ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই

গ্রামীণ অবকাঠামো ॥ সংস্কারের অর্থ লুট

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

গ্রামীণ অবকাঠামো ॥ সংস্কারের অর্থ লুট

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই। এই প্রবাদের প্রমাণ মিলেছে ধুনট উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের প্রকল্পে। যেখানে প্রকল্প দেখিয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ও কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) বরাদ্দ নিয়ে বেশিরভাগ প্রকল্পেই কোন কাজ করা হয়নি। মসজিদের সোলার প্যানেল স্থাপনের বরাদ্দ নিয়ে তা না করেই ‘কাজ হয়েছে’ রিপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এভাবে ধুনট উপজেলার পৌর এলাকাসহ দশ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে অন্তত ৮৫ প্রকল্পের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। এইসব প্রকল্পে বরাদ্দ নেয়া হয় খাদ্যশস্যসহ প্রায় এক কোটি টাকা। ধুনটের বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এইসব প্রকল্প পরিদর্শন করে ৮৫ প্রকল্পের অনুকূলে কোন কাজ হয়নি দেখতে পেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এদিকে খোঁজ খবর করে জাানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন সংস্কার কাজের ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দ করিয়ে নেয়ার পর ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) নিয়ে তা উত্তোলন করার একটি বড় চক্র তৈরি হয়েছে। তারাই প্রকল্পের কথিত কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি সংগ্রহ করে ফরমে এঁটে দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে দাখিল করে। তারপর বাইপাস করে তদবির শুরু করে। এক পর্যায়ে তা পাশ করেও আনে। এরপর কথিত প্রকল্পের (প্রকারন্তরে যা ভুয়া) জন্য বরাদ্দ কাবিখা ও কাবিটা আত্মসাত করে। এই কাজে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা যায়। যারা প্রভাব খাটায় এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ওপর। বিষয়গুলো বর্তমানে ওপেন সিক্রেট হয়ে গেছে। সূত্র জানায় ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় ধুনট উপজেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে সাধারণ ও বিশেষ কোঠায় কাবিখা কর্মসূচীতে ৩শ’ ১৬ টন এবং টেস্ট রিলিফে (টিআর) ২শ’ ৬৫ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ করা হয়। এ ছাড়াও টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ কোটি ৭৯ লাখ ৬ হাজার টাকা। এলাকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির যোগসাজশে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এবং কথিত প্রকল্পের সঙ্গে জড়িতরা বরাদ্দ নেয়। এর মধ্যে ভুয়া প্রকল্প, একই জায়গায় একাধিক প্রকল্প দেখানো হয়। পরবর্তী সময়ে অর্থ ও খাদ্যশস্য উত্তোলন করা হয়। কাগজে কলমে শতভাগ কাজ হয়েছে এমনটি প্রদর্শন করে বরাদ্দ পাওয়া খাদ্যশস্য ও নগদ অর্থ আত্মসাত করা হয়। এইসব প্রকল্পের সমাপ্তি প্রতিবেদন না দিয়ে ইউএনও বদলি হয়ে যান। তার স্থলাভিষিক্ত হন বর্তমান ইউএনও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। পিআইও রিয়াজুল ইসলাম গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের প্রকল্পের সমাপ্তি প্রতিবেদন স্বাক্ষরের জন্য ফাইল উপস্থাপন করেন। ইউএনও তার যোগদানের আগের প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা তা না দেখে স্বাক্ষর না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন এলাকা পরিদর্শন। তিনি ৪শ’ ৪৪ প্রকল্পের মধ্যে ৮৫ প্রকল্প পরিদর্শন করে দেখতে পান সেখানে কোন কাজ হয়নি। বাস্তবায়ন না হওয়া এইসব প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ধুনট এলাকার গৃহীত প্রকল্পের বেশিরভাগই ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয়নি। সংশ্লিষ্ট উপকারভোগীদের অগোচরে কোথাও কোথাও ভুয়া কমিটি গঠন করে কাগজপত্রে বরাদ্দ নেয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন না করে সরকারী অর্থ ‘ভিন্নভাবে’ খরচ করা হয়েছে। যে কারণে কোন সমাপ্তি প্রতিবেদন দেয়া গেল না। এই বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পের কাজ ঠিকমতো হয়েছে। কোন কাজগুলো হয়নি এই বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। খোঁজ খবর করে জানা যায় এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় প্রবাদের কাজীর গরু কিতাবে রেখে গোয়াল ফাঁকা করা হয়েছে।
×