ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৩ হল বন্ধ ঘোষণা ॥ উপাচার্য অবরুদ্ধ

শাবি থেকে দেশী অস্ত্র হাতবোমা ও গুলি উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

শাবি থেকে দেশী অস্ত্র হাতবোমা ও গুলি উদ্ধার

শাবি সংবাদদাতা ॥ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল ক্লাস-পরীক্ষাসহ তিনটি আবাসিক হল ১৭ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোঃ ইশফাকুল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয়া হয়। জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনার পর পুলিশ রাতে শাহপরাণ, বঙ্গবন্ধু ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলে অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র, হাতবোমা ও গুলি উদ্ধার করে। পরে সকালে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ক্লাস-পরীক্ষাসহ হল বন্ধের সিদ্ধান্ত আসে। ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মুন্সী নাসের ইবনে আফজাল জনকণ্ঠকে বলেন, ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলায় ১৫ দিনের জন্য হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সকাল আটটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আপাতত সকল ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে। এদিকে ক্যাম্পাস ১৭ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূইয়াকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আন্দোলনকারী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খানের অনুসারীদের সঙ্গে জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ, সহসভাপতি অঞ্জন রায় ও সাজেদুল ইসলাম সবুজের অনুসারীদের বিরোধের জেরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া শুরু হয়। এ সময় অন্তত ১৫টি হাতবোমা ফাটানো হয় এবং গুলির শব্দ শোনা যায়। পরে সাঈদ-অঞ্জন-সবুজ পক্ষের কর্মীদের ধাওয়ায় ইমরানের অনুসারীরা উপাচার্য ভবনে ঢুকে আশ্রয় নেয়। অন্যপক্ষ তখন শাহপরাণ হলের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় ওই হলের কয়েকটি কক্ষে ভাংচুর চালানো হয় বলেও ইমরান সমর্থকরা অভিযোগ করেন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের তিনটি আবাসিক হলে রাত ১২টা থেকে চারটা পর্যন্ত পুলিশের সহযোগিতায় তল্লাশি চালানো হয় বলে শাহপরাণ হলের প্রাধ্যক্ষ মোঃ শাহেদুল হোসাইন জানান। তিনি বলেন, শাহপরাণ হল থেকে ৫০ পিস জিআই পাইপ, ১০টি রড, দুটি রামদা, চারটি ককটেল ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া বেশকিছু মাদকদ্রব্যও পাওয়া যায়। তবে কাউকে আটক করা হয়নি। বঙ্গবন্ধু হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের তল্লাশিতে কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানান হলদ্বয়ের প্রাধ্যক্ষ হাসান জাকিরুল ইসলাম ও শরদিন্দু ভট্টাচার্য। এদিকে বুধবার ভোর পর্যন্ত তল্লাশির পর সকাল আটটার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ আসায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সকালে তিনটি হলের ভেতরে দফায় দফায় বিক্ষোভ করেন। মুজতবা আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাবিল উদ্দিন বলেন, ঘুম থেকে উঠেই শুনি হল ছাড়তে হবে। এখন ১৭ দিনের জন্য আমরা কোথায় যাব। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহপরাণের প্রাধ্যক্ষ শাহেদুল হোসাইন বলেন, সংঘর্ষ এড়াতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জালালাবাদ থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, উত্তেজনার কারণে হলগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল ছেড়ে যাওয়ার পর পরিস্থিতি এখন শান্ত। এদিকে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতিতে পর্যালোচনায় বুধবার বেলা ১১টায় সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূইয়া। সভা শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে উপাচার্য তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপক করেছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে আগামী ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল ক্লাস-পরীক্ষাসহ ছাত্রদের আবাসিক হল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে ছাত্রীদের হল যথারীতি খোলা থাকবে। মঙ্গলবারের ঘটে যাওয়া ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলমকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শাহপরাণ হলের প্রাধ্যক্ষ শাহেদুল হোসাইন, বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হাসান জাকিরুল ইসলাম ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য এবং সহকারী প্রক্টর আলমগীর কবির। কমিটিকে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। উপাচার্য অবরুদ্ধ ॥ শাবি ক্যাম্পাস ১৭ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণার প্রতিবাদে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আমিনুল হক ভূইয়াকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছে আন্দোলনকারী সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর ২টা থেকে প্রশাসনিক ভবন-২-এর কার্যালয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর আগে ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে আন্দোলনকারীরা। সাংস্কৃতিক কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন অন্যদিকে প্রবাহিত করতে উপাচার্য ক্যাম্পাসে দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে দেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ক্যাম্পাস সচল করার ঘোষণা না দেবেন ততক্ষণ আমরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখব। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল হক ভূইয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ব্যাপারে সহকারী প্রক্টর জাহিদ হাসান বলেন, আমরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। জরুরী মিটিং চলছে, মিটিং শেষে সিদ্ধান্ত নেব।
×