ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বিজয়ের কবিতা-গানে জেগে উঠল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বিজয়ের কবিতা-গানে জেগে উঠল বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই সম্প্রীতির দেশটি যখন ধর্মান্ধতায় আক্রান্ত হয় তখন প্রতিবাদে জেগে ওঠে স্বদেশের কণ্ঠস্বরগুলো। প্রতিরোধের ডাকে উচ্চারিত হয়- তুমি আগ্নেয়গিরির মতো বেরিয়ে এসো/তোমার লাভার স্রোতে ভাসিয়ে দাও/সমস্ত বিষাক্ত লালা/ জেগে ওঠো, আবার জেগে ওঠো/সেই মিছিল ডাকছে তোমাকে ঊনসত্তরের, একাত্তরের/তুমি বিদ্যুতের মতো জ্বলে ওঠো, জ্বলে ওঠো ...। বিজয় দিবসের আগের দিন বৃহস্পতিবার এভাবেই বাচিকশিল্পীদের কণ্ঠে উচ্চারিত হলো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার প্রত্যয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসবের ষষ্ঠদিনের আয়োজনের ‘বাংলাদেশ জেগে ওঠো’ শীর্ষক আবৃত্তি পরিবেশনার অংশ ছিল কবিতার এই লাইনগুলো। আর এভাবেই জাগ্রত জনতার বিজয়ের গান কবিতায় জেগে উঠল বাংলাদেশ। এছাড়াও বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও গীত কিংবা উচ্চারিত হয়েছে স্বদেশের প্রেরণাদায়ী গান ও কবিতা। সব মিলিয়ে বিজয়ের দিনটিকে ঘিরে আগের দিনও রঙিন হয়ে উঠেছিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। শহীদ মিনারে চলছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ‘ঐক্য গড়ো বাংলাদেশ/সাম্প্রদায়িকতা হবে শেষ’ প্রতিপাদ্যে সপ্তাহব্যাপী বিজয় উৎসব। আর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনেও চলছে সপ্তাহব্যাপী ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শিরোনামে বিজয় উৎসব। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত বিজয় উৎসবের তৃতীয় দিনে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, আনন্দন, সুরধ্বনি ও দৃষ্টি। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফাহমিদা খাতুন, মোঃ খুরশিদ আলম, অলক দাশগুপ্ত, আশিকুর রহমান, মাহজাবিন রহমান শাওলী ও আসিফ ইকবাল সৌরভ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বরশ্রুতি ও মুক্তধারা সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন মীর মাশরুর জামান রনি, সেগুপ্তা সেজুতি ও রাবেয়া পান্না। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও দিব্য সাংস্কৃতিক সংগঠন। পথনাটক মঞ্চস্থ করে প্রাচ্যনাট। শিশু সংগঠনগুলোর পরিবেশনায় অংশ নেন মৈত্রী শিশু দল ও সপ্তসুর। ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর কবি রফিক আজাদ মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে পঞ্চভাস্বর ও উজান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন নাছিমা শাহীন ফ্যান্সী, সর্দার রহমতউল্লাহ, শুভ্রা দেবনাথ ও মিতা মোস্তফা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে স্বরকল্পন, প্রজন্মকণ্ঠ ও আবৃত্তি একাডেমি। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন শিরীন ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, মিজবাহিল মুকার রাবিন ও মাহাদি হাসান। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ। পথনাটক মঞ্চস্থ করে খেয়ালী নাট্যগোষ্ঠী। শিশু সংগঠনগুলোর মধ্যে পরিবেশনায় অংশ নেয় রঙ্গপীঠ শিশুদল ও ভিন্নধারা শিশু কিশোর মেলা। রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ মঞ্চে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে নন্দন ও স্বভূমি। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, নিলুফার বানু লিলি, রিফাত জামিল, মিতা দে, সুচিত্রা চক্রবর্তী ও বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তবাক। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন ইকবাল খোরশেদ। পথনাটক মঞ্চস্থ করে ইউনিভার্সেল থিয়েটার ও ঢাকা থিয়েটার মঞ্চ। শিশু সংগঠনগুলোর পরিবেশনায় অংশ নেয় খেলাঘরের ঢাকা মহানগর শাখা। দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ প্রাঙ্গণ মঞ্চে দলীয় পরিবেশনায় অংশ নেয় দনিয়া সবুজ কুঁড়ি কচি-কাঁচার মেলা ও মিথিলা মিউজিক সেন্টার। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে সঞ্জনন আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের দনিয়া কলেজ শাখা। পথনাটক মঞ্চস্থ করে ঢাকা মৈলিক নাট্যদল ও চন্দ্রকলা থিয়েটার। মিরপুরের তনু-তনয় মঞ্চে পথনাটক মঞ্চস্থ করে সাত্ত্বিক নাট্য সম্প্রদায়। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মিথক্রিয়া আবৃত্তি পরিসর। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন সাফিয়া খন্দকার রেখা, চৌধুরী নাজমুল পারভেজ ও মেহেদী হাসান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন কাজী মিজানুর রহমান ও স্নিগ্ধা রীতা। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে কালের উচ্চারণ, স্বপ্নবীণা ও টুম্পা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে উদীচীর পল্লবী শাখা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় শোভাযাত্রা। এছাড়াও বিকেল ৪টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মঞ্চ, রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ মঞ্চ, বর্ণমালা স্কুল এন্ড কলেজ দনিয়া মঞ্চ, মিরপুরের কবি শহীদ কাদরী মঞ্চ, রবীন্দ্র সরোবর কবি রফিক আজাদ মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। কিশোরগঞ্জে বিজয় উৎসব ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কিশোরগঞ্জের ৪০ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের উদ্যোগে বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্তিতে পাঁচ দিনব্যাপী বিজয় উৎসব উদ্বোধন হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় গুরুদয়াল সরকারী কলেজ সংলগ্ন নরসুন্দা মুক্তমঞ্চে জেলার বিপুলসংখ্যক সংস্কৃতিকর্র্মী ছাড়াও সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তারা মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে শহীদের স্মরণ করে। এর আগে বিকেলে একই স্থানে ৪৫টি বেলুন উড়িয়ে অতিথিবৃন্দ উৎসবের শুভ সূচনা করেন। সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী এনায়েত করিম অমি জানান, আগামী ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত উৎসবে প্রতিদিন বিকেলে মুক্তযুদ্ধভিত্তিক আলোচনাসভা, আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশিত হবে।
×