স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে দুই লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের জন্য আবু সাঈদ (৩০) নামে এক যুবককে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেদম পিটুনির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এদিকে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন। ঘটনা প্রকাশ হওয়ায় ইতোমধ্যে তাদের নির্ধারিত দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ঘটনা তদন্তে ২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে কোতোয়ালি পুলিশ জানিয়েছে। থানার একাধিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের নুরুল হক ও তার ছেলে আবু সাঈদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। থানার কথিত সিভিল টিমের সদস্য এসআই নাজমুল হোসেন ও এএসআই হাদিবুর রহমান গত বুধবার সকালে অভিযান চালিয়ে আবু সাঈদকে থানায় ধরে আনে। পরে তার কাছে দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। দাবি করা ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় আবু সাঈদকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় বেঁধে দুই টেবিলের মাঝে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ওই অবস্থায় তার ওপর চলে নির্যাতন। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক যুবককে উল্টো করে ঝুলিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘটনাস্থলও যে কোতোয়ালি থানা, ছবিতে তাও স্পষ্ট। ঝুলন্ত ওই যুবকের পাশে সাদা পোশাকে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে, যার প্যান্টে ওয়্যারলেস সেট ঝুলছে। নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা যুবকের নাম আবু সাঈদ। তবে এক পর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন সাঈদ। এর পর বুধবার রাতেই তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে এসআই নাজমুল ও এএসআই হাদিবুর তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এসআই নাজমুল হোসেন বলেন, আমি একটু যশোরের বাইরে আছি। সাঈদ নামে কাউকে আটক বা ঘুষ আদায়ের সঙ্গে আমি জড়িত নই। এএসআই হাদিবুর রহমান বলেন, এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। সাংবাদিকদের কেউ হয়ত ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
জানা গেছে, ঘটনার বিষয়ে সাঈদের পরিবার ভয়ে মুখ খুলছে না। শুক্রবার সকালে যশোর কোতোয়ালি থানার দুই দারোগা সাঈদের বাড়ি যায়। তাকে ভয় দেখানো হয়। এ ঘটনা সাংবাদিকদের জানালে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটানো হবে। ফলে ভয়ে সাঈদ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তবে ওই পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন নিশ্চিত করেছেন, বুধবার পুলিশ সাঈদকে ধরে নিয়ে যায়। পরে মোটা টাকার বিনিময়ে সাঈদ মুক্তি পায়।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোঃ ইলিয়াস হোসেন শুক্রবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের বলেন, এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তবে যেহেতু বিষয়টি পত্রিকায় এসেছে। তাই ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটি রিপোর্ট দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের ওই দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে।