ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী

তেল চর্বি সম্বন্ধে যা জানি, যা জানি না

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

তেল চর্বি সম্বন্ধে যা জানি, যা জানি না

যদি বলি, গাজরে এমনকি লেটুসপাতায়ও সামান্য চর্বি আছে। বিশ্বাস করতে চাইবেন না, কিন্তু সত্যি সামান্য চর্বি আছে এদের মধ্যেও। আর সেই চর্বি খুবই স্বাস্থ্য হিতকর। চর্বি মানেই মন্দ, এমন ধারণা ভুল। বেঁচে থাকতে হলে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে, শরীরের জন্য কিছু চর্বি চাই। চর্বি থেকে আসে শক্তি, খাবারে চর্বি থাকলে শরীরে ভিটামিন, ‘এ’, ‘ডি’ ‘ই’ ও ‘কে’ শোষিত হয়। তেল চর্বি থাকলে খাবারও স্বাদ হয়, পেট ভরাট মানে চুল ও ত্বকের হয় সুস্বাস্থ্য। মাখন, মার্জারিন এসবের চেয়ে তৈল অনেক হিতকর। শরীরের ওজন যারা কমাতে চার, তাঁদের জানা ভাল, মাখনের ক্যালেরির পরিমাণ জলপাই তেলের সমান হলেও জলপাই তেল মাখন থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ মাখনে রয়েছে মন্দ রকমের চর্বি। স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্সফ্যাট। সাধারণভাবে কথাটি সত্যি। তেলে রয়েছে ভাল চর্বি। কঠিন চর্বি রয়েছে অস্বাস্থ্যকর চর্বি। মন্দ চর্বিগুলো স্বাস্থ্যের জন্য এত মন্দ কেন? মন্দ চবিগুলো হলো, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্সফ্যাট। এসব চর্বি খেলে রক্তে বেড়ে যায় মন্দ কোলেস্টেরোল ‘এলডিএল’। ধমনির গায়ে কোলেস্টেরোল পুজ জমাট হতেও সাহায্য করে (চষধমঁব)। এ থেকে ক্রমে হতে পারে হার্টএ্যাটাক ও স্ট্রোক। শক্ত মার্জারিন, মাখন এবং শটেনিং এগুলোতে রয়েছে মন্দ চর্বি। কেবল শিল্পোন্নত দেশই নয়, আজকাল মধ্যআয় এমনকি নিম্ন আয়ের দেশগুলোতেও বিশেষ করে তরুণরা ফাস্টফুড খাচ্ছে প্রচুর, মন্দ চর্বিও খাচ্ছে তেমনই। এদের মধ্যে পিৎজা ও পনির থেকে পাচ্ছে মন্দ চর্বি বেশি। যে চর্বি ধমনিতে চর্বির দলা জমায় সেই স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি আছ গোস্ত ও দুধজাত দ্রব্য। মাংসের পাঁজর, বার্গার, আইসক্রিম এসবেও আছে প্রচুর মন্দ চর্বি। আর একটি ভয়ঙ্কর চর্বি হলো ট্রান্সফ্যাট। হৃদযন্ত্রের জন্য দুফলা ছুরির মতো। এসব চর্বি খেলে রক্তে যেমন বাড়ে মন্দ কোলেস্টেরোল, তেমনি কমে হিতকর এইচডিএল কোলেস্টেরোল। প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন বিভিন্ন ফ্লাই, ডোনাট, কেক, পেস্ট্রি, বিস্কুট এসবগুলোতে আছে ট্রান্সফ্যাট। খাবারের লেবেলে আংশিক হাইড্রোজিনেটেড ফ্যাট লেখা থালে বুঝতে হবে এতে রয়েছে ট্রান্সফ্যাট। লেবেলে ট্রান্সফ্যাট শূন্য লেখা দেখে বস্তুটি ক্রয় করতে হবে। মার্জারিনের কঠিন স্টিক মাখন থেকেও খারাপ। কারণ এতে আছে প্রচুর ট্রান্সফ্যাট। তবে কিছু মার্জারিন আছে যাতে আছে উদ্ভিজ স্টেরোল, সেগুলো তেমন ক্ষতিকর নয়। অনেকে বলেন, লাইট ওলিভ তেলে, এক্সটাভার্জিন ওলিভ তেল থেকে কম ক্যালরি রয়েছে। কথাটি ঠিক নয়। রং, সুবাস ও স্বাদ হলো বড় কথা। রং ও সুবাস বোঝাতে লাইট ওলিভ তেল, ভার্জিন ও এক্সটাভার্জিন ওলিভ তেল, স্বাভাবিক ওলিভ তেল থেকে কম অম্লধর্মী। এক্সটাভার্জিন তেলে আছে কড়া সুবাস, ফলের সুবাস। কন তেল থেকে জলপাই ভাল। কেন? দুটো তেলেই ক্যালরি সমান, বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। কোনটাতেই কোলেস্টেরোল। জলপাই তেলে আছে খুব বেশি মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা রক্তের কোলেস্টেরোল কমাতে সহায়ক। জলপাই তেলে তুলনামূলক আছে বেশি কোষরক্ষক এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। জলপাই তেল ঠিকমতো সংরক্ষণ করলে অনেক বছর ভাল থাকে। শীতল পানির মাছ যেমন, টুনা সাডিন, স্যামনে আছে স্বাস্থ্যহিতকর ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড। কমায় হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি। কি পরিমাণ চর্বি গ্রহণ করছেন এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কি ধরনের চর্বি খাচ্ছেন। হৃদস্বাস্থ্যের জন্য তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। জাংকফুড যারা খান তাদের জন্য খবর। প্রাতরাশে একটি ডোনাট খেলে এবং মধ্যাহ্ন আহারে একটি বড় প্যাকেট ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেলে মন্দ চর্বি প্রতিদিন যতটুকু খেলে চলে এর পাঁচ গুণ বেশি খাওয়া হয়। একটি ডোনাট খেলে খাবারে ৩.২ গ্রাম অস্বাস্থ্যকর চর্বি যোগ হয়, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই থেকে আসে ৬.৮ গ্রাম। প্রতিদিন শূন্য বা <১% এর কম ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের পরামর্শ দেন আমেরিকান ২টি এ্যাসোসিয়েশন। প্রতিদিন কত চামচ তৈল গ্রহণ করা উচিত তা নির্ভর করে বয়স, জেন্ডার, কর্মক্ষমতা ও কাজের ওপর। মেয়েদের জন্য ৫-৬ চা চামচ, পুরুষদের জন্য ৬-৭ চা চামচ। এছাড়া তেল আমরা পাচ্ছি মাছ, বাদাম, ভোজ্যতেল, স্যালাড ড্রেসিং থেকে। ম্যাবিনেটকবা, ড্রেসিং, চিপস এগুলোর জন্য সবচেয়ে ভাল ফ্লাক্সমিড তেল।
×