ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণভবনে আওয়ামী লীগের যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী;###;অপরাধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে ;###;সরকার উৎখাতের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা গুপ্তহত্যা শুরু করেছে

কেউ রেহাই পাবে না ॥ লিটন হত্যাকাণ্ডে বিএনপি জামায়াতকে ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৫ জানুয়ারি ২০১৭

কেউ রেহাই পাবে না ॥ লিটন হত্যাকাণ্ডে বিএনপি জামায়াতকে ইঙ্গিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকা-ে জড়িত থাকার বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, গুপ্তহত্যা, খুন, খুনীদের মদদ, লালন-পালন করাই বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চরিত্র। সরকার উৎখাতের আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা (বিএনপি-জামায়াত জোট) এখন গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। জানি না আগামীতে তারা আরও কী করবে। তবে অন্যায় যে করে, যে সহে- তারা সম অপরাধী। অপরাধীরা কেউই রেহাই পাবে না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেতেই হবে। জঙ্গী-সন্ত্রাসী ও গুপ্তহত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গোলাম আযমকে সমাবেশ করতে না দেওয়ায় এবং জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলায়ই সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে এভাবে জীবন দিতে হলো। এই হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের যেভাবেই হোক খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর সাহস দেখাতে না পারে। বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কজন কেন্দ্রীয় নেতা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বক্তব্য রাখেন। সবার বক্তব্যেই ঘুরে ফিরে উঠে আসে এমপি লিটন হত্যাকা-ের বিষয়টি। এছাড়াও বৈঠকে আগামী ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশ সফল করার বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। প্রারম্ভিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরগঞ্জে নিহত এমপি মঞ্জুরুল ইসলামের লিটনের গুলিতে এক শিশু আহত হওয়া নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-শিবিররা বার বার লিটনকে হত্যার চেষ্টা করেছে। অনেকবারই তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে একটি শিশু গুলিতে আহত হওয়া নিয়ে এমনভাবে লেখা হলো যাতে এমপি লিটন মহাপাপ করেছে। কিন্তু আসল কথা কিছুই লেখা হলো না। তিনি বলেন, ওইদিন লিটনকে হত্যার জন্য এ্যামবুশ করা হয়েছিল। এটা বুঝতে পেরে জীবন বাঁচাতে লাইসেন্স করা অস্ত্রের গুলিতে একটি শিশু আহত হয়। যে শিশুটি আহত হয় তার পরিবারও আওয়ামী লীগের। ঘটনার পর এমনভাবে লেখা হলো যার ফলে এমপি লিটনের অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। এটা জেনেই ঘাতকরা বাড়িতে ঢুকে এমপি লিটনকে হত্যা করেছে। আসলে গোলাম আযমকে তাঁর এলাকায় সমাবেশ করতে না দেয়া এবং সেখানে জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করার পর থেকেই সংসদ সদস্য লিটন তাদের প্রধান টার্গেট ছিল। তিনি বলেন, এমপি লিটন হত্যাই নতুন নয়। আমরা বিরোধী দলে থাকতেও নির্মমভাবে সংসদ সদস্য শাহ এম এস কিবরিয়া ও আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সংসদ সদস্য হয়েও আমরা সংসদে এর প্রতিবাদ করতে পারিনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ২২ নেতাকর্মীর জীবন গেল। আমাদের অনেক মন্ত্রী-নেতাও এখনও গ্রেনেড আহত হয়ে জীবনযাপন করছেন। কিন্তু এই হামলা নিয়েও সংসদে আমাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। এমনকি সংসদে একটি নিন্দা কিংবা শোক প্রস্তাব পর্যন্ত আনতে দেয়নি খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকার। বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে সহিংসতা, নাশকতা ও শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাকা-ের বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জেও বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িয়ে হামলা চালিয়ে চার পুলিশকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। আন্দোলনের সময় সুন্দরগঞ্জের রাস্তায় একটি গাছও ছিল না। সব কেটে কেটে রাস্তায় ফেলে সন্ত্রাসীরা নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে। ছাত্রলীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজনকে তারা গলা কেটে হত্যা পর্যন্ত করেছে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য তারা মহড়া দিয়েছে। সেখানে নির্বাচিত একজন ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দিয়ে পুরো পরিবারকে জ্বালিয়ে হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করা হয়েছিল। ওই পুরো এলাকাই জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা কব্জা করে ফেলেছিল। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি শেষে উচ্চ শিক্ষার জন্য লিটন বিদেশে চলে যায়। শিক্ষা জীবন শেষে দেশে ফিরে সে আবারও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। পরে তাঁকে আমরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেই। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েই সে সংসদে আসে। তিনি বলেন, নিজের নির্বাচনী এলাকায় জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লিটন একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছিল। এ কারণেই তাঁকে অকালে জীবন দিতে হলো। তবে খুনীদের যেভাবেই হোক খুঁজে বের করে বিচার করা হবে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল তা-ব ও নাশকতার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত না করে ঘরে ফিরে যাবেন না- এ কথা বলে ২০১৫ সালে বিএনপি নেত্রী গুলশানের অফিসে বসে সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করিয়েছেন। বাস-ট্রেন-লঞ্চসহ সারাদেশে নাশকতা চালিয়ে, ফিস প্লেট খুলে মানুষকে হত্যা করিয়েছেন। আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনের নামে। কিন্তু নির্বাচন ঠেকাতে এবং সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবারও গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। কারণ খুন করাই এদের চরিত্র। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আরও বলেন, এই বিএনপি নেত্রী বঙ্গবন্ধুর খুনীদের প্রহসনের নির্বাচনে বিজয়ী করে এমপি বানিয়েছিলেন। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। যেসব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদ- হয়েছে, যে রায় আমরা কার্যকর করেছি। সেই দ-িত যুদ্ধাপরাধীদের খালেদা জিয়া মন্ত্রী বানিয়ে তাদের হাতে আমাদের লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিলেন। খুনীদের লালন-পালন ও মদদ দেয়াই তার চরিত্র। কিন্তু অন্যায় যে করে, আর অন্যায় যে সহে- সেও সমান অপরাধী। এই অপরাধের জন্য একদিন তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। আর জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হতে হবে। সারাদেশেই জনমত সৃষ্টি করে এদের সব অপকর্ম প্রতিহত করতে হবে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সংগঠনটির প্রতিটি নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাসই হচ্ছে বাংলাদেশের ইতিহাস। জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি লড়াই-সংগ্রামে ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও ছাত্রলীগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, নেতাকর্মীদের অনেক আত্মত্যাগ করেছে। ছাত্রলীগেরই সাবেক এই কর্মী শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আরও বলেন, আমিও ছাত্রলীগের একজন নগণ্য কর্মী ছিলাম। কেন্দ্রীয় কমিটির কোন পদে না থাকলেও আমি ছাত্রলীগ থেকে নির্বাচিত করে নির্বাচিত ভিপি হয়েছিলাম। আমি যাতে ভিপি হতে না পারি সেজন্য স্বয়ং মোনায়েম খানও চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। আমার বিরুদ্ধে আরও দু’জন ভিপি প্রার্থী ছিল। তাদের দু’জনের প্রাপ্ত মোট ভোটেরও দ্বিগুণ ভোট পেয়ে আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। তাই এই দিনটি ছাত্রলীগের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। তাই আজকের দিনে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক প্রতিটি নেতাকর্মীকে আমি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
×