ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন বহুমাত্রিক আয়োজনে উদ্্যাপন

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

সৈয়দ শামসুল হকের জন্মদিন বহুমাত্রিক আয়োজনে উদ্্যাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাহিত্যের জমিনে যেন অনন্য এক জাদুকর সৈয়দ শামসুল হক। শব্দের খেলায় রাঙিয়েছেন বাংলার সাহিত্য ও শিল্প ভুবন। কবিতার চরণে চরণে বলেছেন মা, মাটি, মানুষসহ প্রেম ও প্রকৃতির কথা। বর্ণনাবিস্তারী গল্প কিংবা উপন্যাসেও মেলে ধরেছেন যাপিত জীবনের বহুমাত্রিক বিষয়। সমান সফলতায় রচনা করেছেন দর্শকনন্দিত অসংখ্য মঞ্চনাটক। এমনকি তার সৃষ্টির বৈভবে বাদ যায়নি গীতিকবিতাও। লিখেছেন শ্রোতা আলোড়িত করা কিছু গান। আর এভাবেই পরিণত হয়েছেন সব্যসাচী লেখকে। মঙ্গলবার ছিল বহুমুখী পরিচয়ে সমৃদ্ধ বরেণ্য এই লেখকের ৮২তম জন্মদিন। এবারের জন্মদিনে কবি সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও উদ্যাপনে ছিল না কোন ঘাটতি। নিজ সৃষ্টির আলোয় স্মরণ করা হয়েছে কবিকে। সব্যসাচীর অনুপস্থিতিতে জানান হয়েছে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। তার পরিচয়টি যেমন বহুমাত্রিক তেমনি আয়োজনেও ছিল বহুমাত্রিকতা। জন্মদিন উদ্্যাপনে কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে কথা বলেছেন কবি ও বিশিষ্টজনরা। তাকে নিবেদন করে গাওয়া হয়েছে গান, পঠিত হয়েছে কবিতা, পরিবেশিত হয়েছে নৃত্য। কবির জন্মদিনে রাজধানীতে ছিল দুটি আয়োজন। ‘ফুলের গন্ধের মতো থেকে যাব তোমার রুমালে’ শিরোনামের আয়োজন ছিল শিল্পকলা একাডেমিতে। আর জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজন করে আলোচনা আর কবিতাপাঠের আয়োজন। প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৮২তম জয়ন্তীতে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সব্যসাচীর প্রতিকৃতিতে আলোক প্রজ্বলনের সঙ্গে অর্পণ করা হয় পুষ্পাঞ্জলি। লেখকের সহধর্মিণী আনোয়ারা সৈয়দ হকসহ অন্য অতিথিরা ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় ভেসে বেড়ায় বাঁশরিয়া মনিরুজ্জামানের বাঁশির সুর। এরপর নাট্যজন আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সূচনা বক্তব্য রাখেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। এ আয়োজনে সৈয়দ শামসুল হকের দুটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর মধ্যে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘কর্কটবৃক্ষের শব্দসবুজ শাখায়’ এবং অন্যপ্রকাশ থেকে অনুবাদ নাটকের বই ‘শেক্সপিয়রের হ্যামলেট’ প্রকাশিত হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে ‘সৈয়দ শামসুল হক সৃজনের জাদুকর : নাট্য নির্দেশকের নিবেদন’ বিষয়ে নাট্যজন আতাউর রহমান, ‘চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হক : বড় ভাল লোক ছিল’ বিষয়ে চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াত, ‘জাদুবাস্তবতার পথিকৃৎ সৈয়দ শামসুল হক’ বিষয়ে কথাশিল্পী আনিসুল হক, ‘চিরজীবিত বিশ্ববাঙালি’ আলোচনা করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কবিপতœী কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ শামসুল হক। অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন হাসান আরিফ, গোলাম সারোয়ার ও আহকামউল্লাহ। নাট্যদল থিয়েটারের পরিবেশনায় সৈয়দ হক রচিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ এবং নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের পরিবেশনায় ‘ঈর্ষা’র অংশবিশেষ মঞ্চস্থ করে। