ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ শরীয়তপুরের পলাতক ইদ্রিস সরদারের বিরুদ্ধে মামলার রায় আজ

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৬

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ শরীয়তপুরের পলাতক ইদ্রিস সরদারের বিরুদ্ধে  মামলার রায় আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শরীয়তপুরের পলাতক ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ সোমবার দিন ঠিক করেছেন ট্রাইব্যুনাল। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এটি হবে এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ২৭তম রায়। এর আগে আরও ২৫টি রায় প্রদান করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল ২৬টি মামলায় ৫২ জনকে বিভিন্ন দ- প্রদান করেছে। এর মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যুদ-, একজনের যাবজ্জীবন, একজনের ৯০ বছরের কারাদ- এবং ২৫ জনকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে পলাতক আছে ২১ জন। এর আগে গত ২ নবেম্বর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। ওই দিন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। রেজিয়া সুলতানা চম ন জানান, যুক্তিতর্কে তারা আসামি ইদ্রিস আলীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন। এ মামলায় আটক আরেক আসামি মোঃ সোলায়মান মোল্লা (৮৪) সম্প্রতি ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে শরীয়তপুরের মোঃ সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলী সরদারের (৬৭) বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ২৯ অক্টোবর হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ চার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। আসামিরা শরীয়তপুর জেলার পালং থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর মুসলিম পাড়ার অধিবাসী। সোলায়মান মোল্লা ১৯৬৩ সালের পর মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে শরীয়তপুর জেলার পালং থানার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আর গাজী ইদ্রিস আলীও একই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্রসংঘের’ নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিস ইসলামী ছাত্রসংঘের সক্রিয়কর্মী ছিলেন। গত বছরের ১৫ জুন সোলায়মান মোল্লা আটক হন। ইদ্রিস আলী এখনও পলাতক রয়েছেন। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে চলতি বছর মে মাসে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য শুনেছেন আদালত। প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২২ মে আসামিরা দখলদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে দেড়শ’ জন সদস্যসহ শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আব্দুস সামাদসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০০ লোককে গুলি করে হত্যা ও বাড়ির মালামাল লুট করেন। দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ মে পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলি করে হত্যা ও গ্রামগুলো থেকে মালামাল লুট ও আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করেন আসামিরা। মালোপাড়া থেকে ৩০/৪৫ জন নারী ও পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন আটকে রেখে নারীদের ধর্ষণ করে ছেড়ে দেন। কিন্তু পুরুষদের গুলি করে হত্যা করেন। তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৬ জুন একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুইজনকে হত্যা করে ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের নির্যাতন করে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেন আসামিরা। চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করেন। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশত্যাগ করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য করেন।
×