ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোস্তাফা জব্বার

একুশ শতক ॥ ডট বাংলা ॥ বাংলার বিজয়

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৮ জানুয়ারি ২০১৭

একুশ শতক ॥ ডট বাংলা ॥ বাংলার বিজয়

অবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডট বাংলা ডমেইন উদ্বোধন করলেন। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ তিনি সেটি উদ্বোধন করেন। অভিনন্দন সরকারকে এবং তার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডট বাংলার উদ্বোধন করেন। ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য এমন একটি অর্জন বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষাকে বিজয়ী করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর বিশেষত ডিজিটাল যুগে ডট বাংলা ডমেইন নেম ব্যবহার করতে পারা আমাদের ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রটির জন্য এক বিশাল মাইলফলক অর্জন। ডিজিটালে রূপান্তরের নামে বাংলা ভাষাকে বিদায় করার এই দেশে বাংলা ভাষা ও বাংলা হরফের এমন সফলতাকে সাধুবাদ জানাই। একই সঙ্গে একজন বাঙালী, বাংলাদেশের নাগরিক ও বাংলাভাষী হিসেবে এই গৌরবের অংশীদারিত্ব পেয়ে গৌরবান্বিত। ডট বাংলা সম্পর্কে সরকারী বার্তা সংস্থা বাসস পরিবেশতি খবরে তথ্যাদি এরকম : State owned Bangladesh Telecommunications Company Limited (BTCL), the assigned organization to handle the domain, has completed preparations to start distribution of dot bangla domain among the users after it has been officially allotted to Bangladesh on October 4 after a long process. After getting the right, state minister for posts and telecommunications Tarana Halim had said that they want to unlock it for the people in the month of victory, as the country attained independence on December 16. Officials said the BTCL would call for application for the domain. They said customer could complete all procedures for .bangla through online while registration fee would be received using state owned mobile phone operator Teletalk. The International Corporation of Assigned Names and Numbers (ICANN) has officially allotted the dot bangla (.bangla) internet domain to Bangladesh. The ICANN sent a letter to the Ministry of Posts, Telecommunications and Information Technology informing the decision on October 4. Indian state West Bengal and Sierra Leone, one of whose official languages is Bangla, had also applied for the internationalized domain name (IDN) label-dot bangla. Earlier, ICANN-approved another domain label for Bangladesh as dot bd or .bd. From now on, .bangla is Bangladesh’s own Unicode domain label. It is the second country code top-level domain (TLD) for Bangla websites. According to the BTCL, total registered users of .bd have reached 36,500. Domain names, such as “bssnews.net’, were originally designed only to support ASCII characters. In 2003, a specification was released that allows most Unicode characters to be used in domain names. IDNs are supported by all modern browsers and email programmes, so people can use links in their native languages. Therefore, users can go to the BTCL website (www.btcl.com.bd) by typing btcl.bangla in Bangla fonts in the browser.(http://en.bbarta24.net/sci-tech/ 2016/12/22/6709) আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এটি শহীদের রক্ত দিয়ে কেনা। আমরা যারা ’৪৮ থেকে ’৫৬ পর্যন্ত লড়াই করে পাকিস্তানে বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম তারাই একাত্তরে বাংলা ভাষার একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ফেলি। ভাষার লড়াইয়ের চাইতে রাষ্ট্র গঠনের লড়াইটা আরও রক্তাক্ত ছিল। দেশটি স্বাধীন হবার পর এই রাষ্ট্রে বাংলা ভাষার অবস্থা কি সেটি মূল্যায়ন করা যেতে পারে, বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তিতে তার অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ডিজিটাল প্রযুক্তির নামে বাংলাকে বিদায় করার মহোৎসবের কথা আজকে আমরা আলোচনা না করলেও পারি। বরং ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার অবস্থান বিষয়ক শেষ খবরটি নিয়ে কথা বলতে পারি। কারণ, খুব সাম্প্রতিককালে ডট বাংলা নামক একটি ডমেইন নেম আইকন কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার ফলে ইন্টারনেটে বাংলা ভাষার অবস্থান বদলেছে। আশাব্যঞ্জক দিক হচ্ছে যে, এর ফলে বাংলা ভাষা বিশ্বের সেরা ভাষাগুলোর কাতারে শেষ অবস্থানটিও নিশ্চিত করল। বিজয় হলো বাংলা বর্ণমালার। অনেকেই এটিও ভাবেন যে, বাংলাদেশের পরিচিতি হিসেবে ডট বিডি নামক একটি টপ ডমেইন থাকার পরও