ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রী ও সচিব সুপারিশ করবেন না

প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৪ জানুয়ারি ২০১৭

প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি নির্দেশিকার দুটি ধারা স্থগিত করে আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর ফলে যে কোন স্থানে শিক্ষকদের বদলিতে মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা স্থগিত করা হলো। পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির সুপারিশ করবেন না প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী এবং সচিব। ফলে এখন থেকে ঢাকা শহরসহ সকল জেলা-উপজেলা সদর ও পৌরসভায় আর কেউ বাইরে থেকে বদলি হয়ে আসতে পারবেন না। এতদিন মন্ত্রী ও সচিবের সুপারিশ নিয়ে বাইরে থেকে ঢাকা শহর, জেলা-উপজেলা সদর ও পৌরসভায় বদলি হওয়া যেত। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বদলি নিয়ে তদবির ও চাপ কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ প্রতিবছর শত শত বদলির আবেদন ও তদবিরের চাপ আসে মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া বদলিতে অর্থ লেনদেন নিয়েও সরকারের ওপরের মহলে কথা তুলেছেন কেউ কেউ। এসব কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী নিজেই আদেশ জারি করে সকল সদরের বদলিতে মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা স্থগিত করেছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাইরে থেকে রাজধানী বা সদরের বদলির ক্ষমতা ছিল কেবল মন্ত্রণালয়ে। এখন মন্ত্রণালয়ের নতুন আদেশের কারণে ওই বদলি পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এর আগে দুদিন আগেই সাংবাদিকদের কাছে বদলি বন্ধের উদ্যোগের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মন্ত্রী। সোমবার মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এখন থেকে আর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলির সুপারিশ করবেন না তিনি। মন্ত্রী-সচিবের সুপারিশ নিয়ে ঢাকা শহরসহ জেলা-উপজেলা সদর ও পৌরসভায় আর বদলি হওয়া যাবে না। এ বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যে আদেশ জারি করা হবে। মঙ্গলবার জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি নির্দেশিকা, ২০১৫’ এর ১.২ এবং ২.৮ নির্দেশিকাটি পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হলো। নির্দেশিকার ১.১ ধারা অনুযায়ী, সাধারণভাবে প্রতি শিক্ষা বছরের জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে একই উপজেলা/থানা, আন্তঃউপজেলা/ থানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি কর্পোরেশন ও আন্তঃবিভাগ বদলি করা যায়। আর ১.২ ধারায় বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণে ১.১ অনুচ্ছেদ বর্ণিত সময়ের মধ্যে বদলি সম্পন্ন করা না গেলে মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে কোন সময়ের মধ্যে বদলি করতে পারবে। ২.৮ ধারা অনুযায়ী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জনস্বার্থে যে কোন কারণে যে কোন শিক্ষককে যে কোন সময়ে বদলি করতে পারবে। তবে নতুন আদেশ জারির পর শিক্ষক বদলিতে মন্ত্রণালয়ের এতদিনের ক্ষমতা স্থগিত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আদেশে আরও বলা হয়েছে, নির্দেশিকার অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য নির্দেশনার আলোকে একই উপজেলা/থানা, আন্তঃবিদ্যালয়, আন্তঃউপজেলা/ আন্তঃথানা, আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি কর্পোরেশন এবং আন্তঃবিভাগ বদলি অধিক্ষেত্র অনুযায়ী সম্পাদন করতে হবে। অন্যথায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘বদলি সম্পাদনের ফলোআপ আদেশ জারির সাতদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে হবে। বদলির প্রক্রিয়ায় কোন ব্যত্যয় ঘটলে অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন এবং বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নীতিমালা অনুযায়ী বছরের প্রথম তিন মাস মাঠপর্যায় থেকে বদলি উন্মুক্ত থাকে। তবে মন্ত্রী ও সচিবের সুপারিশ নিয়ে বছরজুড়ে বদলি হওয়ার সুযোগ ছিল। বদলির এই তিন মাসে মাঠপর্যায় থেকে বদলির জন্য হাজার হাজার প্রার্থী আবেদন করে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিবের সুপারিশ নিতে অসংখ্য প্রার্থী ভিড় করে থাকেন মন্ত্রণালয়ে। পাশাপাশি অন্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-এমপিদেরও ডিও লেটার নিয়ে আসেন প্রার্থীরা। উল্লেখ্য, জেলা ও উপজেলা সদরের বদলি সব সময় চালু থাকলেও এক সময় রাজধানী ঢাকা শহরে বাইরে থেকে কোন শিক্ষক বদলি হয়ে আসতে পারতেন না। আদেশ জারি করেই ঢাকায় শিক্ষকদের আসার পথ বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু নানা মহলের চাহিদার কথা চিন্তা করে বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বিশেষ প্রয়োজনে ঢাকায় বদলি হয়ে আসার পথ খুলেছিলেন। তবে এরপর থেকেই ঢাকায় বদলি হতে আবেদন ও তদবিরে রীতিমতো হিমশিম থেকে হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে মন্ত্রণালয় আগের অবস্থানে ফিলে গেল।
×