ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি

নাটোর থেকে অপহৃত ৩ যুবলীগ কর্মীর লাশ দিনাজপুরে উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৬

নাটোর থেকে অপহৃত ৩ যুবলীগ কর্মীর লাশ দিনাজপুরে উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ও নাটোর সংবাদদাতা ॥ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ রঘুনাথপুর কলাবাড়ী এলাকায় সোমবার সকালে তিন যুবকের মরদেহ পাওয়া গেছে। পুলিশের ধারণা, নিহত তিনজনই যুবলীগকর্মী। পুলিশ জানিয়েছে, তিন যুবকের মাথা ও কপালে গুলির চিহ্ন রয়েছে। দুর্র্বৃত্তরা তাদের অপহরণের পর হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, উপজেলার কলাবাড়ী এলাকার একটি আমবাগানে তিন যুবকের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়। এদিকে অপহরণের পর নাটোর পৌর যুবলীগের তিন কর্মীর লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায় উদ্ধারের পর হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে নাটোরে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা, থানা ও পৌর যুবলীগ। সোমবার দুপুরে নাটোর প্রেসক্লাবে সদর পৌর যুবলীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন পৌর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক হাসিবুল হাসান বুলেট। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব, সদর থানা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ডাবলু ও পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট সাঈম হোসেন উজ্জ্বল। নিহতদের কাছ থেকে পুলিশ কয়েকটি বিদেশী মদের বোতল, কিছু কাপড় ও চারটি মোবাইল ফোন পেয়েছে। এর মধ্যে একটি মোবাইল ফোনে পাসওয়ার্ড দেয়া না থাকায় সেখান থেকে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হয়। নিহতরা হলেনÑ নাটর সদর উপজেলা শহরের কানাইখালী এলাকার সোনামিয়ার ছেলে রেদোয়ান আহমেদ সাব্বির (২৫), একই এলাকার লুৎফর রহমান লপুর ছেলে আব্দুল্লাহ (২৫) ও রথবাড়ী এলাকার কালু মিয়ার ছেলে সোহেল রানা (২৬)। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে খুন, রাহাজানি ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে সাব্বিরের বিরুদ্ধে ১২টি, সোহেলের বিরুদ্ধে তিনটি ও আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। ঘোড়াঘাট থানার ওসি (তদন্ত) এমএ আনোয়ার হোসেন জানান, সকাল সোয়া ৮টার সময় লাশ পড়ে থাকার সংবাদ পাওয়ার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তিন যুবকের শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তিনি জানান, দুষ্কৃতকারীরা অন্য কোন স্থানে এদের হত্যা করে রাতের কোন এক সময় এই নিরিবিলি স্থানে লাশগুলো ফেলে রেখে গেছে বলে অনুমান। নিহত তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোখসানা বেগমের উপস্থিতিতে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করা হয়। এ ঘটনায় ঘোড়াঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। দুপুর ১টায় নিহত তিনজনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নিহত আব্দুল্লাহর পিতা লুৎফর রহমান ও তার সহযোগীরা দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে নিহত তিনজনের লাশ শনাক্ত করেন। জানা গেছে, গত ৩ ডিসেম্বর তিনজনই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। ওই দিন রাতে নাটোর সদরের তকেয়াবাজার থেকে র‌্যাব পরিচয়ে ওই তিন যুবককে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রেদোয়ান সাব্বিরের মা ৪ ডিসেম্বর রবিবার রাতে নাটোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। সোমবার মোবাইলে খবর পেয়ে নিহতদের স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, ওই তিন যুবককে একটি কালো মাইক্রোবাসযোগে কে বা কারা ৩ ডিসেম্বর রাতে নাটোরের তয়েকাবাজার এলাকা থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরের দিন এ ঘটনায় নাটোর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে ঘোড়াঘাট এলাকায় তাদের লাশ পাওয়া যায়। তিনি জানান, পুলিশের ধারণা, কোন শত্রুতার জের ধরে তাদের হত্যা করা হয়েছে। তারা যুবলীগের কর্মী বলে তারা শুনেছেন, তবে তাদের সম্পর্কে পুরোপুরি তথ্য নেয়া হয়নি। কেন তাদের হত্যা করা হয়েছে তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত জানা যাবে। নাটোরের সংবাদ সম্মেলনে হাসিবুল হাসান বুলেট লিখিত Ÿক্তব্যে জানান, নাটোর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রেদোয়ান সাব্বির গত ৩ ডিসেম্বর রাত প্রায় ৮টার দিকে তার দুই বন্ধু আব্দুল্লাহ ও সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে তার ব্যবসায়িক কাজে সদর উপজেলার তকিয়াবাজার এলাকায় যান। সেখানে জনৈক মান্নান মিয়ার চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন ওই তিন বন্ধু। পরে রাত আনুমানিক ১১টার দিকে তাদের সামনে একটি সাদা ও একটি কালো হাইএস মাইক্রোবাস এসে দাঁড়ানোর পরেই প্রায় ১৫-১৬ জন দুষ্কৃতকারী মাইক্রোবাস থেকে নেমেই সাব্বির ও তার দুই বন্ধুকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে গাড়িতে তুলে নিয়ে রাজশাহী অভিমুখে রওনা দেয়। সংবাদ সম্মেলনে জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ও প্রত্যক্ষদর্শীর মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হওয়ার পরেই নাটোর-রাজশাহীর প্রতিটি থানা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবসহ সম্ভাব্য সবখানে খোঁজ নিয়েও তাদের কান সন্ধান পাওয়া যায়নি।
×