ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ, পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক ;###;সক্রিয় দেশী-বিদেশী চক্র- কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না প্রবাস থেকে অবৈধ পথে আসা অর্থের প্রবাহ

মোবাইল ব্যাংকিং অপব্যবহারে আসছে রেমিটেন্স ॥ হুন্ডি ব্যবসা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

মোবাইল ব্যাংকিং অপব্যবহারে আসছে রেমিটেন্স ॥ হুন্ডি ব্যবসা বাড়ছে

রহিম শেখ ॥ মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার শেখরনগর ইউনিয়নের রমজান আলী (ছদ্মনাম)। সৌদি আরবে থাকেন প্রায় দশ বছর। সেখানকার একটি কারখানায় কাজ করেন। পরিবারের খরচ মেটাতে প্রায় প্রতি মাসে দেশে অর্থ পাঠান। প্রথম দিকে দেশে অর্থ পাঠাতেন সিরাজদিখান উপজেলার ব্যাংক এশিয়া শাখার মাধ্যমে। তবে এখন আর ব্যাংকে টাকা না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠান। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অপব্যবহারের মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি। রমজান আলীর মতো এখন অনেকেই হুন্ডি চক্রের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। ফলে দেশে বৈধ পথে প্রতি মাসেই রেমিটেন্স আসার পরিমাণ কমছে। গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পরিমাণের রেমিটেন্স এসেছে সদ্য সমাপ্ত নবেম্বর মাসে। রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ ব্যাংক। চিঠি চালাচালি চলছে এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে। অবশ্য রেমিটেন্স হ্রাসের কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ, পররাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে রেমিটেন্স প্রবাহ আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করছে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। হুন্ডির দেশী-বিদেশী চক্র ভাঙতেও কাজ করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) ৫২১ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৬১৮ কোটি ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের পাঁচ মাসেই প্রবাসী আয় কমেছে ৯৭ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে গত নবেম্বরে রেমিটেন্স এসেছে মাত্র ৯৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার। গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিটেন্স এসেছে নবেম্বরে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ মাসে যে ৯৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স কমেছে এর মধ্যে ৯২ কোটি ডলারই শীর্ষ পাঁচ দেশ থেকে কমেছে। আর এককভাবে বেশি কমেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। রেমিটেন্স প্রেরণে তৃতীয় অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত পাঁচ মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স এসেছে ৬৮ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে দেশটির প্রবাসীরা পাঠিয়েছিল ১০৫ কোটি ডলার। এ হিসেবে পাঁচ মাসে দেশটি থেকে ৩৭ কোটি ডলার বা ৩৫ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছে। গত পাঁচ মাসে রেমিটেন্স আহরণের শীর্ষ দেশ সৌদি আরব থেকে এসেছে ৯৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে দেশটি থেকে রেমিটেন্স এসেছিল ১২৫ কোটি ডলার। পাঁচ মাসে সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্স কমেছে ২৯ কোটি ডলার, যা ২২.৮৫ শতাংশ। রেমিটেন্স আহরণে দ্বিতীয় শীর্ষ দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৮৭ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ১১০ কোটি ডলার। একই সময়ের তুলনায় রেমিটেন্স কমেছে ২৩ কোটি ডলার, যা ২১ শতাংশ। রেমিটেন্স আয়ের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরে থাকা চতুর্থ দেশ মালয়েশিয়া থেকে গত পাঁচ মাসে ৫১ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৫৪ কোটি ডলার। আর পঞ্চম অবস্থানে থাকা কুয়েত থেকে এসেছে ৪২ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৪১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে এই পাঁচ দেশ থেকে এসেছে ৩৪৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৯১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার বা ২১ শতাংশ কম। আগের অর্থবছরের এই সময়ে এসব দেশ থেকে ৪৩৭ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স কমলেও বাড়ছে জনশক্তি রফতানি। ব্যুরো অব ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট এ্যান্ড ট্রেনিংয়ের (বিএমইটি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছরের নবেম্বর পর্যন্ত ছয় লাখ ৮৮ হাজার জনশক্তি রফতানি হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার জনশক্তি রফতানি হয়। ২০১৪ সালে রফতানি হয় চার লাখ ২৫ হাজার এবং ২০১৩ সালে হয় চার লাখ ৯ হাজার। সেই হিসাবে ২০১৩ সালের পর আবার জনশক্তি রফতানি বাড়লেও রেমিটেন্সে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। বরং গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় রেমিটেন্স কমেছে ২.৫৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে এ পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, রেমিটেন্স হ্রাসের পিছনে প্রধানত তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দীর্ঘ অস্থিরতা ও তেলের দর পড়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। এতে তারা দেশে কম অর্থ পাঠাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে হয়তো তারা কিছুটা সময়ও নিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য কম থাকায় প্রবাসীরা আগের মতো অর্থ পাঠাচ্ছেন না। তাছাড়া ব্যাংকের তুলনায় খোলা বাজারে ডলারের মূল্য বেশি থাকায় ভিন্ন উপায়ে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ঢুকছে। তৃতীয়ত, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা ব্যবহারে হুন্ডিওয়ালারা অবৈধ উপায়ে টাকা দ্রুত প্রবাসীর আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। যেহেতু প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ কাগজবিহীন ও যে কোন সময় করা যায়, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সতর্ক মনিটরিংয়ের পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ডলারের বিপরীতে অনেক দেশের মুদ্রা বিনিময় হার