ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

লাইসেন্স আছে ৩০টির চলাচল করে তিন শ’

তিন শ’ অবৈধ স্পিডবোট

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১০ জানুয়ারি ২০১৭

তিন শ’ অবৈধ স্পিডবোট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ নৌপথের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশাল-ভোলা রুটে প্রতিদিন তিন শতাধিক স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। অবৈধ এসব নৌযান পাল্লা দিয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ফলে যাত্রী ও জেলেদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে এসব নৌযান থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বরিশাল-ভোলা নৌপথে তিন শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। বরিশাল নগরীর স্টিমার ঘাট ও লাহারহাট থেকে এসব স্পিডবোট ভোলা খেয়াঘাট ও লাহারহাট পর্যন্ত চলাচল করে। স্পিডবোটগুলোর সিংহভাগই পুরনো, ফাটা ও জোড়াতালি দিয়া এসব অবৈধ নৌযান চলাচলের সময় এগুলোতে পানি ওঠে, মাঝে মধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে আগুনও ধরে যায়। এসব যানে নেই লাইফ জ্যাকেট। দুই একটিতে থাকলেও তা ব্যবহার অনুপযোগী। এসব নিয়ে অভিযোগ করলে চালকদের দুর্ব্যবহারের শিকার হয় যাত্রীরা। বোটের ইঞ্জিনে ত্রুটি কিংবা চরে তুলে দিয়ে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। যে কারণে ভয়েও এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করে না যাত্রীরা। ভোলার ভেদুরিয়া থেকে লাহারহাট পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে জনপ্রতি যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। একেকটি স্পিডবোটে ১২ থেকে ১৫ যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। বরিশাল নগরী থেকে সরাসরি ভোলা পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের পথে জনপ্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। বোট রিজার্ভ করে গেলে বরিশাল থেকে ভোলা পর্যন্ত তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রতিদিনই ১০ থেকে ১২টি স্পিডবোট ভোরে রিজার্ভ করে চিকিৎসকরা যাতায়াত করে থাকে। গত ২৩ ডিসেম্বর ভোলা থেকে রিজার্ভ করে বরিশাল আসার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গোলাম সরোয়ার, তার স্ত্রী, মেয়ে ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রদীপ কুমার বণিক। তাদের স্পিডবোটের সঙ্গে অন্য একটি স্পিডবোটের সংঘর্ষ হয়। এ সময় দুটি স্পিডবোটই ভেঙ্গেচুরে পানিতে নিমজ্জিত হয়। দুর্ঘটনায় গোলাম সরোয়ারের স্ত্রী ও মেয়ে মারা যায়। আহত হন গোলাম সরোয়ার ও প্রদীপ কুমার বণিক। প্রতিমাসেই এ রুটে এমন দুর্ঘটনা অহরহ লেগে রয়েছে। সাধারণ মানুষ মরলেও কখনও কোন মামলা হয়নি। জানা গেছে, স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিনকে একটি বোটের জন্য প্রতিবার গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য ১২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হচ্ছে। এর বাইরে সভাপতি আলাউদ্দিন দৈনিক মোট চাঁদা তুলছেন ১৬ থেকে ২০ হাজার টাকা। তার ব্যক্তিগত স্পিডবোটের সংখ্যা ১৯। সভাপতির আয় প্রতিমাসে গড়ে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা। সভাপতি আলাউদ্দিন জানান, অফিস খরচ ও লাইনম্যানদের বেতনে ব্যয় হচ্ছে উত্তেলিত টাকা। দুর্ঘটনা এড়াতে বিকেল সাড়ে চারটার পরে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ। চিকিৎসকের স্ত্রী ও মেয়ের মৃত্যুর দুর্ঘটনাটি রাতে ঘটল কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই দুর্ঘটনার পরই এ নিয়ম চালু করা হয়েছে। জেলেরা জানায়, ভোলা-বরিশাল যাতায়াত পথে তিনটি নদী ও কয়েকটি খাল অতিক্রম করতে হয়। এসব নদী ও খালে কয়েক হাজার জেলে মাছ ধরে। স্পিডবোটগুলোর বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনায় জেলেদের মৃত্যু ও জাল নষ্ট হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএয়ের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সারাদেশে মাত্র ৩০ স্পিডবোটের লাইসেন্স রয়েছে। ভোলা-বরিশাল নৌপথে যাত্রীবাহী স্পিডবোট চলার অনুমতি নেই। নিয়ম অনুযায়ী স্পিডবোটে চার যাত্রী বহন করার কথা। এসব নিয়ম উপেক্ষা করে কীভাবে দিনরাত বেপরোয়া গতিতে ছুটছে এসব যান জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করার জন্য প্রতিবছরই কাজ করছে। নৌ-পরিবহন অধিদফতরের বরিশাল বিভাগের পরিদর্শক নুরুল করিম জানান, এসব অবৈধ নৌযান নিয়ন্ত্রণ করতে নৌ-পুলিশ, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন। কিন্তু সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ আওলাদ হোসেন বলেন, আমার বাড়ি ভোলায়। আমি নিজেই ভাড়া দিয়ে এসব বোটে যাতায়াত করি। স্পিডবোট মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের তো প্রশ্নই আসে না। স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অহিদুল ইসলাম জানান, গত মাসে দুর্ঘটনার পর জেলা প্রশাসক তাদের নিয়ে সভা করেছেন। সভায় তাদের স্পিডবোটর সনদপত্রের জন্য এক মাসের সময় বেঁধে দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তারা বৈধ কাগজপত্রের জন্য নৌপরিবহন অধিদফতরের কার্যালয়ে আবেদন করেছেন।
×