ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাসের শুল্কে অনিয়ম ॥ পেট্রোবাংলাকে অর্থ বিভাগের চিঠি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

গ্যাসের শুল্কে অনিয়ম ॥ পেট্রোবাংলাকে অর্থ বিভাগের চিঠি

রশিদ মামুন ॥ আন্তর্জাতিক গ্যাস কোম্পানির (আইওসি) উৎপাদিত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে আদায় করা শুল্কের কি পরিমাণ অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা দেয়া হয়নি তা জানতে চেয়েছে অর্থ বিভাগ। দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আর্থিক বিশৃঙ্খলার অভিযোগের মধ্যে অর্থ বিভাগ পেট্রোবাংলার কাছে এ বিষয়টি জানতে চাইল। নিয়ম অনুযায়ী আইওসির উত্তোলিত গ্যাসের ক্রেতা পেট্রোবাংলা। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যে পেট্রোবাংলা গ্যাস কিনে আবার বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। বিতরণ কোম্পানি গ্রাহকের কাছে এই গ্যাস বিক্রি করে। বিতরণ কোম্পানি গ্রাহকের বিলের সঙ্গে শুল্ক ও ভ্যাট আদায় করে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী এই শুল্ক জাতীয় রাজস্ববোর্ডে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু পেট্রোবাংলা তা না করে বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে নিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে সরকারের এই আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে আসছিল পেট্রোবাংলা। গত ৬ ডিসেম্বর অর্থ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব উর্মি তামান্নার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, পেট্রোবাংলা এবং তার অধীন বিতরণ কোম্পানি আইওসি উৎপাদিত গ্যাস বিতরণের বিপরীতে শুরু থেকে কি পরিমাণ মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ আদায় করে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়নি তার বছর প্রতি হিসেব অর্থ বিভাগে জমা দিতে হবে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বুধবার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আইওসির কাছ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনে কম দামে বিক্রি করি এতে আর্থিক সঙ্কট থাকে। এতে আমরা রাজস্ববোর্ডের শুল্ক পরিশোধ করতে পারিনি। তিনি জানান, এ ধরনের পুরনো দেনা রয়েছে নয় হাজার কোটি টাকা। এরপর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমরা কিছু অর্থ দিয়েছিলাম পরবর্তীতে আবার আর্থিক সঙ্কটে পড়ে পেট্রোবাংলা। এতে করে আবারও কর প্রদান বন্ধ হয়ে যায়। তিনি জানান, এর মধ্যে আমরা আইওসির কিছু জরিমানা পরিশোধ করেছি যে কারণে অর্থিক সঙ্কট ছিল। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এনবিআর চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে জানান, ২০০৯ সালে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোসহ সব গ্যাস কোম্পানি গ্রাহকের কাছ থেকে ভ্যাট সম্পূরক শুল্ক আদায় করে সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে পেট্রোবাংলার কাছে রাখার তথ্য উদ্ঘাটন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে পেট্রোবাংলার আওতাধীন দেশী-বিদেশী গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে গ্যাস বিক্রি বাবদ ভ্যাট আদায় করলেও তা রাজস্ব বোর্ডকে পরিশোধ করেনি। পেট্রোবাংলা তাদের নিজস্ব হিসাবেই ওই টাকা রেখে দেয়। এ জন্য রাজস্ব বোর্ড গ্যাস বিতরণ কোম্পানির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলা করে। গ্যাস কোম্পানিগুলোর আর্থিক বিশৃঙ্খলায় এর আগে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীকে চিঠি লেখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানির চলমান আর্থিক অব্যবস্থাপনা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। কোম্পানিসমূহের এ আচরণ চরম আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী। চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের কাছে সরকারী পাওনা অনতিবিলম্বে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার জন্য উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। প্রসঙ্গত প্রত্যেকটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি মুনাফা করছে। মুনাফা করার পরেও বছর বছর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়। এখন গ্যাসের দর বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) রয়েছে। কমিশন ওই প্রস্তাবগুলোর উপর শুনানিসহ আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করেছে। যে কোন সময় গ্যাসের বর্ধিত দর ঘোষণা করা হতে পারে। এদিকে পেট্রোবাংলাকে শুল্ক পরিশোধের জন্য এক হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে আইওসির উৎপাদিত গ্যাসের বিপরীতে এই টাকা দিয়ে শুল্ক পরিশোধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। চার ভাগ সুদে গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৫ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তিন বছর গ্রেস পিরিয়ড শেষে ১২ বছরে ষান্মাসিক ভিত্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এই ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
×