ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শহুরে কুকুর ওদের তাড়ায় না, উল্টো চুপ হয়ে যায়

বগুড়া শহরে রাতভর হুক্কাহুয়া উৎপাত, এ কেমন শিয়াল!

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

বগুড়া শহরে রাতভর হুক্কাহুয়া উৎপাত, এ কেমন শিয়াল!

সমুদ্র হক ॥ বনের শিয়াল ঢুকে পড়েছে নগরীতে। সন্ধ্যার পর দল বেঁধে বের হয়। হুক্কাহুয়া কোরাসে শুরু করে জ্বালাতন। দেয়াল টপকে ঢুকে পড়ে কোন বাড়িতে। সন্ধান করে হাঁস-মুরগির। নগরীর কেউ কি তা পালে! ডাস্টবিনের আবর্জনা নেড়েচেড়ে ছড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, শিয়াল দেখলে কিংবা হুক্কাহুয়া শুনলেই আগে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তাড়া দিত। এখন আর তা করে না। শিয়াল দেখেও চুপ থাকে। রাতভর শিয়ালের ডাকে লোকজন ঠিকমতো ঘুমোতে পারে না। বগুড়া পৌর এলাকায় শিয়ালের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে নগরবাসী। প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীববৈচিত্র্য বোধ করি এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। নগরীর উত্তর বৃন্দাবনপাড়া, আটাপাড়া, জয়পুরপাড়া, ফুলবাড়ি, উত্তর কাটনাপাড়া, সুলতানগঞ্জপাড়া, বনানী ও উপশহর এলাকায় সন্ধ্যার পরই বুনো শিয়ালের দল অভিযানে নামে। রাত যত গভীর হয় ওরা নগরীর রাজপথে অবাধে ছোটাছুটি শুরু করে। মোটরসাইকেল ও কারের পিছু নেয়। অনেক সময় মোটরসাইকেলের আরোহী যার পর নেই বিপাকে পড়ে। মোটরবাইক যদি সামান্য ধীরগতির হয় লাফিয়ে আরোহীর কাঁধে ওঠে। পুলিশের পেট্রোল গাড়িকেও এরা ভয় পায় না। তখন রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে। ওসব এলাকার লোকজন রাতে সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করে। মধ্য রাতের পর লোকজন সাধারণত ঘর থেকে বের হয় না। জরুরী কোন কাজে কেউ ঘর থেকে বের হলে ধূর্ত শিয়াল তার চারপাশে ঘুরে ঘুরে ভয় দেখায়। অবশ্য জরুরী রোগীদের বিরক্ত করে না। শিয়ালের এমন উৎপাতে কুকুর অজ্ঞাত কারণে চুপটি মেরে থাকে। বিষয়টি একেবারে অস্বাভাবিক। লোকজন বলাবলি করে আগে কুকুরে দাবড়ে শিয়াল তাড়াতো, এখন শিয়ালের দাবাড়ে কুকুর পালায়। শিববাটি এলাকার কয়েকজন বললেন, ফুলবাড়ি রাজাপুরে গড় ও ঢিবি এলাকা থেকে সন্ধ্যার পর শিববাটি, কালিতলার ভেতরের এলাকায় দল বেঁধে ছুটে আসে শিয়াল। কোন শেয়ালের দল কোথায় ঢুকে পড়বে তার একটা রিহার্সাল দিয়ে রাত দশটার পর পুরো এলাকা দখলে নেয়। উত্তর কাটনারপাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি আব্দুর রহিম বগ্রা বললেন, এই এলাকা ছাড়াও আশপাশের সুলতানগঞ্জপাড়া ও নতুন গড়ে ওঠা উপশহরে শিয়ালের অভিযান সবচেয়ে বেশি। উপশহরের অনেক একতলা বাড়ির দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে অত্যাচার শুরু করে। প্রথমে খোঁজে হাঁস মুরগি। না পেলে ঘরের দরজায় আঘাত করে কেটে পড়ে। এরা ডাস্টবিনের আবর্জনা তছনছ করে। লোকজন বললেন শিয়ালের এত জ্বালাতন আগে ছিল না। বাইরে থেকে যারা বগুড়ায় এসে শহরতলির কোন রেস্ট হাউসে ওঠেন রাতে তারা বুঝতে পারেন এ কোথায় এলেন। একটি বেসরকারী সংস্থার কয়েক কর্মকর্তা নিরিবিলি অবস্থানের জন্য ওঠেন আটাপাড়া এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানের রেস্ট হাউসে। সন্ধ্যার পর অতিথিরা মুখোমুখি হন শিয়ালের। কোন রকমে রাত পাড়ি দিয়ে সকালে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ বলে কেটে পড়েন অতিথিরা। বনানী বিটিসিএলের মাইক্রোওয়েভ টাওয়ার, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আশপাশে শিয়ালের অবাধ বিচরণ। এই শিয়ালরা দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকে শহরের বাইরের ঝোপগাড়ি, ধরমপুর, রাজাপুর ও ভীমের জাঙ্গালের ভেতরে গোরস্তানে। এ বিষয়ে বগুড়ার পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, কুকুর নিধন কর্মসূচী পালিত হয়। শিয়াল নিধনের কোন কর্মসূচী নেই। মানুষকে শিয়াল-কুকুরে কামড়ালে এ্যান্টি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন (এআরভি) দেয়া হয় জেনারেল হাসপাতালে।
×