ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শীতে পিকনিক স্পট

প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ঢল, উৎসবমুখর পর্যটন কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ঢল, উৎসবমুখর পর্যটন কেন্দ্র

বাবুল হোসেন ॥ শীত আসার শুরু থেকেই নানান শ্রেণী-পেশার মানুষের ঢল নেমেছে ময়মনসিংহের প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক রূপের লীলাভূমি বলে খ্যাত পিকনিক ও পর্যটন স্পটগুলোতে। প্রতিদিন প্রকৃতি প্রেমিক হাজারও মানুষের পদচারণায় এবং গল্প-আড্ডায় জমজমাট ও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহের গহীন শালবন আচ্ছাদিত বন জঙ্গলের পিকনিক স্পট ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো। সেলফি তোলা, বনের ভেতর ঘুরে বেড়ানো, বানরের সঙ্গে মিতালী, ওয়াচ টাওয়ারে উঠে বন দেখা, একসঙ্গে ছবির ফ্রেমে বন্ধুদের বেঁধে রাখাসহ কোনকিছুই বাদ যাচ্ছে না আনন্দ ভাগাভাগি আর মাতামাতি থেকে। গত নবেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব মুখরতা চলবে আগামী মার্চ পর্যন্ত। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ অঞ্চলের পিকনিক ও পর্যটন কেন্দ্রগুলো সাজানো হয়েছে বাহারি ও বর্ণাঢ্য সাজে। প্রাকৃতিক পরিবেশের কটেজগুলো মেরামত ও সংস্কার করে পর্যটকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়েছে। দেশ বিদেশের পর্যটকদের গাইডসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে ময়মনসিংহ ট্যুরিজম ক্লাব। দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের টাঙ্গাইলের মধুপুর ও রসুলপুর, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, শেরপুরের গজনী, মধুটিলা, জামালপুরের লাউয়াছড়া ও নেত্রকোনার বিজয়পুরসহ সব পর্যটন স্পটকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে ট্যুরিজম ক্লাব নানামুখী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরীফ খন্দকার। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের শেরপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা ও জামালপুরসহ ময়মনসিংহ জেলায় রয়েছে অসংখ্য পিকনিক স্পট ও পর্যটন কেন্দ্র। নানান ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এসব এলাকার পিকনিক ও পর্যটন স্পট নিয়ে দেশী বিদেশী পর্যটকদের রয়েছে বিশেষ আগ্রহ। বিশেষ করে একহারা গড়নের গহীন শালবনে আচ্ছাদিত পাহাড় টিলার সঙ্গে প্রাকৃতিক লেক আর পাহাড়ি ঝর্ণার কারণে পর্যটকদের কাছে প্রথম পছন্দ এসব স্পট। আর তাই প্রতিবছরের মতো এবারও শীতের শুরুতেই ঢল নেমেছে প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের টাঙ্গাইলের মধুপুর বন ইতিহাস খ্যাত। শাল গজারিসহ বাহারি সব বৃক্ষরাজির গহীন এই বনের ভেতর রয়েছে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট। গারো আদিবাসী অধ্যুষিত এসব স্পটের টিন-কাঠের দু’তলা বাংলো ও কটেজগুলো দেখার মতো। এখানে রয়েছে উঁচু ওয়াচ-টাওয়ার। আরও আছে প্রাকৃতিক লেকসহ অনেক কিছু। এক সময় এসব স্পটে বাঘ-ভাল্লুক, হাতি, হরিণ, হনুমান, সজারু ও সাপসহ নানান জাতের হিংস্র বন্যপ্রাণীর দেখা মিললেও আজকাল বানর আর কিছু বনমোরগ ছাড়া তেমন কোন প্রাণী চোখে পড়ে না। শালবন উজাড়ের সঙ্গে সঙ্গে বনের ভেতর বসতি গড়ে ওঠায় এবং ফায়ারিং রেঞ্জ গড়ে তোলায় বন ছেড়ে পালিয়েছে অনেক প্রজাতির প্রাণী। তবে রসুলপুর রেঞ্জের ভেতর গড়ে তোলা হয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা। কিন্তু এখানে কিছু হরিণ আর বানর ছাড়া তেমন কিছু দেখার নেই। তারপরও প্রকৃতি প্রেমিক মানুষ ও পর্যটক শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বনভোজনের জন্য এসব স্পটে এসব ভিড় জমাচ্ছেন ক্ষণিকের জন্য স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে। টাঙ্গাইলের মধুপুরের রসুলপুর রেঞ্জের ‘জলুই’ অন্যতম পিকনিক স্পট। একহারা গড়নের বিশাল সাইজের শাল আর গজারির সঙ্গে এ স্পটে রয়েছে বহেরা, কাইকা, শিদা, আজুকি, বট। আম জাম লিচু খারাজুরা আমলকি আর ডেফল তো আছেই। সূর্যের আলো পৌঁছায় নাÑ এমন গহীন এ বনের ভেতর যে কারো গা ছমছম করতে পারে। বিশেষ করে নতুন পর্যটকদের তো এমন হতেই পারে। যে কোন সময় ঘিরে ধরতে পারে দুষ্টু বানরের দল। কলা আর বাদাম বিস্কুট খেতে দিলেই ফের বিদায় হয়ে যায় এরা। পর্যটক ও পিকনিক পার্টিকে বাড়তি আনন্দ দিয়ে আসছে এই কালো মুখের বানরগুলো। জলুই স্পটে পুরনো দু’তলা বাংলোর পাশাপাশি এখন নতুন করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। আছে সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর ঐতিহ্যের কটেজ। কেবল দিনের বেলা পিকনিক পার্টি কিংবা পর্যটকদের জন্য এসব কটেজ বাংলো ভাড়া দেয় বনবিভাগ। জলুই বাংলোর কেয়ারটেকার সানোয়ার জানান, ডাবল রুম ১ দিনের জন্য ২৫০০ টাকা, বাংলো ১২৫০ টাকা এবং কটেজ ৬৫০ টাকা। স্থানীয় সুমী নার্সারির মালিক ওমর শরীফ জানান, ময়মনসিংহ জেলা সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার ও টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরের এই জলুই পিকনিক স্পটে বছরজুড়ে মোটামুটি ভিড় থাকলেও শীত মৌসুমে হয়ে ওঠে রীতিমতো উৎসবমুখর। প্রতিদিনই দেশের নানান প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার পর্যটক ও পিকনিক পার্টি বনভোজন করতে আসছে এই জলুই স্পটে। কাছাকাছি মধুপুর, রসুলপুর ও কাকরাইদসহ বেশ কয়েকটি স্পট রয়েছে দেখার মতো। শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গজনী ও নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকোপার্ক, জামালপুরের শ্রীবর্র্দীর লাউচাপড়া পিকনিক স্পট, নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বিজয়পুরের সাদামাটির খনিজ, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের আদিবাসী গারো পাহাড় ও ফুলবাড়িয়ার আলাদীন্স পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন ও পিকনিক স্পটেও শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের ভিড়।
×