ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

নারী কর্মীদের সুরক্ষায় সৌদিতে ‘গেস্ট হাউস’ নির্মাণের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৬

নারী কর্মীদের সুরক্ষায় সৌদিতে ‘গেস্ট হাউস’ নির্মাণের ঘোষণা

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ ‘গেস্ট হাউস’ নির্মাণ করার ঘোষণা দিয়েছে। দেশটিতে নারী কর্মীরা কোন প্রকার সমস্যায় পড়লে বা নির্যাতনের শিকার হলে তারা ১৫ দিন পর্যন্ত ওই গেস্ট হাউসে থাকতে পারবেন। সৌদি আরবের ডেপুটি মিনিস্টার অব কাস্টমার রিলেশনস, মিনিস্ট্রি অব লেবার এ্যান্ড সোসাল ডেভেলপমেন্ট আদনান আব্দুল্লাহ আল নুয়াইম সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে এ ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি এলাকায় গেস্ট হাউস নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। গেস্ট হাউস থেকে নারী কর্মীরা ইচ্ছে করলে নতুন মালিকের অধীনে চাকরি নিয়ে যেতে পারবেন। দেশে ফিরে আসারও সুযোগ পাবেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সৌদি আরবের ডেপুটি মিনিস্টার কর্মী নিয়োগ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। ওই বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী সৌদিমন্ত্রীকে নারী কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, আমরা সৌদিতে নারী কর্মী নিয়োগ করতে চাই। কিন্তু সৌদি গৃহকর্তাদের বিরুদ্ধে নারী কর্মীদের নির্যাতনের অনেক অভিযোগ আসছে। এভাবে চলতে থাকলে নারী কর্মীরা এক সময় নিজেরাই যেতে চাইবে না। এ সময় সৌদিমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তারাও জানেন। এ কারণে নারী কর্মীদের জন্য সৌদি আরবের বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে গেস্ট হাউস। কোন নারী কর্মী যদি সমস্যায় পড়েন বা নির্যাতনের শিকার হন তাহলে ওই কর্মী গেস্ট হাউসে গিয়ে থাকতে পারবেন। ১৫ দিন থাকে বিনা টাকায় গেস্ট হাউসে খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এরপর যদি তিনি অন্য কোথাও কাজ নিতে চান সে ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে। আর যদি তিনি দেশে ফিরতে চান সে ব্যবস্থাও করে দেয়া হবে। নারী কর্মীদের সুরক্ষার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এমন ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। ওই বৈঠকে সৌদিমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশি নারী কর্মীদের যেসব সমস্যা রয়েছে তা সৌদি সরকার সমাধানের জন্য কাজ করছে। কর্মীদের মালিকের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মালিক যদি কোন সমাধান না দেন সেক্ষেত্রে নতুন মালিকের অধীনে কর্মসংস্থান নিতে পারবেন। বৈঠকে অভিবাসন খরচ কমানোর জন্য ভিসা ট্রেডিং বন্ধ করতে হবে। ভিসা ট্রেডিংয়ের সঙ্গে কোন সৌদিবাসী যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৌদি আরবে অবস্থানরত কোন বাংলাদেশী কর্মীর মৃত্যু হলে তার মৃতদেহ দেশে ফেরত আনা এবং মৃত ব্যক্তির ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওনা দ্রুত পরিশোধ নিশ্চিত করা হবে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বাংলাদেশ থেকে সকল সেক্টরে অধিক পরিমাণ কর্মী নেয়ার জন্য সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান। বিভিন্ন সেক্টরে আরও বেশি দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্যও অনুরোধ করেন। এদিকে সৌদি আরবে নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের বিষয় নিয়ে দেশের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন নারী কর্মীদের সুরক্ষার দাবি জানিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর আগে কয়েকটি সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় নারী কর্মীরা মানসিক শারীরিক ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসছেন। এমন ঘটনা যাতে না হয় তার জন্য নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যাশনাল এ্যালাইন্স ফর মাইগ্রেশনস রাইটস বাংলাদেশ এমন দাবিতে ইতোমধ্যে সচেতনামূলক কাজ করে যাচ্ছে। এ সংগঠনটি বিদেশে যেসব নারী কর্মী গিয়েছে এবং যাবেন তাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বিশেষ করে এশিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোতে যারা কর্মী হিসেবে যাচ্ছেন তাদের অধিকার রক্ষায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নজর রাখার জন্য আহ্বান জানায়। অভিবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকার নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে। কর্মীরা এখন আর আগের মতো প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না। সরকার জনশক্তি রফতানিকারকদের দক্ষতা, প্রশিক্ষণের জন্য গাইডলাইন তৈরি করেছে। এই গাইড লাইনের বাইরে কারও কোন কিছু করার সুযোগ নেই। বিশেষ করে মহিলা কর্মীদের বিদেশে সুরক্ষা দেয়ার বেলায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশ নিয়ে মন্ত্রণালয় একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। এই গাইডলাইনে নারী কর্মীদের সুরক্ষা বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এটা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে।
×