ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাগর কোড়াইয়া

বাংলার মাটি বাংলার জল

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

বাংলার মাটি বাংলার জল

আমরা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে জন্মেছি তারা যুদ্ধ দেখিনি কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা দেখেছি। একসাগর রক্তের স্রোতধারা প্রত্যক্ষ করিনি তবে সেই স্রোতধারা নিজেদের মধ্যেও যে বয়ে যায় তা অনুভব করি। রক্তলাল জমিন দেখিনি কিন্তু বাংলার মানচিত্র পেয়েছি। একাত্তর দেখিনি কিন্তু পতাকা পেয়েছি। শোষক গোষ্ঠীর শোষণ দেখিনি তবে স্বাধীনতার বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাস দেখেছি। লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়েছি কিন্তু পেয়েছি মা বলে ডাকার অধিকার। যুদ্ধের বিজয় যেন আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বাসা বেঁধেছে। নয় মাস বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল আমাদের দেশের বিজয়। বহু স্বপ্নের স্বাধীনতা। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গৌরব করি কারণ, আমাদের বীর বাঙালী মুক্তিযোদ্ধারাই দিয়ে গিয়েছে স্বাধীন দেশের সন্তান বলে পরিচয় দেবার অধিকার। একাত্তরের ষোলোই ডিসেম্বর আমাদের অহংকার। আমাদের জাতির ইতিহাসের সুবর্ণ দিবস। বিজয়ের যে গৌরবগাথা অধ্যায় আমরা প্রতিনিয়ত মনের গোপন কোঠরে লালন করছি তার চূড়ান্ত ক্ষণ এই ষোলোই ডিসেম্বর। বাংলার বিজয় রচিত হতে সময় লেগেছে যুগের পর যুগ। বিজয় এমনিতেই আসেনি। বিজয়ের জন্য কত শত জন হারিয়েছে তাদের আপনজন। সন্তানহারা মা, পিতা-মাতাহারা সন্তান, স্বামীহারা স্ত্রীর গগণ বিদারী চিৎকার ধ্বনি কান পাতলে আজও শোনা যায় বাংলার প্রকৃতিতে। সেই সব দিনগুলোর ভয়াবহতা আজও মানুষকে কাঁদায়; করে তুলে স্মৃতিকাতর। নির্মম অত্যাচারের কৃপাণ নেমে এসেছিল বাংলার ঘরে ঘরে। বাঙালী বীরের জাতি হিসেবে সে অবস্থাকে মেনে নেয়নি বরং রুখে দাঁড়িয়েছে। ষোলোই ডিসেম্বরের বিজয়গাথা আমাদের এই মাতৃভূমিকে ভালবাসার অনুপ্রেরণা যোগায়। দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করি বিজয়ের কল্যাণে। যুদ্ধের বিজয়গাথা স্মরণ আমাদের নয় মাস যুদ্ধের সময়ে অত্যাচারিত ও শোষিত জনগণের কাতারে নিয়ে যায়। আমরা যখন দেশের তথা মুক্তিকামী জনগণের মুক্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের রণক্ষেত্রে যে বলিষ্ঠ ও সাহসী প্রাণত্যাগের ইতিহাস শুনি তখন মনে মনে ভাবি যদি আমিও যুদ্ধ করতে পারতাম। আমাদের কৈশোরকালটা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা শুনে কাটিয়েছি। আমাদের এলাকার অনন্ত মাঝির প্রাণ বিসর্জন; বড়াল নদের বুকে তাঁর রক্তের স্রোতধারার ইতিহাস এখনও আবেগতাড়িত করে। আমাদের কৈশোর সময়টাতে যুদ্ধের বিষয়ে চিন্তা-চেতনা ছিল একস্তরের আর সময়ের বিবর্তনে এখন মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, ৭ মার্চের ভাষণ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, শহীদের রক্ত, ধর্ষিত মা-বোনের সম্ভ্রম, সন্তানহারা মায়ের চোখের জল, বিজয়, মাতৃভূমি, লাল-সবুজের পতাকা, মানচিত্র সবই যেন একই পথে এসে চিন্তার কুটিরে জমা হয়েছে। এ সবই যেন জীবনের আনন্দলোকে অনুপ্রেরণার অগ্রপথিক হয়ে দেখা দেয়। বিজয়ের গৌরবগাথা আমাদের বাংলাদেশকে ভালবেসে বাংলার বুকেই মৃত্যুকামনাকে আরও বেশি অনুপ্রাণিত করে। ঢাকা থেকে
×