কমে যাওয়ার কারণে আগের মতো অর্থ পাঠাতে আগ্রহ পাচ্ছে না প্রবাসীরা। তাছাড়া বিশ্ববাজারে তেলের দর পড়ে যাওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রচ্যোর অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সুবিধাজনক অবস্থানে না থাকায় সেখানকার শ্রমিকদের কাজের সুযোগ ও আয় কমে গেছে। এর বাইরে হুন্ডি কারবারিরা কৌশলে দেশের জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে অবৈধ উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে তা দেশে পাঠাচ্ছে। বিশেষ করে ছোট আকারের রেমিটেন্স এ উপায়ে আহরণ করে এখানকার এজেন্টের যোগসাজশে তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সুবিধাভোগীর কাছে। এসব কারণেও ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স কমছে। এছাড়া এর বাইরে বিভিন্ন দেশে প্রচুর শ্রমিক রয়েছে, যাদের কোন বৈধতা নেই। এখন সারাবিশ্বে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আইনের প্রয়োগে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে অবৈধ বাংলাদেশীরা যেমন ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছেন না, তেমনি ব্যাংকিং চ্যানেলে কোন রেমিটেন্সও পাঠাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে তারা হুন্ডিতে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। রেমিটেন্স হ্রাসের কারণ অনুসন্ধান ও প্রতিকারে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ, পররাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে রেমিটেন্স প্রবাহ আগের ধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ শুরু করেছে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলো। হুন্ডির দেশী-বিদেশী চক্র ভাঙতেও কাজ করছে সরকারের একাধিক সংস্থা। এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি কয়েক দফায় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেও কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। এমনকি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বিকাশের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। হুন্ডিওয়ালারা যাতে কোনভাবেই বিকাশ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না পাঠায় সে ব্যাপারে কড়া বার্তাও দেয়া হয়েছে। তবুও কোন কিছুই কাজে আসছে না। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র অঙ্কের রেমিটেন্স এখন আর ব্যাংকিং চ্যানেলে আসছে না। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ বা অন্য কোন মাধ্যমে অবৈধ পথে অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে। তারা ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার অথবা হুন্ডির মতো অনলাইনে অর্থ প্রেরণের বার্তা পাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের কাছ থেকে সংগৃহীত বৈদেশিক মুদ্রা কোনভাবেই ব্যাংক ব্যবস্থায় প্রবেশ করছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, জনশক্তি রফতানি বাড়লেও রেমিটেন্স কমছে। এটা খুব উদ্বেগজনক। তবে ধারাবাহিক রেমিটেন্স হ্রাসের পেছনে ‘হুন্ডি’ অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন। এজন্য ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে কোন উপায়ে দেশে অর্থ আসছে কিনা তাও খুঁজে দেখার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা গেছে, হুন্ডি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিবিএসের তথ্য মতে, গত তিন বছরে হুন্ডি বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৩ সালে প্রবাসী আয়ের মাত্র ১০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ হুন্ডির মাধ্যমে আসত। এখন আসছে ২২ শতাংশ। দ্বৈচয়ন ভিত্তিতে ১০ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে উদ্বেগজনক এ তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসে ৫০ দশমিক ৭২ শতাংশ। আর হুন্ডির মাধমে আসে ১২ দশমিক ৩১ শতাংশ। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে আসে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দশমিক ২১ শতাংশ, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ, স্বল্প পরিচিত লোকদের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং অন্যান্য উপায়ে আসে শূন্য দশমিক ৬৮ শতাংশ। হুন্ডিতে অর্থ আসা দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, ওমান, গ্রীস ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, হুন্ডি বাড়ার পাশাপাশি বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করেন এমন দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরবসহ অনেক দেশের মুদ্রামান মার্কিন ডলারের বিপরীতে কমেছে। এসব দেশ থেকে শ্রমিকরা আগের মতো অর্থ পাঠালেও ডলারে রূপান্তর করলে তা কমে যাচ্ছে। এছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ওঠা-নামার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে অনেকে অবৈধ উপায়ে দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে পাঠানো ওই অর্থ অপ্রদর্শিত থাকায় এমন হয়ে থাকতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, হুন্ডি হ্রাসে গত কয়েক বছরে যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশে রোড শো করা হয়েছে। এসব দেশে গিয়ে সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচী পালন করা হয়। প্রবাসীদের উৎসাহ দিতে কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচী পালন করা হয়েছে। এরপরও হুন্ডি বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা এ বিষয়ে বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুতই রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে। জানা গেছে, প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানোয় উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে হুন্ডিতে রেমিটেন্স পাঠানোয় বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে যেসব প্রবাসী ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে পারছে না, তাদের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসগুলোয় এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। এরপর থেকে প্রবাসীদের সচেতন করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস। একই সঙ্গে যেসব প্রবাসী ব্যাংক হিসাব খুলতে পারছে না তাদের সহায়তা করা হচ্ছে।
×