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা সঙ্গীত পরিবেশন করেন এন্ড্রু কিশোর। সৈয়দ শামসুল হককে নিবেদন করে সমাপনী নৃত্য পরিবেশন করেন পূজা সেনগুপ্ত। অনুষ্ঠানে সৈয়দ হকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে বিভিন্ন সংগঠন। এছাড়া এদিন সকালে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজন করে আলোচনা, স্মৃতিচারণ, নিবেদিত কবিতাপাঠ ও কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি। সৈয়দ হককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি রবিউল হুসাইন, কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও কবি সাজ্জাদ কাদির। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি ড. মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তারিক সুজাত। অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ক্যান্সার আক্রান্ত তিনি তখন শয্যাশায়ী। সে অবস্থায়ও তিনি শেক্সপিয়র অনুবাদ করলেন। সাহিত্যের প্রতি তার কতটা অনুরাগ আর ভালবাসা থাকলে মৃত্যুকে তুড়ি মেরে সাহিত্যে নিমগ্ন থেকেছেন। হাসান আরিফ বলেন, শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ এবং সৈয়দ হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতা দুটি পাশাপাশি রাখলে বাংলাদেশের সংবিধান একসঙ্গে দেখা যায়। অনুষ্ঠানে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ‘আমি জন্মগ্রহণ করিনি’ থেকে পাঠ করেন। তিনি সৈয়দ হককে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, সৈয়দ শামসুল হক এক চিরঞ্জীব সত্তা, এক স্বপ্নদ্রষ্টা। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, কবি দু’ধরনের হয়, এক সাহিত্যের কবি আর বিশ্বলোকের কবি। সৈয়দ শামসুল হক এই দু’ধরনের কবিই ছিলেন। কবিতা, প্রবন্ধ, সাহিত্য কিংবা অভিসন্দর্ভ সবকিছুর মধ্যেই তিনি চিরদিন আমাদের মধ্যে থাকবেন। কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, সৈয়দ হক ছিলেন সাহিত্যের কৃষক, তিনি সাহিত্যের প্রতিটি জমিতে কর্ষণ করেছেন। তার মতো সৃষ্টিশীল সাহিত্যস্র্রষ্টা কখনও দেখা যায় না। পরে তিনি তার নিজের ‘মিলনে অপার আনন্দ’ কবিতাটি পাঠ করেন। এই আয়োজনে কবি কাজী রোজী শোনান তার ‘যখন তুমি আছো আইসিইউতে’, হাসান আরিফ শোনান ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি। বেঙ্গলের পারফরম্যান্স আর্ট সপ্তাহ শুরু ॥ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ভিস্যুয়াল আর্ট বিভাগের আয়োজনে মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো পারফরম্যান্স আর্ট সপ্তাহ। এদিন বিকেলে ধানম-ির বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে এ আয়োজনের সূচনা হয়। ২০ জন শিল্পীর অংশগ্রহণে এই আয়োজন চলবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রথম দিনের পরিবেশনায় অংশ নেন পলাশ ভট্টাচার্য, জয়দেব রওজা, জুয়েল এ রব ও হাসনাহেনা পরশ। পলাশ ভট্টাচার্য তার পারফরম্যান্স ‘মার্কড’- এর মাধ্যমে দেখিয়েছেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অব্যক্ত প্রতিক্রিয়া, যেখানে তিনি শারীরিক ভঙ্গিমার সঙ্গে যোগ করেছেন কিছু প্রাত্যহিক জীবনের ব্যবহারিক বস্তু। জয়দেব রওজার পরিবেশনার শিরোনাম ছিল ‘প্রজন্ম কল্পদ্রুম ও অনুদ্রুম’ । খাগড়াছড়িতে জন্ম নেয়া এ শিল্পীর বেশিরভাগ কাজই পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনপ্রবাহের বিভিন্ন বিষয় ঘিরে আবর্তিত হয় এবং এই পরিবেশনাতেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। তৃতীয় পারফরম্যান্স ছিল জুয়েল এ রবের ‘ইটারনাল মোমেন্টস : নাম্বনেস’। এর বিষয়বস্তু মানব শরীরের বিভিন্ন অভিব্যক্তি এবং সেইসঙ্গে বস্তুর সম্পর্ক। শিল্পী হাসনাহেনা পরশের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিচ্ছবি ‘আই হ্যাভ টু রান; আই ডোন্ট নো হাউ টু স্টপ’ দিয়ে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষ হয়। আজ বুধবার আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হবে ডেইলি স্টার-বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কটে। বিকাল ৪টা থেকে চলবে সন্ধ্যায় ৭টা পর্যন্ত।
×