ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আজ তৃতীয় টি২০ খেলতে নামবে মাশরাফিবাহিনী, খেলা শুরু সকাল ৮টায়

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লড়াই বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম টেস্টের দলে বাংলাদেশ ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমান নেই। আছেন তাসকিন আহমেদ। ঠিক তেমনি আজ তৃতীয় ও সিরিজের শেষ টি২০তেও খেলছেন না মুস্তাফিজ। তাকে বিশ্রামে রাখা হচ্ছে। তবে খেলবেন দুটি টি২০তে একাদশের বাইরে থাকা পেসার তাসকিন আহমেদ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় শুরু হবে। ম্যাচটিতে হারলেই ওয়ানডের মতো টি২০ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। প্রথম দুই টি২০তে ৬ উইকেট ও ৪৭ রানে হেরে যে এক ম্যাচ হাতে থাকতেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তাই প্রশ্নও উঠছে, টি২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারবে বাংলাদেশ? ব্যবধান ৬-০ হওয়াও ঠেকাতে পারবে? তিন ওয়ানডে ও দুই টি২০তে হেরে এখন হারের ব্যবধান ৫-০ হয়েছে। যদি আজ হারে বাংলাদেশ, তাহলে ৬-০ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ দলের ওপেনার তামিম ইকবালের কাছে মনে হচ্ছে সম্ভব। তবে সেই পুরনো কথাই নতুন করে যেন বললেন তামিম। কী সেই কথা? তামিম জানিয়েছেন, ‘একা নয়, পুরো দলকেই ভাল খেলতে হবে।’ তার মানে যেটির আক্ষেপ ঝড়ছে। সেই আক্ষেপ কোনভাবেই শেষ হচ্ছে না। দলগত নৈপুণ্য মিলছে না। যে কারণে নিউজিল্যান্ড সফরে বারবার হারই হচ্ছে নিয়তি। তামিম বলেছেন, ‘আমি একা ভাল খেললে কি আর হবে? আসলে আমরা সবাই ভাল খেললেই দল জেতে। আমি চাই পুরো দল ভাল খেলুক। তাহলেই দেখবেন সাফল্য ধরা দেবে।’ কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরে দলগতভাবে খেলাও যাচ্ছে না। হারও হচ্ছে। বারবার সবার কণ্ঠে একই সুর মিলছে। সব ক্রিকেটারই বলছেন দলগত নৈপুণ্য দরকার। কিন্তু সেটি কোনভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য মিলছে। কিন্তু দলীয় নৈপুণ্য দেখা যাচ্ছে না। টানা তিন ওয়ানডে হারের পর তাই তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরেও গেছে বাংলাদেশ। ২-০ ব্যবধানে পিছিয়েও পড়েছে। প্রথম টি২০’র আগে সাব্বির রহমান রুম্মন বলেছিলেন, ‘আমরা দল হিসেবে পারফর্ম করতে চাই।’ এরআগে একই কথা বলেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও। দলের অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, ‘আমাদের এখন মনোযোগ দিতে হবে, সুযোগ তৈরি হলে তা যে কোনভাবে কাজে লাগানোর দিকে। সুযোগ হাতছাড়া হতে দেয়া যাবে না। ব্যক্তিগত কিছু পারফর্মেন্স হয়েছে। কিন্তু যেটা হলে দলের জন্য কার্যকর হতে পারত বা ওদের দলকে ভোগাতে পারত, তেমন পারফর্মেন্স হয়নি। যেটা হয়ত আমরা আমাদের ঘরের কন্ডিশনে করে আসছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি অবশ্যই আরও বড় কিছু আশাকরি।’ দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও বলেছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এখন দল হিসেবে পারফর্ম করা। আমরা বিশ্বাস করি আমরা যদি টিম পারফর্মেন্স দেখাতে পারি, দল হিসেবে খেলতে পারি তাহলে সাফল্য আসবে।’ সাকিব আল হাসান বলেছিলেন, ‘আমাদেরও সামর্থ্য আছে ভাল খেলার এবং জেতার। যেহেতু সংক্ষিপ্ত সংস্করণ, তাই ছন্দ ধরে রাখা জরুরী। কোন কারণে ছন্দ হারিয়ে বসলে আর রক্ষা নেই। সব সম্ভাবনা ও সুযোগ হাতছাড়া হবে। সবাই মিলে ভাল খেলেই জিততে হবে। জিততে হলে আমাদের সবাইকে মিলে ভাল খেলতে হবে। বাংলাদেশ যে খেলাগুলোতে জিতেছে সেগুলোয় ৫-৬ জন ভাল পারফর্ম করেছে। ভাল বল করেছে ২-৩ জন। আবার ২-৩ জন ব্যাটসম্যান লম্বা ইনিংস খেলেছে। জিততে হলে এভাবে সবাই মিলে পারফর্ম করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।’ শনিবার তামিমও তাই বললেন। কিন্তু হতাশার বিষয় কোনভাবেই তা মিলছে না। দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচেই যেমন বোলাররা ব্যর্থ হয়েছেন। নিউজিল্যান্ড ১৯৫ রান করে ফেলেছে। সেখানেই আসলে দল হেরে গেছে। এরপর ব্যাটসম্যানরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়বেন কি, ১৪৮ রানেই অলআউট হয়ে গেছে দল। সাব্বির রহমান রুম্মন (৪৮) ও সৌম্য সরকার (৩৯) ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যানই উজ্জ্বলতা ছড়াতে পারেননি। আর তাই নিয়তিতে আবারও হারই লেখা হয়েছে। ঠিক যেমনটি নিউজিল্যান্ডে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে ৩ উইকেটে হার দিয়ে শুরু হয়েছে। এরপর প্রথম ওয়ানডেতে ৭৭ রানে, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬৭ রানে ও তৃতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে হারের পর প্রথম টি২০তেও ৬ উইকেটে হার হয়েছে। তেমনি দ্বিতীয় টি২০তেও হেরে সিরিজ হার হয়েছে। এবার টি২০তেও হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর পালা। সেটি যে দলগত নৈপুণ্যেই সম্ভব, তা বোঝাই যাচ্ছে। পাশাপাশি বড় ইনিংসও প্রয়োজন। সঙ্গে বড় জুটি। যা হচ্ছে খুব কম। তামিমই যেমন বললেন, ‘আমরা শুরুটা করতে পারছি। কিন্তু কেউ ফিনিশ করতে পারছি না। আমি নিজে পাঁচ ইনিংসেই শুরু ভাল করেছি। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারিনি। আমরা সুযোগ তৈরি করছি। তবে খুব অল্প বা একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আমরা যদি সুযোগগুলো বেশি সময় ধরে রাখতে পারি, তাহলে অবশ্যই সাফল্য আসবে।’ তামিম আবার ধৈর্যই ধরতে বললেন। জানালেন, ‘পাঁচটা ম্যাচ হেরেছি আমরা। সমর্থকরা কতটা হতাশ, আমি জানি। তবে মনে রাখতে হবে, আমরা বিদেশী কন্ডিশনে খেলছি। সবারই একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের পুরো স্কোয়াডে যে ২২ জন আছে, এর মধ্যে বোধ হয় ১০ জনই এই প্রথমবার এই ধরনের কন্ডিশনে খেলছে। যে কোন দলই যখন বিদেশে যায়, তখন তাদের জন্য সফরটা খুব কঠিন হয়। ইংল্যান্ডকেই দেখুন, টেস্ট ক্রিকেটের এত ভাল দল, অথচ ভারতের কাছে ৫-০ ব্যবধানে (হবে ৪-০) হেরেছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘দেখুন, ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেখানে রাতারাতি সব বদলে ফেলা সম্ভব না। দেশের মাটিতে আমরা যে সাফল্য পাচ্ছি, সেটার জন্যও আমাদের প্রায় বছর দশেক অপেক্ষা করতে হয়েছে। বিদেশী কন্ডিশনেও যদি আমাদের ভাল করতে হয়, নিয়মিত সফর করতে হবে, খেলতে হবে। হয়তো আগামী ৫-১০টা ম্যাচেও ফল আমাদের পক্ষে নাও আসতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে ভুলগুলো কমিয়ে আনলে আমাদের পক্ষেও ভালভাবে ঘুরে দাঁড়ান সম্ভব। দলের সবার মধ্যে অন্তত এই বিশ্বাসটা আছে যে আমরা জিততে পারি। হয়তো আমাদের পারফর্মেন্স আমাদের এই বিশ্বাসটাকে প্রকাশ করছে না। কিন্তু আমি এতটুকু বলতে পারি, আমরা যে ২২ জন দলের সঙ্গে আছি, আমরা কোনদিন স্বপ্ন দেখা বন্ধ করিনি যে বিদেশী কন্ডিশনে আমরা জিতব। এটাও মনে করি না যে আমরা এখানে শুধু হারার জন্য এসেছি। চেষ্টা করছি। হয়তো সাফল্যও আসবে।’ সেই সাফল্য এখন আজই আসলে হয়। না হলে যে ওয়ানডের পর টি২০ সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
×