ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১১ প্রজাতির কাঁকড়া রফতানির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

১১ প্রজাতির কাঁকড়া রফতানির উদ্যোগ

এম শাহজাহান ॥ এগারো প্রজাতির সামুদ্রিক সাতারু কাঁকড়া রফতানির পথ উন্মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতদিন প্রাকৃতিক উৎস থেকে কাঁকড়া আহরণ করা হলেও এবার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। রফতানি সহজীকরণ, হিমায়িত পদ্ধতিতে রফতানির অনুমতি, নগদ সহায়তা প্রদান, বন বিভাগের অনাপত্তিপত্র দ্রুত ছাড়করণসহ আরও কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশী চিংড়ির চাহিদা কমলেও বেড়েছে কাঁকড়ার চাহিদা। অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে বিশ্বের ২০টি দেশে বর্তমান কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে। বিশ্ব বাজার সুদৃড় করতে কাঁকড়ার রফতানির ওপর থেকে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে রফতানি প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। সূত্র মতে, গত কয়েক বছরে বৈদেশিক বাণিজ্যে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে কাঁকড়া। রফতানি পণ্যের তালিকায় ধীরে ধীরে কাঁকড়ার অবস্থান ও ব্যাপ্তি দুটোই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কাঁকড়া রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬২ শতাংশ। চীনে বাংলাদেশের কাঁকড়া অত্যন্ত সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় খাবার হিসাবে বেশ পরিচিত। চীন ছাড়াও থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, হংকং, তাইওয়ান, আরব আমিরাতসহ পৃথিবীর অন্তত্ব ২০টি দেশে সামুদ্রিক সাতারু কাঁকড়ার চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় পাঁচ হাজার টন কাঁকড়া বিদেশে রফতানি হচ্ছে যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৩ কোটি ডলার বা ২৫০ কোটি টাকা। তবে রফতানি প্রক্রিয়া জটিল এবং সহযোগিতার অভাবে সম্ভাবনাময় এ শিল্প খাতের সম্প্রসারণ হতে পারছে না। কিন্তু এ শিল্প খাত থেকে বছরে অন্তত ১ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই উদ্যোক্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সামুদ্রিক কাঁকড়া রফতানি সহজীকরণসহ বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে সাতারু কাঁকড়া রফতানির বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে কাঁকড়া রফতানি সহজীকরণ এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারী সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, অপ্রচলিত পণ্য হিসেবে কাঁকড়া বিশ্ব বাজারে জনপ্রিয় হলেও রফতানিতে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। নীতিমালায় এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি। তাই আন্তর্জাতিক মার্কেটে চাহিদা থাকলেও কাঁকড়া রফতানি সেভাবে বাড়ছে না। তিনি বলেন, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়ার আন্তর্জাতিক বাজার বড় হতে পারে। এজন্য সরকারী-বেসরকারী সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। জানা গেছে, রফতানিকৃত মৎস্য সম্পদের মধ্যে কাঁকড়ার অবস্থান দ্বিতীয়। তবে প্রতিবছর বাংলাদেশের সামুদ্রিক কাঁকড়া রফতানি বাড়ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের কাঁকড়া সুস্বাদু ও আকারে বড় হওয়ার কারণে চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিবছর। দেশেও মাছের মতো খাদ্য হিসেবে কোন কোন অঞ্চলে কাঁকড়ার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে দুই কোটি ২৯ লাখ ডলারের কাঁকড়া রফতানি করা হয়েছে। গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রায় দুই কোটি ৫০ লাখ ডলারের কাঁকড়া রফতানি করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে কাঁকড়া আহরণের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় সরকার কাঁকড়া চাষের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করছে। কাঁকড়া চাষে সম্পৃক্ত হয়ে বেকার তরুণ যুবক আয়ের পথ খুঁজে পাচ্ছেন। এতে বেকারত্ব কমছে। বাংলাদেশ ছাড়াও থাইল্যান্ড এবং মিয়ানমারে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বর্তমানে কাঁকড়ার চাষ করা হচ্ছে। জানা গেছে, স্বল্প পুঁজি আর অল্পদিন বিনিয়োগ করে অধিক লাভজনক হওয়ায় সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে কাঁকড়ার ফ্যাটেনিং বা মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। কাঁকড়া চাষের চেয়ে ফ্যাটেনিং পদ্ধতি সহজ ও লাভজনক হওয়ায় এ পদ্ধতিতে ঝুঁকছে উপকূলীয় অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। মাছ চাষের অনুপযোগী এক হেক্টর জায়গায় কাঁকড়ার ফ্যাটেনিং করে ৩ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন সম্ভব বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। মৎস্য সম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ জাতের কাঁকড়া পাওয়া যাচ্ছে। যার মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ১১টি প্রজাতির কাঁকড়া পাওয়া যায়। বাকি ৪টি প্রজাতি মিঠা পানির। এছাড়া দেশের উপকূলীয় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, পটুয়াখালী, বরিশাল, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচুর পরিমাণে কাঁকাড়া পাওয়া যায়। রফতানিকৃত কাঁকড়ার মধ্যে ৮০-৮৫ শতাংশ কাঁকড়া প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণ করা হয়। তবে সম্প্রতি এ খাতটির সম্ভাবনা তুলে ধরে তা চাষ এবং রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার একটি আবেদন বন ও পরিবেশ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কাস্টমস বিভাগে দেয়া হয়েছে। এতে কাঁকড়া রফতানির সোনালি ভবিষ্যতের বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে এসব জটিলতা ও সীমাবদ্ধতার কথাও সামনে আনা হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ লাইভ এ্যান্ড চিল্ড ফুড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোঃ শিহাব উদ্দিন বলেন, বিদ্যমান রফতানি নীতিমালা খাতটির সোনালি ভবিষ্যতে একটি বড় অন্তরায়। দেশে ভার্জিন প্রজাতির (না পুরুষ, না স্ত্রী) কাঁকড়া ১০০-১২০ গ্রামের ওপর হয় না। কিন্তু এ ব্যাপারেও রফতানি নীতিমালায় সুনির্দিষ্ট কোন ব্যাখ্যা নেই। ভারত ও মিয়ানমারে কাঁকড়া রফতানির কোন নীতিমালা নেই। এ কারণে সেসব দেশে প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া পাচার হচ্ছে। জানা গেছে, সাতক্ষীরা, পাইকগাছা, খুলনা ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকায় কিছু সফট শেল ক্রাব ফার্ম গড়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সফট শেল ক্রাব ফার্মের চাহিদা সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ গ্রাম পর্যন্ত। দেশীয় ক্রাব ফার্মগুলো সে অনুযায়ী ৫০-২০০ গ্রাম ওজনের নিচের কাঁকড়া হিমায়িত করে মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করছে। নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের কাঁকড়া রফতানি অবৈধ। অথচ নীতিমালা মেনে যারা জীবিত কাঁকড়া রফতানি করছেন তারা প্রায়ই বিমানবন্দরে বিভিন্ন সরকারী সংস্থার হাতে অপদস্থ হচ্ছেন।
×