আবার ডট বাংলা ব্যবহারের কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কি? প্রশ্নটির জবাব হচ্ছে যে, ডট বিডি বাংলাদেশের পরিচায়ক হলেও সেটি রোমান হরফে ব্যবহার করতে হয়; বাংলা হরফে ডমেইন নাম লেখার ব্যবস্থা তাতে থাকে না। বাংলা হরফে রাষ্ট্রের পরিচিতিও তাতে তুলে ধরা যায় না। রোমান হরফে ডট বিডি লেখা দেখে হয়ত বাংলাদেশ বুঝতে হয়, কিন্তু বাংলাদেশের ভাষা যে বাংলা সেটি বোঝা যায় না। সেই প্রেক্ষিতেই খুব সহজভাবে সাধারণ মানুষের বোঝার মতো করে বললে এটি বলতে হবে যে, ডট বাংলা অনুমোদনের ফলে আমরা আমাদের পরিচিতি হিসেবে ইন্টারনেটে বাংলা হরফ ব্যবহার করতে পারব এবং বাংলাদেশের পরিচিতি হিসেবে বাংলা শব্দটি বাংলা হরফে ব্যবহার করতে পারব। আমি মনে করি, আমরা বাংলা ভাষা নিয়ে যে লড়াই করে আসছি ডট বাংলার অনুমোদন তার আরও একটি মাইলফলক অর্জন। হাতে লেখা বা সীসার হরফের বাংলার যুগ থেকে প্রকাশনায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার একটি বিশাল অর্জন ছিল। ইন্টারনেটে বাংলা লিখতে পারাটাও আমাদের বড় ধরনের সক্ষমতা ছিল। এবার যখন আমি আমার নিজের হরফে নিজের পরিচয় ও রাষ্ট্রের পরিচয় দিতে পারছি সেটি আরও বিশাল অর্জন। ধন্যবাদ ও অভিনন্দন তাদেরকে যাদের জন্য আমরা এমন একটি মাইলফলক পেলাম। আমি যদি ডট বাংলার পেছনের ইতিহাসের দিকে তাকাই তবে একদিকে ধন্যবাদ দিতে হবে কাউকে কাউকে, অন্যদিকে নিন্দা জানাতে হবে কাউকে কাউকে। ২০০৯ সালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দলকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই মিসরের দ্বীপ শহর শার্ম আল শেখে ১৫-১৮ নবেম্বর আয়োজিত ইন্টারনেট গবর্নেন্স ফোরামের সভায় উপস্থিত থেকে আইকন-এর প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে আলোচনা করে ডট বাংলার প্রস্তাব করার জন্য। সেই সময়েই আইকনের প্রধান নির্বাহী ডট বাংলা অনুমোদন দিতে সম্মত হন। আমার স্নেহভাজন এম এ হক অনুর ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, “যথারীতি ইনু ভাই দেশে ফিরে তৎকালীন সংসদীয় সভায় এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেন এবং পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিষয়টি জানালেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি সম্পর্কে ত্বরিত সিদ্ধান্ত দিলেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে। কাজ শুরু হয়ে গেল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে টপলেভেল ডমেইন ডট বাংলার জন্য আইকনে অনলাইনের মাধ্যমে ফর্ম সাবমিট করেন।” নিন্দা করার প্রয়োজন হচ্ছে এজন্য যে, এই অনুমোদন পাবার জন্য আমাদেরকে প্রস্তাবনার পর সাত বছর ও আবেদনের পর সাড়ে ছয় বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে অনুমোদনের পর কেবল আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তিন বছর হারিয়ে ফেলেছি। টেলিকম বিভাগের অমার্জনীয় অবহেলার জন্য যে সময়টি আমাদের জাতীয় জীবন ও রাষ্ট্রভাষার ইতিহাস থেকে বিনষ্ট হলো তার জন্য কৈফিয়ৎ দেবে কে? রাষ্ট্রভাষার সঙ্গে এই অবহেলা করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যা হোক, প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে ইন্টারনেটে একটি রাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করে এই ডমেইন। যেমন ডট ইউএস ডমেইন নামের কোন ওয়েবসাইটে ঢুকলে বোঝা যায় সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত ওয়েবসাইট। ডট বাংলা তেমনি ইউনিকোড দিয়ে স্বীকৃত বাংলাদেশী ডমেইন। এই ডমেইনটির ব্যাখ্যায় উইকিপিডিয়া বলছে, ডট বাংলা হচ্ছে বাংলাদেশের জন্য একটি দ্বিতীয় ইন্টারনেট কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল ডমেইন (সিসিটিএলডি)। এই ডমেইন বাংলা ভাষায় ওয়েব ঠিকানার জন্য বোঝানো হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ দুটি ডমেইনের মালিক। মন্ত্রণালয়ের পক্ষে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ডট বিডি ডমেইন ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। ডট বাংলা ও ডট বিডি ডমেইন নিয়ে দৈনিক সান পত্রিকার ১৯ জানুয়ারি ১৬ সংখ্যার খবরটি প্রণিধানযোগ্য। সরকারের পক্ষ থেকে ডট বাংলা ডমেইন ২০১০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকেই ব্যবহারের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। ২০১১ সালের ৩০ মার্চ সরকার ডট বাংলা ডমেইনের অনুমোদন পায়। কিন্তু তার পর আর পথ এগোয়নি। আমাদের জানার ও বোঝার বিষয় হচ্ছে এই অথর্বতার কারণ কি? কেন আমরা আবেদনের পর প্রায় সাতটি বছর সময় নিলাম ডট বাংলা ব্যবহার করার পর্যায়ে পৌঁছাতে। আমরা খুঁজে দেখতে চাই কাদের জন্য বাংলা ভাষা সাত বছর পেছাল। আগামীতে সেই আলোচনাই আমরা করব। (পরের সপ্তাহে সমাপ্ত) ঢাকা, ৬ জানুয়ারি, ১৭ ॥ লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণা ও কর্মসূচীর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : [email protected], ওয়েবপেজ :ww w.bijoyekushe.net
×