ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফেরদৌসী খানম লাকী

এক নারীর বছর

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২২ ডিসেম্বর ২০১৬

এক নারীর বছর

আজ বছর শেষের হিসাব-নিকাশ যেই লিখতে বসেছি তখনই ফিরে যেতে হচ্ছে এ বছরের শুরুতে। অনেক কিছু লেখার থাকলেও মনে হচ্ছে কিছুই লিখতে পারব না। সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তবে লিখতে হবে কারণ এ বছরটি বিশেষ কারণে স্মরণীয়। প্রথমত, এ বছরটি হাসপাতালময় বছর। সারাটি বছর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। আমার মা, শাশুড়িমা, বড়বোন, স্বামী, অফিস সহায়ক সকলকে দেখতে যাওয়ার জন্য। কখনও কি ভেবেছিলাম এ বছরটি এ রকম হবে আমার জন্য! জানুয়ারির শুরুতেই অসুস্থ মাকে সুস্থ করে ভাই-বোনেরা মিলে আনন্দ করতে করতে মুন্সীগঞ্জের মায়ের প্রিয় জায়গায় তাঁকে সুস্থ অবস্থায় রেখে এলাম। কিন্তু শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়াতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ঢাকায় এলেন। ভর্তি হলেন হাসপাতালে- সিসিইউআইসিইউতে, টানা দু’মাস কেবিনে। তারপর বাসা। এর মধ্যে শাশুড়িমা গলব্লাডার ব্যথা নিয়ে ভর্তি হলেন হাসপাতালে, পরবর্তীতে মিরপুর ১১তে এক হাসপাতালে, সেখান থেকে ধানম-ি আরেক হাসপাতালে ১৫ দিন থেকে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেন। এরই মাঝে মা আবার অসুস্থ হলেন। আবার ভর্তি হলেন হাসপাতালে। ৫ অক্টোবর, ২০১৬ অফিসে খবর এলো আমার স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অফিস ফেলে কোনরকমে সেখানে গেলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে পরদিনই তিনি ছাড়া পেলেন। এরপর বড়বোন কিডনি সমস্যা নিয়ে ভর্তি হলেন হাসপাতালে। পনেরো দিন হাসপাতালে থাকে তো সাত দিন বাসায়। আমাদের অফিস সহায়ক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ভর্তি হলো হাসপাতালে। সেখানেও গেলাম দু’দিন। বছরের দু’টি ঈদ আমাদের হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। জানুয়ারি ১৬- নবেম্বর ১৬ পর্যন্ত হাসপাতালে যেতে হয়েছে অনেকটা সিরিয়াল ধরে। সুখবরের মাঝে এ বছর আমার পুত্রদ্বয়ের শিক্ষাক্ষেত্রে ভাল রেজাল্ট প্রাপ্তি। বড় ছেলের দিল্লীতে ঘুরে আসা, আমার কিছু লেখা বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে বের হওয়া। তারপর, বছরের শেষ দিকে ২৩ নবেম্বর, ২০১৬। আমার আনন্দময় জন্মদিনে দু’পুত্র আমাকে বরাবরের মতো এবারও জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। আমিও প্রতিউত্তর দিলাম। আর মনে মনে ভাবলাম দু’জন আজও খুবই অসুস্থ একজন আমার মা আরেকজন বড়বোন। সকালে দু’জনকেই ফোন করব। ফোনে দু’জনের খবর ভাল পেলাম না। ব্যস্ততার কারণে চট করে অফিস থেকে বের হতে পারলাম না। এদিকে খবর আসছে মাকে বিশেষ এক কার্ডিয়াক হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। সন্ধ্যায় বাসায় এলাম বড় ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাব বলে। কিন্তু, আমার জন্মদিনে আমাকে কিছু না বলে সন্ধ্যা ৬.২০ মিনিটে মা চলে গেলেন চির শান্তির দেশে। হায়রে ব্যস্ততা! আগারগাঁও তালতলা সরকারী কলোনি, ঢাকা থেকে
×