স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দীর্ঘ সাত বছর পর অবশেষে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির আংশিক কমিটি ঘোষণা হয়েছে। নতুন দুই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম প্রকাশ করেছে দলটি। মঙ্গলবার বিএনপির সহ-দফতার সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিধি এসে পৌঁছেছে রাজশাহীতে। তবে নতুন এ কমিটিতে ঠাঁই পাননি জেলা ও নগর বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা মিজানুর রহমান মিনু এবং এ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা। ফলে রাজশাহীর রাজনীতিতে শীর্ষ এ দুই নেতার দাদাগিরি প্রায় শেষ। তবে মিনু দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং নাদিম কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য পদে রয়েছেন। এবার ঘোষিত মহানগর কমিটির সভাপতি করা হয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র (বহিষ্কৃত) মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে।
এছাড়া সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন এ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। অন্যদিকে, জেলার কমিটির সভাপতি করা হয়েছে এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন তপুকে এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মতিউর রহমান মন্টু। জেলা কমিটিতে রয়েছেন ৩৭ সদস্য। দলের চেয়ারপার্সনের নির্দেশক্রমে মহাসচিব এ দুই কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় এ বার্তায়। এদিকে জেলা ও নগর বিএনপির কমিটিতে বড়ভাই-ছোটভাই খ্যাত মিজানুর রহমান মিনু ও এ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফার ঠাঁই হয়নি। দলের হেভিওয়েট এ দুই নেতা দুই কমিটির সভাপতি পদে দায়িত্বপালন করছিলেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে ক্ষমতা হারানোর পর স্থানীয় কমিটিতেও খর্ব হলো তাদের দাদাগিরি। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী কর্মসূচীতে মিনু ও নাদিমের নেতৃত্ব চোখে পড়ার মতো ছিল না। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচী বাস্তবায়নে তারা কাজ করেননি। এছাড়া মিনু-নাদিমের নেতৃত্বের কারণে নগর ও জেলা কমিটিতে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব চলছিল।
আর এ কারণেই সাত বছর পেরিয়ে গেলেও নগর ও জেলা কমিটি হয়নি। দলীয় সূত্রমতে, মিজানুর রহমান মিনুকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০০৯ সালে রাজশাহী মহানগর কমিটি গঠিত হয়। এরপর ২০১৪ সালের আগস্টে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে নগর যুবদলের আহ্বায়কের পদ থেকে বাদ দিয়ে নগর কমিটিতে সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সেসময় কাউন্সিল ছাড়াই মেয়র বুলবুলকে বাদ দিয়ে যুবদলের নগর কমিটি গঠিত হয়।
এছাড়া পছন্দের ব্যক্তিদের পদায়ন করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে সেসময় বুলবুলপন্থী নেতা-কর্মীরা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে। মিনু-বুলবুলের দ্বন্দ্ব তখন থেকেই প্রকাশ্যে। এছাড়া জেলা কমিটিতে দীর্ঘদিন থেকে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিরাজমান ক্ষমতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে। এরআগে ২০০৯ সালে নাদিম মোস্তফাকে সভাপতি ও কামরুল মনিরকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা বিএনপি গঠিত হয়। কিন্তু কমিটি গঠিত হওয়ার পর পরই ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে দেখা দেয় বিরোধ। নবগঠিত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু বলেন, সবার সম্মতিতে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নাদিম মোস্তফা দীর্ঘদিন কমিটিতে ছিলেন। এখন তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাই তাকে রাখেনি কেন্দ্রীয় কমিটি। আর কামরুল মনির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হওয়ায় তাকেও কমিটিতে রাখা হয়নি। অন্যদিকে মহানগর বিএনপির নয়া সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, দলে বিভেদ রয়েছে সত্য। তবে তিনি সকলের মতামত নিয়ে নগর বিএনপিকে এগিয়ে নিতে কাজ করবেন।