ডাক্তারদের মতে যক্ষ্মা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কাশি ও বুকের পরীক্ষাই যথেষ্ট। এতে রোগ নির্ণয় না হলে জিন এক্সপাটের ব্যবস্থা নেয়া হয়। তাতে এই রোগ আর লুকিয়ে থাকতে পারে না। সিলেট টিবি হাসপাতালে জিন এক্সপাটের ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট টিবি হাসপাতালসহ বাংলাদেশে ৪টি স্থানে এই ব্যবস্থা রয়েছে। নামমাত্র টাকায় টিবি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধা থাকা সত্ত্বেও একজন রোগীকে অধিক মূল্য দিয়ে বাইরে গিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়। সিলেট টিবি ক্লিনিকে আগত অধিকাংশ রোগীকে টিবি ক্লিনিক অথবা হাসপাতালে পরীক্ষা না করে পছন্দ মাফিক ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়। আর এজন্য একজন রোগীকে ৮শ’ এক হাজার টাকা গুনতে হয়। অভিযোগ রয়েছে রোগী প্রতি ৩০ শতাংশ কমিশন পেয়ে থাকেন ডাক্তাররা। গত ৩ মাসে একজন রোগীও টিবি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা পত্র নিয়ে টিবি হাসপাতলে ভর্তি হয়নি। অতীতের রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা গেছে আগত রোগীদের অন্তত এক শ’ জনের মধ্যে সিরিয়াস পর্যায়ের দুয়েক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এক্ষেত্রে যথাযথভাবে রোগ নির্ণয়ের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে সিলেট টিবি হাসপাতলে প্রায় ৩০ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর তাদের সবাই গত বছরের অক্টোবরের আগে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমান মেডিক্যাল অফিসার ক্লিনিকে যোগদানের পর কোন রোগীই হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। আগত সবাইকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে চিকিৎসা পত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি টিবি বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। সে কারণে রোগীরা সুচিকিৎসা পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে টিবি ক্লিনিকে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার লোপা রানী দত্ত জানান, এখানে এনালগ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হয়। তাই উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে রোগীকে ক্ষেত্র বিশেষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরীক্ষার পরমর্শ দেয়া হয়। সিলেট টিবি হাসপাতালে আগত অধিকাংশ রোগীই গ্রাম্য এবং গরিব শ্রেণীর লোক। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয় মেঠাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। নরসিংদীতে ক্লিনিক ব্যবসা জমজমাট নিজস্ব সংবাদদাতা, নরসিংদী থেকে জানান, নরসিংদীতে স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মকানুন সম্পূর্ণ অমান্য করে প্যাথলজি ও এক্সরে ক্লিনিক জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও প্যাথলজিস্টবিহীন এসব ক্লিনিকের চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন থাকলেও লোকজন নিরুপায় হয়েই তাদের শরণাপন্ন হচ্ছে। প্যাথলজি ক্লিনিকের জন্য মেডিক্যাল অফিসার, অভিজ্ঞ প্যাথলজিস্ট, প্যাথলজি টেকনিশিয়ান, রাসায়নিক সংরক্ষণাগার, যাবতীয় যন্ত্রপাতি এবং এক্সরে ক্লিনিকের জন্য ১৫ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের দেয়ালসহ স্বাস্থ্য দফতরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্র থাকা বাধ্যতামূলক হলেও নরসিংদীর অনেক ক্লিনিক তা অমান্য করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্লিনিকে দু’জন টেকনিশিয়ানের কাজ একজন করছে। কেউ কেউ টেকনিশিয়ানদের পেছনে মাত্র কয়েক দিন কাজ করে অন্য ক্লিনিকে চাকরি নিয়ে চলে যায়। এখানে যারা তাদের চাকরি দেন তারা কথিত এক্সরে টেকনিশিয়ান হিসেবে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের সনদপত্রের প্রয়োজন মনে করেন না। কারণ তারা অল্প বেতনে পেয়ে যাচ্ছেন একজন টেকনিশিয়ান ও রেডিওগ্রাফার। একই ব্যক্তির কোন পরীক্ষা যদি এখানকার একাধিক ক্লিনিকে করা হয় তাহলে রিপোর্টে পার্থক্য দেখা যায়। রোগীরা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশায় ভোগেন। জেলার কতিপয় ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসায় মেতে উঠেছেন। তাছাড়া ঢাকা থেকে আগত কিছুসংখ্যক অর্থলোভী চিকিৎসক পেশাগত দায়িত্ব ভুলে গিয়ে ক্লিনিকে পুঁজি বিনিযোগের মাধ্যমে অংশীদারিত্ব নিয়ে চিকিৎসার নামে জেলাবাসীকে হয়রানি করছেন। জানা গেছে, নরসিংদীতে কর্মরত ডাক্তাররা রক্ত পরীক্ষা, এক্সরে ও ইসিজি বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। অতি কষ্টে উপার্জিত অর্থ নিয়ে যারা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাল চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন চিকিৎসরা কমিশনের লোভে নির্ধারিত ফি প্রদানের পরও তাদের পাঠান ওইসব ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য। সরকারী হাসপাতালের অনেক ডাক্তার হাসপাতালে রোগী আসলে তাদের প্রাইভেট ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া ডাক্তারদের নিযুক্ত দালালরা রোগী নিয়ে তাদের চুক্তিবদ্ধ ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন। নরসিংদী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত ডাক্তার, নার্স, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, কর্মচারী সকলেরই প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে আত্মীয়-স্বজন থাকায় কারণে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বছরের পর বছর এ জেলায় কর্মরত থাকলেও তাদের বদলি করা হয় না। দালালদের সহযোগিতা ছাড়া সাধারণ রোগীরা ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করে চিকিৎসা নিতে পারে না। বাধ্য হয়ে দালালদের শরণাপন্ন হতে হয় নিরীহ রোগীদের। এসব বিষয়ে নরসিংদী সিভিল সার্জন সুলতানা রাজিয়া জানান, দালালদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে পত্রের মাধ্যামে অবহিত করা হয়েছে। অপর দিকে স্বাস্থ্য সেবা ক্লিনিক নির্ভর হয়ে পড়ায় দুরদুরান্ত থেকে আসা সহজ সরল রোগীরা দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
×