ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহবাগে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীমুক্ত রাখতে উদ্যোগী হোন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীমুক্ত রাখতে উদ্যোগী হোন

বিডিনিউজ ॥ বাংলাদেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদমুক্ত রাখতে সরকারী কর্মকর্তাদের উদ্যোগী ভূমিকা নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার শাহবাগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ৯৮ ও ৯৯তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘মানুষকে কিন্তু উজ্জীবিত করতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদবিরোধী ভূমিকা প্রত্যেককেই পালন করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন একটা উৎপাত শুরু হয়েছে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ। যে করেই হোক বাংলাদেশকে এই জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত রাখতেই হবে। তার জন্য আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি- সমগ্র জনগণকে সম্পৃক্ত করা, সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করা এবং তার একটা ভাল ফল আমরা পাচ্ছি। গত ১ জুলাই গুলশানের এক ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশীসহ ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গীরা। এর এক সপ্তাহের মাথায় শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের কাছে জঙ্গী হামলায় দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ তিনজন নিহত হন। এরপর জঙ্গীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের পাশাপাশি জঙ্গী-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানান পদক্ষেপ নেয়া হয়। তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নিজে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সব জেলায় মতবিনিময় করেন। শেখ হাসিনা বলেন, আজ ধর্মের নামে উন্মাদনা সৃষ্টি করে মানুষ হত্যা করে একদিকে যেমন ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হচ্ছে, হেয় করা হচ্ছে; অপরদিকে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। কাজেই এখান থেকে মানুষকে কিভাবে দূরে রাখা যায়...আমরা অভিভাবক, শিক্ষক, ইমাম সকলকে সম্পৃক্ত করেই আন্দোলন হিসেবে এটাকে গড়ে তুলছি। এ ব্যাপারে সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে এবং ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে বাংলাদেশে কখনও সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথাও তিনি সরকারী কর্মকর্তাদের সামনে তুলে ধরেন। নবীন সরকারী কর্মকর্তাদের গতানুগতিক ধ্যান-ধারণার বাইরে এসে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং উদ্ভাবনী চিন্তা করার আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। গতানুগতিক ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা কিভাবে এগোতে পারি- এ ধরনের উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা সকলের মাঝে থাকতে হবে। ইতোমধ্যে প্রশাসনে মাঠ ও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে উদ্ভাবনী (ইনোভেশন) টিম গড়ে তোলা হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। কর্মকর্তাদের সবসময় আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ যেন ভালভাবে বাঁচতে পারে, মানুষ যেন উন্নত জীবন পেতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই সকলকে কাজ করবার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনে পদোন্নতি এবং সরকারী চাকরি আরও আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে বেতন-ভাতা বাড়ানোর কথা বক্তৃতায় তুলে ধরেন। কর্মক্ষেত্রে মানুষের কল্যাণ ও উন্নতি কিভাবে করা যায়Ñ নবীন কর্মকর্তাদের সে বিষয়ে সব সময় নজর রাখার তাগিদ দেন। একটি দেশ গড়ে তুলতে হলে যারা মাঠে-ময়দানে কাজ করবেন তাদের প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখেই তার সরকার দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় পাকিস্তান আমলে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনে বঞ্চনার তথ্য এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ ও সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার ক্ষেত্রে তার ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসনের সময় জনগণের ‘অধিকারহীনতা, অনুন্নয়ন ও বঞ্চনার’ কথাও তিনি মনে করিয়ে দেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি ‘জনগণের সেবক’ হিসেবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় ‘অতিদ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেয়ায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাকা আবার সচল হতে শুরু করে। গত আট বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন এবং চলমান বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রাম। গ্রামের অর্থনীতিকে আমাদের আরও শক্তিশালী, আরও উন্নত করতে হবে। গ্রামের দারিদ্র্য বিমোচন করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী ও অবকাঠামো উন্নয়ন আমরা করে যাচ্ছি।’ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটাও আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। কাজেই নবীন যারা কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন, তাদের এটাই বলব যে, এসডিজি বাস্তবায়নের ওপর আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’ অন্যদের মধ্যে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
×