ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জুডোকা বাবার উশুকন্যা শিলার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

জুডোকা বাবার উশুকন্যা শিলার স্বপ্ন

রুমেল খান ॥ চীনা ‘উশু’ শব্দটি এসেছে মান্দারিন ভাষা থেকে। এর আভিধানিক অর্থ হলো ‘উ’ অর্থ মার্শাল এবং ‘শু’ অর্থ আর্ট। উশু খেলাটি হলো চীনা সংস্কৃতির অংশ এবং তাদের জাতীয় খেলা। এটা কয়েক হাজার বছর ধরে চীনে চর্চিত হয়ে আসছে। প্রথমে এর উৎপত্তি ঘটান বৌদ্ধ ভিক্ষুরা, পরবর্তীতে এর কৌশলগুলো সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। উশু হলো বিজ্ঞানভিত্তিক কুংফু। কুংফু মূলত বিভিন্ন প্রাণীর আত্মরক্ষা বা রণকৌশল, যা মানুষ চর্চা করে। ২০১০ সালে একাদশ এসএ গেমসে উশুতে বাংলাদেশ ২টি স্বর্ণপদক অর্জন করে। এর আগে সাউথ এশিয়ান উশু প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ ২টি স্বর্ণ জিতেছিল। উশু খেলাটিকে মূলত ২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। থাউলো বা প্রদর্শন এবং সানশো বা যুদ্ধ । বাংলাদেশ আনসারের হয়ে খেলে শিলা আক্তার। পঞ্চদশী (বিজয় দিবসের একদিন আগে জন্ম) শিলা আনসারে যোগ দেয় ২০১৩ সালে। এর আগে খেলতো রাজশাহী বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার হয়ে। জন্ম রাজশাহীর বোয়ালিয়ার ছোট বনগ্রামে। রাজশাহীতেই পড়ছে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষে। বিভাগীয় উশু প্রতিযোগিতায় ভাল ফল করার সুবাদেই আনসারে যোগ দেয়ার পথটা খুলে যায় শিলার জন্য। মূলত শিলার কোচ শরিফুল ইসলাম সাগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই আনসারে চাকরি পায় শিলা। উশুতে শিলার ইভেন্ট দুটি। খালি হাত এবং লাঠি খেলা। ‘মার্সেল জাতীয় মহিলা উশু চ্যাম্পিয়নশিপে’র প্রথম আসর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের জিমনেসিয়ামে শেষ হয় বুধবার। এই আসরে লাঠি খেলায় স্বর্ণ জেতে শিলা। আর খালি হাত ইভেন্টে পায় রৌপ্যপদক। জাতীয় পর্যায়ে এর আগেও একাধিক সাফল্য কুড়িয়েছে শিলা। এ প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘পুরোপুরি মনে নেই। কমপক্ষে ৩-৪টি স্বর্ণ জিতেছি তো বটেই।’ শিলার বাবা আমিনুল ইসলাম ছিলেন জুডোকা। জাতীয় পর্যায়েও জুডো খেলেছেন। তার সর্বোচ্চ সাফল্য ছিল তাম্রপদক জেতা। তার স্বপ্ন ছিল মেয়েকেও খেলোয়াড় বানানোর। মেয়ে খেলোয়াড় হিসেবে সাফল্য পাবে, দেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনবে ... কোন সন্দেহ নেই, মেয়ে এখন সেই পথেই হাঁটছে। শুধু জাতীয় পর্যায়েই নয়, শিলার সাফল্য আছে আন্তর্জাতিক উশু প্রতিযোগিতাতেও। ২০১৪ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত একটি প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ জিতে শিলা। সেটাই তার ক্যারিয়ারের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ও সেরা সাফল্য বা অর্জন। উশু নিয়ে ভবিষ্যত লক্ষ্য? ‘দেশের বাইরে গিয়ে খেলতে চাই এবং স্বর্ণ জেতার স্বপ্ন দেখি। চাই বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে। এজন্য কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলনের বিকল্প নেই।’ উশু খেলাতে আসার আগে শিলা কারাতে খেলতো। এরপর বাংলাদেশে যখন উশুর চর্চা শুরু হলো, তখন শিলা উশু খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং এই খেলাটিকেই বেছে নেয়। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় মহিলা উশু চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের ইভেন্টে স্বর্ণ জেতার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ^াস ছিল? শিলার সাবলীল জবাব, ‘আমি খেলার আগে মোটেও নার্ভাস ছিলাম না। বরং দৃঢ়বিশ^াস ছিল আমিই জিতব। কোচ দিলদার হোসেন দিলুর নিবিড় প্রশিক্ষণেই আমার এই সাফল্য। আমার কোচকে এজন্য ধন্যবাদ।’ বাংলাদেশে মহিলা উশু খেলার ভবিষ্যত কেমন? শিলার অভিমত, ‘আমি মনে করি উশুতে, বিশেষ করে মহিলা উশুতে বাংলাদেশ আরও অনেক এগিয়ে যাবে এবং অনেক আন্তর্জাতিক সাফল্য কুড়িয়ে আনতে সক্ষম হবে।’ জুডোকা বাবার উশুকন্যা শিলার উশু নিয়ে সব সুনীল স্বপ্ন আগামীতে পূরণ হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×