ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ রাসেল ২-০ মোহামেডান, ৪০ বছর বয়সে ৪০ নম্বর জার্সি পরে রজনীর ২৩ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের অবসান

রজনীর বিদায়ী ম্যাচে শেখ রাসেলের জয়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

রজনীর বিদায়ী ম্যাচে শেখ রাসেলের জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে বৃহস্পতিবার অনায়াস জয় কুড়িয়ে নিয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড। ২০১২-১৩ মৌসুমের লীগ চ্যাম্পিয়নরা ২-০ গোলে হারায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডকে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে (রাতে অনুষ্ঠিত) রাসেল প্রথমার্ধেই সব গোল করে। ম্যাচের ৫ মিনিটে শাখাওয়াত হোসেন রনি এবং ৪৩ মিনিটে জামাল ভুঁইয়া (পেনাল্টি থেকে) গোল দুটি করেন। লীগের প্রথম লেগেও মোহামেডানকে ১-০ গোলে হারিয়েছিল রাসেল। নিজেদের ২০তম ম্যাচে এটা রাসেলের ষষ্ঠ জয়। ২৪ পয়েন্ট তাদের। পয়েন্ট টেবিলে দু’ধাপ উন্নতি হলো তাদের। তারা এখন সপ্তম স্থানে। ব্রাদার্সেরও সমান পয়েন্ট। তবে গোল তফাতে এগিয়ে থাকায় ব্রাদার্স আছে ষষ্ঠ স্থানে। সমান ম্যাচে এটা ১২ বারের লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের অষ্টম হার। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সাদা-কালোরা আছে আগের দশম স্থানেই (১২ দলের মধ্যে)। এ হারে রেলিগেশনে পড়ার আশঙ্কা রয়েই গেল তাদের। বৃহস্পতিবারের রজনীতে বিদায় নেয়াটা নিশ্চয়ই এর চেয়ে আর ভাল হতে পারতো না রজনী কান্ত বর্মণের জন্য। ১৯৯৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। শেষটা করলেন শেখ রাসেলের হয়ে। বৃহস্পতিবার ম্যাচের শুরু থেকেই খেলান হয় রজনীকে। এমনকি বিদায়ী ম্যাচে তার বাহুতে অধিনায়কত্বের বাহুবন্ধনীও পরিয়ে দেয়া হয় সম্মানের সঙ্গে। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হওয়ার মিনিট খানেক আগে সেন্টারব্যাক রজনীকে মাঠ থেকে তুলে নেন রাসেলের কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন আরেক ডিফেন্ডার রাশেদুল ইসলাম মণি। সঙ্গেই সঙ্গেই শেষ হয়ে গেল রজনী-অধ্যায়। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাসেল-মোহামেডানের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা এবং সমর্থকদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন রজনী। দীর্ঘ সময় খেলেছেন মোহামেডানে। তাই দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু তো রজনীকে পরিয়ে দিলেন মোহামেডানের জার্সি। মজার ব্যাপার- ৪০ বছর বয়সে রজনী যখন বৃহস্পতিবারের এক রজনীতে অবসর নিচ্ছেন তখন তার পরনেও ছিল রাসেলের ৪০ নম্বর জার্সি। ম্যাচ শেষে রজনী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘২০১৩-১৪ মৌসুম থেকেই খেলায় অনিয়মিত ছিলাম। আমার সৌভাগ্য- এতদিন পর মাঠে ফিরতে পেরেছি, মাঠ থেকে বিদায় নিতে পেরেছি। এতে আমি গর্বিত। এজন্য দেশবাসী-সমর্থক সবার কাছে কৃতজ্ঞ। বিশেষ করে কোচ মানিক ভাই ও শেখ রাসেলের কাছে কৃতজ্ঞ, তারা আমাকে মাঠ থেকে বিদায় নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন বলে।’ রজনী আরও জানান, ফুটবল থেকে অবসর নিলেও কোচ বা অন্য ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে অগ্রণী ব্যাংকের হয়ে ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন রজনী। ঢাকা আবাহনীতে খেলেছেন দু’দফায় ১৯৯৪, ৯৫ ও ২০০৮ সালে। মোহামেডানে খেলেছেন ১৯৯৬ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত এবং ২০১৩ সালে। ব্রাদার্সে ২০০৪ সালে। মুক্তিযোদ্ধায় তিন দফায় ১৯৯৭ থেকে ২০০৩, ২০০৪ থেকে ২০০৭ এবং ২০০৯ সালে। সর্বশেষ শেখ রাসেলে যোগ দেন ২০১৪ সালে। ওই মৌসুমে ২-১টা ম্যাচ খেলে মাঝের দুই বছর কোন ম্যাচ খেলেননি। গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পিঙ্গাবহর গ্রামের সন্তান রজনীর আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক ১৯৯৭ সালে নেপালে সার্ক টুর্নামেন্ট দিয়ে। শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ২০০৯ সালের চ্যালেঞ্জ কাপ আসরে। তার মোট আন্তর্জাতিক ম্যাচসংখ্যা ৪৯। ১৯৯৯ সাউথ এশিয়ান গেমস এবং ২০০৩ সালের সাফ গেমস ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন। আক্ষেপের ব্যাপার হচ্ছেÑ ওই দুটি আসরে ফাইনালেই তিনি খেলতে পারেননি কার্ড সমস্যার কারণে। তবে ২০০৩ আসরে তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। ওই টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
×